ঢাকা: রাজধানীর মিরপুরের শেওড়াপাড়ায় দুই বোনকে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনার রহস্য উৎঘটন করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। পুরানো সাইকেল কিনতে টাকা সরানোর ঘটনা দেখে ফেলায় আপন ভাগনের হাতেই খুন হয়েছেন ওই দুই নারী।
সোমবার (১২ মে) বিকেলে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান ডিবির যুগ্ম পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, রাজধানীর শেওড়াপাড়ায় দুই বোনকে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনায় জড়িতকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার ও হত্যার আলামত জব্দ করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিবি-মিরপুর বিভাগ।
শুক্রবার (৯ মে) দুপুর ১টার পর রাজধানীর শেওড়াপাড়ার ভাড়া বাসায় খুন হন মরিয়ম বেগম ও তার বোন সুফিয়া বেগম। এই ঘটনায় মরিয়ম বেগমের মেয়ে বাদী হয়ে মিরপুর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরেন ডিবির কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, নিহতদের আপন ভাগনে মো. গোলাম রব্বানী খান ওরফে তাজ ওই দিন বেলা অনুমান ১২টা ৫০ মিনিটের দিকে শেওড়াপাড়ায় তার বড় খালা মরিয়ম বেগমের বাসায় যায়। তার বড় খালা (মরিয়ম বেগম) তাকে আপ্যায়ন করার কাজে ব্যস্ত থাকে এবং সেজো খালা (সুফিয়া বেগম) প্লেট বাটি ধোয়া মোছা করে বারান্দার দিকে যায়। এ সুযোগে তাজ বড় খালার রুমে টিভির পাশে রাখা মানিব্যাগ থেকে পুরাতন সাইকেল কেনার জন্য তিন হাজার টাকা সরিয়ে ফেলে। টাকা সরানোর ধরা পড়লে বড় খালা মরিয়ম তাকে বকাবকি করেন এবং তার মাকে জানানোর কথা বলেন। পাশাপাশি তার মাকে কল করার জন্য মোবাইলফোন খুঁজতে থাকেন। তখন তাজ ডাইনিং টেবিলে থাকা লেবু কাটার ছুরি দিয়ে প্রথমে বড় খালার পেটে আঘাত করে। আঘাতপ্রাপ্ত হলে মরিয়ম বেগম রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে মারতে উদ্যত হলে সে পুনরায় আঘাত করে। তার বড় খালার চিৎকার শুনে সেজো খালা (সুফিয়া বেগম) পাশের রুম থেকে এসে তাকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে তাকেও একই চাকু দিয়ে পেটে একবার আঘাত করলে তিনি মেঝেতে পড়ে যান। এরপর তাজ রান্নাঘর থেকে শিল-নড়া এনে তার বড় খালা ও সেজো খালার মাথায় কয়েকবার আঘাত করে।
ডিবির ওই কর্মকর্তা বলেন, দুই খালাকে হত্যার পর তাজ টয়লেটে গিয়ে তার হাতে ও মুখে লেগে থাকা রক্ত পানি দিয়ে পরিষ্কার করে। এরপর পাশের রুমে গিয়ে তার রক্তমাখা টিশার্ট ও জিন্স প্যান্ট পাল্টে খালাতো বোন মিষ্টির
ব্যবহৃত একটি জিন্স প্যান্ট ও তার ব্যাগে থাকা আরেকটি রঙিন টিশার্ট ও ক্যাপ পরে নেয়। পরবর্তীতে সে বাইরে থেকে দরজা লক করে চাবি নিয়ে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে শনিরআখড়ায় যায়।
তিনি আরও বলেন, মামলা করার পর গোয়েন্দা তথ্য বিশ্লেষণ, নিবিড় তদন্ত ও প্রযুক্তির সহায়তায় মামলার ঘটনায় জড়িত মো. গোলাম রব্বানী খান ওরফে তাজের অবস্থান শনাক্ত করে ডিবি। রোববার (১১ মে) ভোর আনুমানিক সাড়ে ৩টায় ঝালকাঠীর সদর এলাকায় তার নানাবাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে ডিবির একটি দল। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রক্তমাখা কাপড়, জুতা এবং অন্যান্য আলামত উদ্ধার করা হয়, এর মধ্যে রয়েছে রক্ত মাখা নীল রঙের টিশার্ট, রক্তমাখা দুটি জিন্স প্যান্ট (এর মধ্যে একটি তার ও একটি তার খালাতো বোন মিষ্টির)।
গ্রেপ্তার তাজকে সোমবার (১২ মে) আদালতে পাঠালে সে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় বলেও জানান ডিবির যুগ্ম পুলিশ কমিশনার।
এসসি/এএটি