ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ২৯ মে ২০২৫, ০১ জিলহজ ১৪৪৬

জাতীয়

ঘোষণা দিয়েও সড়ক থেকে লক্কর-ঝক্কর গাড়ি সরাতে পারেননি উপদেষ্টা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১:১৪, মে ২৭, ২০২৫
ঘোষণা দিয়েও সড়ক থেকে লক্কর-ঝক্কর গাড়ি সরাতে পারেননি উপদেষ্টা ফাইল ফটো

ঢাকা: দেশে বর্তমানে ৭৫ হাজারের বেশি মেয়াদোত্তীর্ণ বাস ও ট্রাক রাস্তায় চলাচল করছে। এসব পুরোনো ও অযোগ্য যানবাহন শুধু সড়ক দুর্ঘটনা ও যানজটের জন্য দায়ী নয়, পরিবেশ দূষণেরও অন্যতম উৎস হয়ে উঠেছে।

বছরের পর বছর ধরে রাস্তায় চলা এসব ‘লক্কড়-ঝক্কড়’ গাড়ির কারণে মানুষের জীবন যেমন ঝুঁকিতে পড়ছে ও পরিবেশ দূষণেও রাখছে বড় ভূমিকা।

উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেওয়ার পর মেয়াদোত্তীর্ণ এসব যান সড়ক থেকে সরিয়ে দিতে উদ্যোগী হন। তিনি ঘোষণা দেন, মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ি সরিয়ে নিতে মালিকরা ছয় মাস সময় পাবেন। এ সময়ের পর সড়কে আর এসব গাড়ি চলতে পারবে না। গত এপ্রিলে মালিকদের দেওয়া ছয় মাস সময় অতিবাহিত হয়েছে। এরপর আরও প্রায় এক মাস পেরিয়ে গেলেও রাস্তায় অবাধে চলছে মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহন।

যদিও সড়ক উপদেষ্টা দাবি করেছেন, কিছু মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ি এরই মধ্যে ডাম্পিং করা হয়েছে। তিনি জানান, সামনে যেহেতু ঈদ, এ সময় মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে তা জনভোগান্তির কারণ হবে, তাই ঈদের পর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

যাত্রীবাহী বাসের অর্থনৈতিক আয়ু ২০ বছর ও পণ্যবাহী গাড়ির ২৫ বছর নির্ধারণ করে ২০২৩ সালের মে মাসে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল তৎকালীন সরকার। যদিও পরিবহন মালিকদের চাপে তিন মাস পর প্রজ্ঞাপনটি স্থগিত করা হয়।

দেশের সড়ক পরিবহন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) তথ্য বলছে, ঢাকা মহানগর ও ঢাকা জেলায় ২০ বছরের পুরোনো বাস ও মিনিবাস রয়েছে ১০ হাজার ৫৫৬টি। এর বাইরে সারা দেশে আরও ১৮ হাজার ২০৫টি বাস ও মিনিবাস রয়েছে। আর ঢাকা মহানগর ও ঢাকা জেলায় ২৫ বছরের পুরোনো পণ্যবাহী (ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, ট্যাংকলরি) মোটরযানের সংখ্যা ১৪ হাজার ৬৮৩টি। এর বাইরে সারা দেশে আরও ৩১ হাজার ৭৯৮টি পণ্যবাহী মোটরযান রয়েছে। সব মিলিয়ে দেশে মেয়াদোত্তীর্ণ বাস ও ট্রাকের সংখ্যা ৭৫ হাজারের বেশি।

অন্তর্বর্তী সরকার আসার পর ২০২৪ সালের ২৪ অক্টোবর বিদ্যুৎ ভবনে ‘‌ঢাকা শহরের বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে পুরোনো মোটরযান অপসারণ’ শিরোনামে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সভায় ২০ বছরের পুরোনো বাস ও ২৫ বছরের পুরোনো ট্রাক বা সমজাতীয় পরিবহনকে পুরোনো হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

সভা শেষে পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছিলেন, ‘‌আমরা একটা অঙ্গীকার নিয়ে এ সভা করেছি। এতে সব অংশীজন উপস্থিত ছিলেন। সভায় আমরা রাস্তা থেকে পুরোনো যানবাহন সরিয়ে নিতে ছয় মাস সময় দিয়েছি। এ সময়ের মধ্যে মালিকরা নতুন বাস কেনার জন্য সরকারের কাছ থেকে ঋণ পেতে পারেন কিনা, সরকারের যে ইলেকট্রিক ভেহিকল নীতিমালা আছে, সেটার অধীনে সরকার ইলেকট্রিক গাড়ি কিনবে কিনা, বর্তমান বাসগুলোকে বিদ্যুৎচালিত হিসেবে রূপান্তরের সুযোগ আছে কিনা ইত্যাদি বিষয় পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য ছয় মাস সময় দেওয়া হয়েছে। ’

এ সময় শেষ হয়েছে চলতি বছরের এপ্রিলে। যদিও এরপর সড়ক থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ি অপসারণের উল্লেখযোগ্য কোনো উদ্যোগ শুরু হয়নি।

বিষয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতু উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা ঈদুল আজহার এ  সময়টা একটু দেখতে চাই। এখন আমরা সীমিত পরিসরে পুরোনো যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করছি। ঈদের পর বড় আকারে অভিযান শুরু হবে। ঈদের সময় মানুষের নির্বিঘ্নে যাতায়াতের একটা বিষয় আছে। ’

তিনি বলেন, ‘‌আমরা অনেক গাড়ি উঠিয়ে দিয়েছি। অনেক গাড়ি ডাম্পিংয়ে পাঠিয়েছি। কিন্তু এগুলো করা হয়েছে ফিটনেসসহ আনুষঙ্গিক ইস্যুগুলোর নাম করে। ঈদের পরে বড় পরিসরে পুরোনো যানবাহন অপসারণকাজ শুরুর লক্ষ্যে আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। ’

আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।