ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩১ আষাঢ় ১৪৩২, ১৫ জুলাই ২০২৫, ১৯ মহররম ১৪৪৭

জাতীয়

সংখ্যালঘু ঐক্য মোর্চার ব্যানারে সংবাদ সম্মেলনের বিষয়ে যা বললো পুলিশ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩:৫৭, জুলাই ১৫, ২০২৫
সংখ্যালঘু ঐক্য মোর্চার ব্যানারে সংবাদ সম্মেলনের বিষয়ে যা বললো পুলিশ বাংলাদেশ পুলিশের লোগো।

বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ কর্তৃক সংখ্যালঘু ঐক্য মোর্চার ব্যানারে গত ১০ জুলাই সংবাদ সম্মেলনে বিগত ৬ মাসে ২৭ জন নিহত হওয়ার ঘটনাসহ গত ১১ মাসে ২ হাজার ৪৪২টি সাম্প্রদায়িক হামলা ও সহিংসতার ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে।  

এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা দিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ।

মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সংঘটিত প্রত্যেকটি ঘটনায় বাংলাদেশ পুলিশ সর্বোচ্চ আন্তরিকতা ও গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছে এবং সব স্থাপনা ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করছে।

ব্যাখ্যায় পুলিশ সদর দপ্তর জানায়, বাংলাদেশ পুলিশ উল্লিখিত ২৭ জন নিহত হওয়ার ঘটনাসমূহ পর্যালোচনা করে। ২৭ জন নিহত হওয়ার ঘটনার মধ্যে ২২টি ঘটনায় নিয়মিত হত্যা মামলা এবং ৫টির ক্ষেত্রে অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়েছে। কোনো হত্যাকাণ্ডই সাম্প্রদায়িক সহিংসতা/সাম্প্রদায়িকতার কারণে সংঘটিত হয়নি মর্মে তদন্তে পাওয়া যাচ্ছে।

হত্যাকাণ্ডের কারণসমূহের মধ্যে জমি-জায়গা সংক্রান্ত বিরোধের জেরে ২টি (ভাতিজা কর্তৃক চাচাকে হত্যা, চাচাতো ভাইদের মধ্যে মারামারির ফলে ১ জন নিহত), আর্থিক লেনদেন সংক্রান্তে ২ জন (তন্মধ্যে মাদক ক্রয়-বিক্রয়ের টাকা পাওনাকে কেন্দ্র করে ১ জন), ডাকাতি/দস্যুতার ঘটনায় হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে ৭ জন, সন্ত্রাসী গ্রুপের সদস্য সন্দেহে প্রতিপক্ষ সন্ত্রাসী গ্রুপের গুলিতে ১ জন, তরমুজ ক্রয়-বিক্রয়কে কেন্দ্র করে মারামারিতে ১ জন, গলায় ফাঁস নিয়ে ৩ জনের আত্মহত্যা।

লাশ উদ্ধার করা হয়েছে এমন ১১ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় (ভবঘুরে/মানসিকভাবে অসুস্থ নারীর সন্দেহজনক মৃত্যু, জুম চাষে গিয়ে খেয়াং নারী নিহত, তামাক ক্ষেত থেকে পাতা কুড়াতে যাওয়া নারীর লাশ উদ্ধার, বাড়ির পাশ থেকে জখমহীন লাশ/অন্যান্য স্থান থেকে লাশ উদ্ধার ইত্যাদি) তদন্ত চলমান রয়েছে।

এসব হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মোট ৪৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, ১৫ জন আসামি বিজ্ঞ আদালতে আত্মসমর্পণ করেছে এবং ১৮ জন আসামি ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারা মোতাবেক আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে যৌন হয়রানি, ধর্ষণ, গণধর্ষণ সংক্রান্তে মোট ২০ ঘটনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ২০ ঘটনার মধ্যে ১৬টি ঘটনার অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং ২৫ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনটি ঘটনা সংক্রান্তে কোনো অভিযোগ দায়ের হয়নি। রাজশাহীর তানোরে আদিবাসী নারী ধর্ষণের শিকার ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়নি। অভিযুক্তের সঙ্গে আগ থেকে বাদীনির পারিবারিক দ্বন্দ্ব ছিল মর্মে জানা যায়।

মাগুরার শ্রীপুর হরিনন্দীগ্রামে কিশোর কুমার রায়ের বাড়িতে ডাকাতির পর সহধর্মিণীকে গণধর্ষণের ঘটনাটিতে কোনো অভিযোগ দায়ের হয়নি এবং ঘটনাটি পুলিশ তদন্ত করে প্রাথমিকভাবে সত্যতা পায়নি।  

সংখ্যালঘু ঐক্য মোর্চার ব্যানারে সংবাদ সম্মেলনের সংগঠনটি জানায়, সবচেয়ে বেশি সহিংসতার ঘটনা ঘটে গত বছরের ৪ আগস্ট থেকে ২০ আগস্ট পর্যন্ত; ২ হাজার ১০টি, যার মধ্যে ১ হাজার ৭৬৯টি সম্প্রদায়িক আক্রমণ এবং হামলার ঘটনা। বাংলাদেশ পুলিশ ১ হাজার ৭৬৯ ঘটনা যাচাই-বাছাই করে ৫৬টি জেলায় মোট ১ হাজার ৪৫৭টি ঘটনার সত্যতা পায়। ১ হাজার ৪৫৭ ঘটনার মধ্যে মোট ৬২টি ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয় এবং ৯৫১টি ঘটনায় জিডি দায়ের করা হয়। ৬২ ঘটনায় মোট ৩৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।  

তদন্তে দেখা যায় যে, ১ হাজার ৭৬৯টি ঘটনার মধ্যে ১ হাজার ৪৫২টি ঘটনা (৮২.৮ শতাংশ) ৫ আগস্ট/২০২৪ এ সংগঠিত হয়। ১ হাজার ২৩৪টি ঘটনা রাজনৈতিক বিরোধ সংক্রান্ত। ১৬১টি ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়নি।  

৫ আগস্ট ২০২৪ থেকে ২ জানুয়ারি ২০২৫ পর্যন্ত পূজামণ্ডপ/উপাসনালয় সংক্রান্তে মোট ১২৭টি সহিংসতার ঘটনার সংবাদ পাওয়া যায়, যার মধ্যে ৬৬টি ঘটনায় মামলা এবং ৬১টি ঘটনায় জিডি লিপিবদ্ধ করা হয়। দায়ের করা মামলায় মোট ৬৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে মন্দির, পারিবারিক মন্দিরে চুরি, প্রতিমা, মন্দির, পারিবারিক মন্দিরে ভাঙচুর, অগ্নি-সংযোগ, জমি দখল, উচ্ছেদ, উচ্ছেদের চেষ্টা ইত্যাদি সংক্রান্তে মোট ৬০টি ঘটনার অভিযোগ করা হয়।  

ঘটনাসমূহ পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, মন্দির, পারিবারিক মন্দিরের মূর্তি, অলংকার, আসবাবপত্র বা দান বাক্সের টাকা ইত্যাদি সংক্রান্তে বাংলাদেশ পুলিশ ২০টি চুরির ঘটনার সংবাদ পায়। ২০টি ঘটনায় ১৪টি নিয়মিত মামলা দায়ের করা হয় এবং ৫ ঘটনা জিডিতে লিপিবদ্ধ করা হয়। প্রতিমা বা মন্দির, পারিবারিক মন্দিরে ভাঙচুরের মোট ২৪টি ঘটনার সংবাদ পাওয়া যায় এবং এ সংক্রান্তে মোট ১৮টি মামলা ও ৪টি ঘটনা জিডিতে লিপিবদ্ধ করা হয়। এসব মামলায় মোট ১৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং ১০ জন আসামি আদালতে আত্মসমর্পণ করে। একটি চুরির ঘটনায় এবং দুটি ভাঙচুরের ঘটনার তদন্তে  সত্যতা পাওয়া যায়নি।  

এছাড়া ৪টি অগ্নি-সংযোগের ঘটনার মধ্যে ২টি অগ্নি-সংযোগের ঘটনায় প্রাথমিকভাবে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের তথ্য পাওয়া যায়নি। ৪টি ঘটনায় জমি ও সীমানা সংক্রান্ত সমস্যা ছিল মর্মে জানা যায়। তন্মধ্যে দুটি ঘটনা স্থানীয় প্রশাসনের মধ্যস্থতায় সমাধান হয়।

৬টি জায়গা দখলের অভিযোগের সংবাদে তদন্তে প্রকৃতপক্ষে জায়গা দখলের তথ্য পাওয়া যায়নি। খিলক্ষেত থানার বাংলাদেশ রেলওয়ের জায়গার অস্থায়ী পূজামণ্ডপটি মূলত রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ, পুলিশ, সেনাবাহিনী এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়। বগুড়ায় শ্মশানঘাটের পিলার ঠিকাদার কর্তৃক ভেঙে ফেলার ঘটনায় প্রশাসনের উদ্যোগে পুনরায় শ্মশান ঘাট নির্মাণ করে দেওয়া হয়।  

পুলিশ সদর দপ্তর বলছে, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে সংঘটিত অন্যান্য ঘটনাসমূহ পরে সুনির্দিষ্টভাবে সরবরাহ করা হবে বলে জানানো হয়েছে। তথ্য পাওয়া গেলে সুনির্দিষ্টভাবে ঘটনাসমূহের বিস্তারিত জানানো হবে।

সংঘটিত প্রত্যেকটি ঘটনায় বাংলাদেশ পুলিশ সর্বোচ্চ আন্তরিকতা ও গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছে এবং সব স্থাপনা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করছে।

এজেডএস/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।