ঢাকা: স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও ওয়ার্ড মেম্বারের উসকানিতে কুমিল্লার মুরাদনগরের বাঙ্গরা বাজার থানার কড়ইবাড়িতে মা, ছেলে ও মেয়েসহ তিনজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় বাচ্চু মিয়াসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
গ্রেপ্তাররা হলেন- বাচ্চু মিয়া (৫৫), রবিউল আওয়াল (৫৫), আতিকুর রহমান (৪২), মো. বায়েজ মাস্টার (৪৩), দুলাল (৪৫) ও আকাশ (২৪)।
শুক্রবার (৪ জুলাই) রাতে রাজধানীর বনশ্রী ও কুমিল্লার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে র্যাব-১১ এর একটি দল।
শনিবার (৫ জুলাই) বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব-১১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, গত ১ জুলাই সকালে গ্রেপ্তার রবিউলের বাড়ি থেকে মোবাইল চুরির অভিযোগে বাঙ্গরা বাজার থানাধীন হায়দরাবাদ এলাকার অটোরিকশা চালক বোরহানকে গ্রেপ্তার আসামিরাসহ অন্যান্য আসামিরা বেধড়ক মারধর করতে থাকে এবং প্রাণনাশের হুমকি দিতে থাকে। পরে বোরহানের বাবা জসীম এ সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে তার ছেলের প্রাণভিক্ষা চায়। এ বোরহানের বাড়ি মৃত ভিকটিম জোনাকীর শ্বশুরবাড়ির পাশে অবস্থিত হওয়ায় বোরহানের বাবা জসীম জোনাকীকে আসামিদের কাছ থেকে তার ছেলেকে উদ্ধার করার জন্য অনুরোধ করে। কিন্তু জোনাকী ও তার পরিবারের সদস্যরা আসামিদের কাছ থেকে বোরহানকে রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়। পরবর্তীতে বোরহানের বাবা বাঙ্গরা বাজার থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। এরই মধ্যে বোরহানকে পাওয়া যাচ্ছে না মর্মে লোকমুখে খবর প্রকাশ হলে বোরহানের বাবা ধারণা করে যে, আসামিরা তার ছেলেকে মেরে লাশ গুম করে ফেলেছে, বোরহানের বাবা থানায় অভিযোগ দায়েরের ঘটনায় আসামিরা ধারণা করে যে, ভিকটিম জোনাকী ও তার পরিবারের সদস্যদের পরামর্শে বোরহানের বাবা থানায় অভিযোগ করেছে।
র্যাব ১১ এর অধিনায়ক আরও জানান, গত ৩ জুলাই সকালে পরিকল্পনা অনুযায়ী গ্রেপ্তার আসামিরাসহ অন্যান্য আসামিরা বেআইনিভাবে দলবদ্ধ হয়ে ভিকটিমের বাড়ি ঘেরাও করে তাদের পরিবারের সব সদস্যদের বাড়ি থেকে বের হতে বলে। এ সময় ভিকটিম রোকসানা আক্তার রুবি (৫৫) বাড়ি থেকে বের হলে চেয়ারম্যান মেম্বারের সঙ্গে তাদের কথা কাটাকাটি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরবর্তীতে তারাসহ অন্যান্য আসামিরা তার মাথায় রামদা দিয়ে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করে। অপর ভিকটিম জোনাকী (২৪) তার মাকে রক্ষা করার জন্য এগিয়ে এলে তাকেও নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করে। মা ও বোনের মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে ভিকটিম রাসেল (২৭) তৎক্ষণাৎ মোটরসাইকেল যোগে তার বাড়ির সামনে উপস্থিত হলে গ্রেপ্তার আসামিসহ অন্যান্য আসামিরা মোটরসাইকেলে থাকাবস্থায় নির্মমভাবে কুপিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে। এছাড়া অপর দুই ভিকটিম রিক্তা (৩২) রুমাকে (২৭) গুরুতর আহত করে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে আত্মগোপন করে। পরে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তা ও গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ঢাকা ও কুমিল্লার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়। আসামিরা জিজ্ঞাসাবাদে প্রাথমিকভাবে তারা এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছে বলে জানান র্যাব কর্মকর্তা।
এক প্রশ্নের জবাবে লেফটেন্যান্ট কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ বলেন, মূলত মব সৃষ্টিতে ইন্ধন দেন মেম্বর বাচ্চু মিয়া। এ সময় ঘটনাস্থলে ইউপি চেয়ারম্যানও সেখানে ছিল। মূলত তাদের ইন্ধনেই ট্রিপল মার্ডারের ঘটনা ঘটেছে।
এমএমআই/জেএইচ