ঢাকা, শুক্রবার, ৭ ভাদ্র ১৪৩২, ২২ আগস্ট ২০২৫, ২৭ সফর ১৪৪৭

জাতীয়

টেন্ডার ছাড়াই রামেবির গাছ কেটে সাবাড়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২:৩৫, আগস্ট ২২, ২০২৫
টেন্ডার ছাড়াই রামেবির গাছ কেটে সাবাড়

রাজশাহী মহানগরের উপকণ্ঠে সিলিন্দায় প্রায় ৭০ একর জমি অধিগ্রহণ করে গড়ে তোলা হচ্ছে রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (রামেবি) ক্যাম্পাস। আর এই ক্যাম্পাস গড়তে গিয়ে হাজারের বেশি গাছ কেটে সাবাড় করা হয়েছে কোনো দরপত্র আহ্বান ছাড়াই।

 

এমনকি বিশাল সংখ্যক গাছ কাটার জন্য অনুমতিও নেওয়া হয়নি বন বিভাগ থেকে। লুট হয়ে গেছে আগে থেকেই থাকা অসংখ্য তাজা গাছ। এ গাছ লুটের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তাসহ সিন্ডিকেট সদস্যের বিরুদ্ধে। একই চক্র আমের মৌসুমে প্রায় ৪০ লাখ টাকার আম বিক্রি করেছে ক্যাম্পাসের বাগান থেকে। সেই টাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফান্ডে জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করা হয়েছে। তবে পেছনের তারিখ দিয়ে লিজ দেখিয়ে ওই আমের কিছু টাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফান্ডে জমা দেওয়ার চেষ্টা চলছে এখন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাবমতে, নির্মাণাধীন ক্যাম্পাস চত্বরে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার গাছের মধ্যে আম গাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রয়েছে। এর মধ্যে আমগাছই বেশি। সেগুলো কেটে বিক্রির জন্য ইতোমধ্যে নাম্বারিং করা হলেও এখনও কোনো দরপত্র হয়নি কিংবা কার্যাদেশও দেওয়া হয়নি।

সূত্র মতে, নির্মাণাধীন এ ক্যাম্পাসে বালু ভরাটের কাজ করছে ঢাকার মিরপুরের প্রতিষ্ঠান হোসাইন কন্সট্রাকশন প্রাইভেট লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির রাজশাহীর ব্যবস্থাপক দেলোয়ার হোসেন অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, তাদের কাজ কেবল বালু ভরাট পর্যন্ত সীমিত, গাছ কাটার সঙ্গে কোনো সম্পৃক্ততা নেই।

ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা গেছে, গোড়া থেকে কেটে নেওয়া হয়েছে অসংখ্য গাছ। কাটা জায়গাগুলো মাটি দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে, কোথাও আবার খুঁড়ে ফেলা গাছের জায়গায় জমে আছে বৃষ্টির পানি। ক্যাম্পাসের পূর্ব পাশে সীমানাপ্রাচীর ও ড্রেন নির্মাণের কাজ করতে গিয়ে কয়েকশ গাছ আগেই কাটা হয়েছে। পূর্ব পাশের এক স্থানে শ্রমিকদের থাকার শেডের কাছে গোড়া থেকে কাটা দুটি আমগাছ ফেলে রাখা আছে। শ্রমিকরা জানান, কারা গাছ কেটেছে, তা তাদের জানা নেই।

দক্ষিণ ও পশ্চিম দিকে আরও ভয়াবহ চিত্র দেখা গেছে। সেখানে গাছ কেটে ফাঁকা করে রাখা জায়গায় হয়েছে শাকসবজির চাষ। অন্তত অর্ধশতাধিক গাছ কেটে রাখা হয়েছে ওই বাগানে। সব গাছেই রং দিয়ে নম্বর লেখা আছে।

স্থানীয় আবদুল মমিন জানান, ১০ হাজার টাকা বেতনে তাকে ক্যাম্পাস দেখাশোনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে গাছ কারা কাটছে, সে বিষয়ে তার কিছু জানা নেই।  

মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সূত্র দাবি করেছে, এই গাছ লুটচক্রে জড়িত আছে হাফিজুল, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান, রামেবির রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. হাসিবুল হোসেন এবং উপাচার্যের ব্যক্তিগত সহকারী নাজমুল হোসেন।

অভিযোগে আরও উঠে এসেছে, নামমাত্র মূল্যে বাগান ইজারা দিয়ে চলতি মৌসুমে প্রায় ২০ লাখ টাকার আম বিক্রি করেছে এই চক্র। প্রকল্পের উপ-প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী সিরাজুম মুনীরসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শীর্ষ কর্মকর্তা গাছ কাটার বিষয়টি আগে থেকেই জানতেন বলেও সূত্রের দাবি।

অভিযোগের বিষয়ে রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. হাসিবুল হোসেন বলেন, গাছ কাটার বিষয়টা অফিসিয়ালি হয়নি। আমি প্রকল্প এলাকায় যাই না, আমার নাম কেন আসবে বুঝতে পারছি না।

উপাচার্যের ব্যক্তিগত সহকারী নাজমুল হোসেনও অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকটি সূত্র জানায়, মাসের পর মাস ধরে গাছ কাটা হলেও ব্যাপকহারে কাটা শুরু হওয়ার পর ঘটনাটি ফাঁস হয়। তখনই তোলপাড় শুরু হয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বালু ভরাটের কাজ পাওয়া হোসাইন কন্সট্রাকশনকে শোকজ নোটিশ দেয়।

মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন প্রকল্পের উপ-প্রকল্প পরিচালক ও পরিকল্পনা বিভাগের পরিচালক প্রকৌশলী সিরাজুম মুনীর বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে কোনো গাছ কাটা হয়নি। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান বেআইনিভাবে গাছ কেটেছে। তাই শোকজ নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তাদের জবাব পাওয়ার পর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এর সঙ্গে আমাদের কেউ সংশ্লিষ্ট থাকলে, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রামেবি ভিসির ব্যক্তিগত সহকারী নাজমুল ইসলাম বলেন, রামেবি কর্তৃপক্ষ গত ২ মার্চ  থেকে ২৬ জুন পর্যন্ত তিনবার চিঠি দিয়েছে বিভাগীয় সামাজিক বন কর্মকর্তাকে গাছগুলি মূল্যায়ন করার জন্য। কিন্তু এ পর্যন্ত বিভাগীয় বন অফিস কোনো প্রতিবেদন তৈরি করে রামেবিতে জামা দিতে পারেনি।

এ বিষয়ে বিভাগীয় বন কর্মকর্তার সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা হলে  তিনি জানান, মূল্যায়নের কাজ চলমান রয়েছে। ১২৫৩টি গাছ এজন্য সময় লাগছে। অফিসের লোকজন কাজ করছে যত দ্রুত সম্ভব শেষ করে প্রতিবেদন পাঠানো হবে।

অভিযোগের বিষয়ে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের মালিক আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। ব্যবস্থাপক দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমরা গাছ কাটিনি, ওই দিকটায় আমাদের কোনো কাজই নেই। শোকজের জবাবে এটিই জানাব।

এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।