অতীত সরকারের নেওয়া বিদেশি ঋণ পরিশোধের চাপ ক্রমাগত বাড়ছে। প্রথমবারের মতো ২০২৪-২৫ অর্থবছরে অন্তর্বর্তী সরকার ৪০০ কোটি ডলারের বেশি বিদেশি ঋণ পরিশোধ করেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বিদেশি ঋণের দায় ক্রমাগত বেড়ে যাচ্ছে, যা অর্থনীতিতে নতুন চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ এখন এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের জন্য অপেক্ষমাণ তালিকায় রয়েছে। এটা এক রকম চূড়ান্তই। এ সময় পেছানোর আবেদনেরও কোনো সুযোগ নেই। আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা করছে সরকার। সে অনুযায়ী নির্বাচন হলে দায়িত্ব গ্রহণের শুরুতেই নতুন সরকারকে যে কয়টি চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ শুরু করতে হবে তার মধ্যে বিদেশি ঋণ পরিশোধ অন্যতম। ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপরও চাপ বাড়বে। সামষ্টিক অর্থনীতির ভারসাম্য ধরে রাখা হবে কঠিন চ্যালেঞ্জ। যদিও বর্তমানে সামষ্টিক অর্থনীতিতে খুব একটা ভারসাম্য নেই বলে মনে করেন বিশ্বব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, অতীত সরকার গত ১৫ বছরে অনেক অপ্রয়োজনীয় খাতে ঋণ নিয়েছে। আবার অনেক প্রকল্পেও বিদেশি ঋণ নিয়েছে যেসব প্রকল্পের প্রয়োজনীয়তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। ফলে এসব ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি করছে দেশের অর্থনীতির ওপর। অর্থবিভাগ সূত্র জানায়, বিদেশি ঋণ পরিশোধ প্রথমবারের মতো ৪০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে। বিদায়ি অর্থবছরের (২০২৪-২৫) বিদেশি ঋণের সুদ ও আসলসহ মিলিয়ে প্রায় ৪০৯ কোটি ডলার শোধ করেছে বাংলাদেশ। এটি এযাবৎকালের রেকর্ড। এর আগে কখনো এত ঋণ শোধ করা হয়নি। আগের অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৩৭ কোটি ডলার ঋণ পরিশোধ করেছিল তৎকালীন সরকার। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সর্বশেষ প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত জুলাই থেকে জুন পর্যন্ত সরকার বিদেশি ঋণ পরিশোধ বাবদ যে অর্থ ব্যয় করেছে, এর মধ্যে ঋণের আসল বাবদ পরিশোধ করা হয়েছে ২৫৯ কোটি ডলার। আর সুদ বাবদ ১৪৯ কোটি ডলার পরিশোধ করা হয়েছে। চলতি বছরেরর প্রথম মাস থেকেই এ হার বাড়তে শুরু করেছে। জানা গেছে, ২০১২-১৩ অর্থবছরে সব মিলিয়ে ১১০ কোটি ডলার ঋণ পরিশোধ করেছিল বাংলাদেশ। প্রায় ১০ বছর পর ২০২১-২২ অর্থবছরে ঋণ পরিশোধ বেড়ে ২০১ কোটি ডলারে উন্নীত হয়। ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা পৌনে ৩০০ কোটি ডলারে পৌঁছায়। বিদায়ি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বিদেশি ঋণ পরিশোধ বাবদ ৪০৯ কোটি ডলার দিতে হয়েছে বাংলাদেশকে। অর্থাৎ গত এক যুগে বিদেশি ঋণ পরিশোধ বেড়ে প্রায় চার গুণের কাছাকাছি হয়েছে।
সরকারের লক্ষ্য অনুযায়ী আর মাত্র দেড় বছর পরই স্বলোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে আসবে বাংলাদেশ। এ তালিকা থেকে বেরিয়ে এলে একদিকে যেমন বাংলাদেশের ঋণমান বাড়বে ঠিক তেমন বৈদেশিক ঋণ ও অনুদান প্রাপ্তি সংকুচিত হয়ে আসবে। একই সঙ্গে বৈদেশিক ঋণের সুদও বাড়বে নিয়ম মোতাবেকই। অবশ্য ২০২৬ সালের পর আরও চার বছর স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে সুবিধাদী বহাল থাকবে বাংলাদেশের। ফলে বিদেশি ঋণের বোঝা বাড়াকে এক ধরনের গলার কাঁটা হিসেবেও আখ্যা দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। সম্প্রতি সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) এক অনুষ্ঠানে বিদেশি ঋণ পরিস্থিতি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা করেছেন অর্থনীতিবিদরা। তারা এ বিষয় নিয়ে গভীর উদ্বেগও প্রকাশ করেছেন।