ঢাকা, মঙ্গলবার, ৭ আশ্বিন ১৪৩২, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০০ রবিউস সানি ১৪৪৭

জাতীয়

টঙ্গীতে আগুন নেভাতে গিয়ে ফায়ারের সদস্যসহ চারজন আশঙ্কাজনক

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০:৫৯, সেপ্টেম্বর ২২, ২০২৫
টঙ্গীতে আগুন নেভাতে গিয়ে ফায়ারের সদস্যসহ চারজন আশঙ্কাজনক

গাজীপুরের টঙ্গীতে সাহারা মার্কেটে সেমিপাকা একটি টিনশেড কেমিক্যালের গোডাউনে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণের সময় বিস্ফোরণে ফায়ার সার্ভিসের তিন ফায়ার ফাইটার, একজন অফিসারসহ এক দোকান কর্মচারীও দগ্ধ হয়েছেন।

ওই গোডাউনের আগুন ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা তাপ নিয়ন্ত্রণের প্রটেক্টর পোশাক পরেই নির্বাপনের কাজ করছিলেন।

কিন্তু বিস্ফোরণের কারণে আগুনের ভয়াবহতা এতটাই ছিল যে, ফায়ার কর্মীদের প্রটেক্টর পোশাক পুড়ে গিয়ে তারা দগ্ধ হন। আহতদের মধ্যে চারজনকে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে আনা হয়েছে। এদের মধ্যে নুরুল হুদা (৪০) ১শ শতাংশ, শামীম আহমেদ (৪২) ১শ শতাংশ, অফিসার খন্দকার জান্নাতুল নাঈম (৩৮) ৪২ শতাংশ, জয় হাসানের (২৪) পাঁচ শতাংশ পুড়ে গেছে।  ফায়ার সার্ভিসের তিনজন ও অপর আরেকজনসহ মোট চারজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।  

এদিকে ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক বলছেন, বিষয়টি আসলে কিভাবে হয়েছে ঘটনা জানার চেষ্টা করা হচ্ছে।  

হাসপাতাল থেকে জানা যায়, এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় একজন দোকান কর্মচারী আলা-আমিন নামে এক ব্যক্তি দগ্ধ হয়ে ঢাকা মেডিকেল বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন।  

সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) ফায়ার সার্ভিস সদরদপ্তর থেকে মিডিয়া সেলের কর্মকর্তা তালহা বিন জসিম বলেন, বিকেলে টঙ্গীর সাহারা মার্কেটের সেমিপাকা একটি টিনশেড কেমিক্যালের গোডাউনের অগ্নিকাণ্ডের সংবাদ পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের সাত ইউনিট আগুন নির্বাপনের কাজ করছিল। এ সময় তিনজন ফায়ার ফাইটার ও একজন কর্মকর্তা দগ্ধ হয়। তারা হলেন, ফাইটার মো. শামীম, অফিসার জান্নাতুল নাঈম, ফায়ার ফাইটার মো. নুরুল হুদা ও জয় হাসান। বর্তমানে তারা জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন।

এদিকে চিকিৎসকরা বলছেন, ফায়ার সার্ভিসের তিনজন ও অপর আরেকজনসহ মোট চারজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।  

তালহা বিন জসিম আরও বলেন, ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুনের তাপের প্রতিরোধের পোশাক পরেই টঙ্গীতে লাগা কেমিক্যালের গোডাউনে আগুন নির্বাপনের কাজ করছিলেন। এই সময় বিস্ফোরণ হলে আগুনের তীব্রতার কারণে সেই পোশাক পুড়ে তারা দগ্ধ হয়।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ জাহেদ কামাল বাংলানিউজকে বলেন, টঙ্গীতে কেমিক্যাল গোডাউনে আগুন নির্বাপনের সময় আমাদের তিন ফায়ার ফাইটার ও একজন অফিসার দগ্ধ হয়। তারা বর্তমানে চিকিৎসাধীন বার্ন ইনস্টিটিউটে। সব অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমাদের কর্মীরা কাজ করে থাকেন, আজ তেমনি তারা কাজ করছিলেন।  বিস্তারিত ঘটনা জানার জন্য কাজ করা হচ্ছে। পরে ফায়ারের মহাপরিচালক বার্ন ইনস্টিটিউটে দগ্ধ ফায়ার সদস্যদের চিকিৎসার খোঁজখবর নেন এবং সেখানে অনেক সময় অবস্থান করেন।

এদিকেগোডাউনে আগুনের সময় পাশের হার্ডওয়্য়ারের দোকানের কর্মচারী আলা-আমিন তাদের গোডাউন থেকে মালামাল সরানোর সময় জ্বলতে থাকা আগুন থেকে বিস্ফোরণে সময় প্রচন্ড বেগে ছুটে আসা আগুনের ফুলকিতে তার শরীরের অধিকাংশ জায়গা পুড়ে যায়। বর্তমানে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন।

দগ্ধ আল-আমিনের সহকর্মী মো. আনোয়ার হোসেন জানান, তার বাড়ি কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলায়। বাবার নাম মৃত রতন হাওলাদার। থাকেন টঙ্গী রেলওয়ে কলোনিতে। সাহারা সুপার মার্কেটের পাশের লাক্সমি এন্টারপ্রাইজ নামে একটি হার্ডওয়্যারের দোকানে কাজ করেন তারা। আজ বিকেল ৩টার দিকে মার্কেটটিতে আগুন লাগে। সেখানে তাদের একটি গোডাউন রয়েছে। আগুনের খবর শুনে তারা সেখানে গিয়েছিলেন গোডাউন থেকে মালামাল সরাতে। তখনই বিস্ফোরণে আল-আমিন দগ্ধ হন।

ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ি ইনচার্জ মো. ফারুক জানান, আলা-মিনের অবস্থা খুবই খারাপ, তার শরীরে প্রায় সব জায়গায় আগুনে পুড়ে গেছে।

জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটের জরুরি বিভাগের আবাসিক সার্জন ডা. শাওন বিন রহমান জানান, টঙ্গীর একটি কেমিক্যাল গোডাউনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দগ্ধ চার ফায়ার সার্ভিসের সদস্যকে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের সবার অবস্থাই গুরুতর বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

একই ঘটনায় আল-আমিন নামে অপর আরেকজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে। তার অবস্থাও আশঙ্কাজনক বলে জানান সেখানকার চিকিৎসকরা।

সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটের সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. ফজলে রাব্বি জানান, টঙ্গীর অগ্নিকাণ্ডের দগ্ধ ফায়ার সার্ভিসের চারজনের মধ্যে জয় হাসান নামে একজনের শরীরের পাঁচ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে। তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হবে। এ ছাড়া নুরুল হুদা ও শামীম আহমেদের শ্বাসনালিসহ শরীরের প্রায় শতভাগ অংশ পুড়ে গেছে। আর ইন্সপেক্টর খন্দকার জান্নাতুল নাঈমের ৪২ শতাংশ পুড়ে গেছে। এই তিনজনের অবস্থা ক্রিটিকাল।

ফায়ার সার্ভিস সদরদপ্তর থেকে জানান, টঙ্গীর সেই কেমিক্যাল গোডাউনের লাগা আগুন সন্ধ্যা সাতটার দিকে নিয়ন্ত্রণে এসেছে।

আরও পড়ুন>>টঙ্গীর কেমিক্যাল গোডাউনে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে, আহত ৪

এজেডএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।