ঢাকা, সোমবার, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২, ৩০ জুন ২০২৫, ০৪ মহররম ১৪৪৭

জাতীয়

দেশ ছাড়তে চেয়েছিলেন বাপ্পি, গ্রেপ্তার এড়াতে নিয়েছিলেন যে কৌশল

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭:৫০, জুন ২৯, ২০২৫
দেশ ছাড়তে চেয়েছিলেন বাপ্পি, গ্রেপ্তার এড়াতে নিয়েছিলেন যে কৌশল দুই সহযোগীসহ বাপ্পিকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি পুলিশ

রাজধানীর ফকিরাপুলে গোয়েন্দা পুলিশকে (ডিবি) লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ার ঘটনায় দেশ ছেড়ে পালানোর আগে দুই সহযোগীসহ শীর্ষ সন্ত্রাসী বাপ্পিকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। গ্রেপ্তারের আগে সিলিন্ডারের গ্যাস ছেড়ে পুলিশকে প্রতিহত করার চেষ্টা করেন তারা।

বাসায় থাকা শিশু ও নারীদের হত্যা করবেন বলেও হুমকি দেন।

রোববার (২৯ জুন) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক ব্রিফিংয়ে ডিবির যুগ্ম কমিশনার (দক্ষিণ) নাসিরুল ইসলাম এসব তথ্য জানান।

ডিবি কর্মকর্তা নাসিরুল ইসলাম বলেন, বাপ্পি দেশ ছাড়তে যশোর শহরের ঘোপ নওয়াপাড়া রোডের নজরুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তির দোতলা বাড়িতে অবস্থান নেন। গোয়েন্দা পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে বাপ্পি বাসায় থাকা গ্যাস সিলিন্ডারের গ্যাস ছেড়ে দেন।

তিনি বলেন, বাসায় গ্যাস জমাট করে পুলিশকে হুমকি দেন, যদি তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করা হয় তাহলে বাসায় থাকা শিশু ও নারীদের হত্যা করবেন। পরে অভিযানে থাকা পুলিশ সদস্যরা ফায়ার সার্ভিসের সহযোগিতায় বাসার গ্যাস অপসারণ করে তাকে গ্রেপ্তার করেন।

নাসিরুল ইসলাম জানান, শুক্রবার দিবাগত রাত ২টায় যশোর জেলার ঘোপ নওয়াপাড়া এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে বাপ্পি ওরফে মো. আলী ওরফে ফিরোজ আলম ওরফে আহসানুল হক এবং তার সহযোগী আবু খালিদ সাইফুল্লাহ ওরফে বোমা রিপন ও মো. কামরুল হাসানকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের হেফাজত থেকে তিনটি বিদেশি পিস্তল, ছয়টি গুলিভর্তি ম্যাগাজিন ও ১৫১ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়।

ডিবি কর্মকর্তা বলেন, গত ১৮ জুন রাত সোয়া ৯টার দিকে ডিবির লালবাগ বিভাগের সংঘবদ্ধ অপরাধ ও গাড়ি চুরি প্রতিরোধ টিম রাজধানীর মতিঝিল থানাধীন ফকিরাপুল এলাকার ডিআইটি এক্সটেনশন রোডে অভিযান চালিয়ে এক হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেটসহ আবদুর রহমান নামে একজনকে আটক করে। পরে আটক আব্দুর রহমানের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ডিবির টিম ১৯ জুন রাত সাড়ে ১২টায় ফকিরাপুল থেকে পল্টনগামী একটি প্রাইভেটকারকে থামানোর নির্দেশ দেয়।

ব্রিফিংয়ে নাসিরুল ইসলাম জানান, এ সময় গাড়িতে অবস্থানরত দুই মাদক কারবারি আচমকা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি করে পালিয়ে যান। পলাতক সন্ত্রাসীদের গুলিতে ডিবির তিন সদস্য গুলিবিদ্ধ হন। ঘটনাস্থল থেকে তাৎক্ষণিক ৯ হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেটসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। মাদক কারবারিদের ব্যবহৃত প্রাইভেটকারও জব্দ করা হয়।

ডিবি কর্মকর্তা আরও বলেন, ঘটনায় জড়িত অন্যান্যদের গ্রেপ্তারে ডিবির অভিযান অব্যাহত থাকে। অস্ত্রধারী মাদক কারবারিদের ধরতে ডিবি তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ ও পর্যালোচনা করে জানতে পারে এই ঘটনার মূল হোতা বাপ্পি ওরফে মো. আলী ওরফে ফিরোজ আলম ওরফে আহসানুল হক। এ প্রেক্ষিতে ওই অস্ত্রধারী মাদক কারবারিকে ধরতে ডিবি রাজধানী ঢাকা, বরিশাল, সাতক্ষীরা ও যশোরের বিভিন্ন এলাকায় সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করে।

‘এক পর্যায়ে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে শুক্রবার রাতে যশোর শহরের ঘোপ নওয়াপাড়া রোডের নজরুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তির দোতলা বাড়ি থেকে সন্ত্রাসী বাপ্পি ও তার সহযোগী আবু খালিদ সাইফুল্লাহ ওরফে বোমা রিপন ও মো. কামরুল হাসানকে গ্রেপ্তার করা হয়। ’

এ সময় বাপ্পির দেহ তল্লাশি করে ১টি পিস্তল এবং ২টি ম্যাগাজিনে ৭ রাউন্ড গুলি ভর্তি অবস্থায় উদ্ধার করে জব্দ করা হয়। বাপ্পির দেওয়া তথ্য মতে ডিবি পুলিশের সদস্যরা শনিবার (২৮ জুন) রাতে ঢাকা মহানগরীর ডেমরা থানাধীন বাদশা মিয়া রোডের একটি আবাসিক ফ্ল্যাটে সন্ত্রাসী বাপ্পির ব্যক্তিগত তালাবন্ধ কক্ষ থেকে তার লুকানো দুটি বিদেশি পিস্তল, ৪টি গুলি ভর্তি ম্যাগাজিনসহ আরও ১৪৪ রাউন্ড পিস্তলের গুলি জব্দ করা হয়।

ডিবির এই যুগ্ম কমিশনার আরও জানান, বাপ্পির গ্রুপের সদস্য ২৫ জন। তিনি ২০১০ সাল থেকে মাদক বিক্রি করে আসছেন। বিভিন্ন সময়ে তাকে অস্ত্র ও মাদকসহ গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা রয়েছে। পাশাপাশি তার গ্রুপের সদস্যদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে।

এসসি/এমইউএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।