ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

রাবি শিক্ষক হত্যা

এক বছরেও শুরু হয়নি বিচারকাজ

শরীফ সুমন ও রফিকুল ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৫, ২০১৫
এক বছরেও শুরু হয়নি বিচারকাজ

রাজশাহী: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. একেএম শফিউল ইসলাম হত্যাকাণ্ডের এক বছর পূর্ণ হলো রোববার (১৫ নভেম্বর)। এক বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো দোষীদের বিরুদ্ধে বিচারকাজ শুরু হয়নি।

হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দায়ের করা মামলার চার্জশিট আদালতে দাখিল করতে পারেনি পুলিশ।

২০১৪ সালের ১৫ নভেম্বর দিনের আলোতে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সারাদেশে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। হত্যার মোটিভ নিয়ে চলে নানা জল্পনা-কল্পনা। এরপর দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত এ হত্যা মামলার অগ্রগতি হয়নি। হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত দোষীদের বিচারের আওতায় আনতে উল্লেখ্যযোগ্য অগ্রগতি না হওয়ায় ক্ষুব্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

তবে পুলিশ বলছে, মামলার চার্জশিট প্রায় প্রস্তুত। এ মাসেই চার্জশিট আদালতে দাখিল করা হবে।

নগর গোয়েন্দা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, হত্যাকাণ্ডের পর জঙ্গি সম্পৃক্ততার বিষয়টি সামনে আসলেও তদন্তে এর কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা নাসরিন আখতার রেশমার সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগ তুলে তার স্বামী আব্দুস সামাদ পিন্টু ও তার সহযোগীরা শফিউল ইসলামকে হত্যা করেছেন বলে তদন্তে উঠে এসেছে। তদন্তের পরিপ্রেক্ষিতে মামলার চার্জশিটে যুবদল নেতা আনোয়ার হোসেন উজ্জল ও পিন্টুসহ ১০ থেকে ১২ জনের নাম উল্লেখ থাকছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। বর্তমানে পিন্টু আটক থাকলেও পলাতক আছেন যুবদল নেতা উজ্জল।

গত বছরের ১৫ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন চৌদ্দপাই এলাকায় নিজ বাড়ির সামনে ড. শফিউল ইসলামকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপায় দুর্বৃত্তরা। গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে শফিউল ইসলামের মৃত্যু হয়।

ঘটনার পর ২৩ নভেম্বর হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে যুবদল নেতা পিন্টুসহ ৬ জনকে আটক করে ৠাব। ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করে ৠাব জানায়, আটক যুবদল নেতা পিন্টুর স্ত্রী রেশমার সঙ্গে দ্বন্দ্বের জের ধরে হত্যাকাণ্ডের ঘটনার কথা স্বীকার করেছেন আটকরা।

জানানো হয়, হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী রাজশাহী জেলা যুবদলের আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন উজ্জল। তবে ২৫ নভেম্বর আটক ৬ জনকে আদালতে হাজির করা হলে তারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিতে অস্বীকৃতি জানান।

মামলার তদন্তে আশানুরুপ অগ্রগতি না হওয়ায় গত ২১ জানুয়ারি মামলাটি নগর গোয়েন্দা পুলিশের কাছে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে মামলার তদন্তের দায়িত্ব পান গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক আশিকুর রহমান। হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে যুবদল নেতা পিন্টুর স্ত্রী রেশমাসহ ২০ জনকে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ। চলতি বছরের ৭ মার্চ রেশমাকে রাজশাহী মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। এরপর রেশমাকে রিমান্ডে নেওয়া হয়। রিমান্ড শেষে ১৯ মার্চ রেশমা হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দেন। এদিকে পরিদর্শক আসিকুর রহমান রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরএমপি) থেকে বদলি হওয়ায় গত মাসে তদন্তের দায়িত্ব পান নগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক রেজাউস সাদিক।

ড. শফিউল হত্যাকাণ্ডের পর ফেসবুকে আনসার আল ইসলাম বাংলাদেশ-২ নামের ফেসবুক পেজে দায় স্বীকার করে কথিত জঙ্গি সংগঠনটি। তবে ঘটনার মোটিভকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্যই ওই পেজ খোলা হয় বলে দাবি পুলিশের।

পুলিশ ও ৠাবের পক্ষ থেকে যুবদলের আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন উজ্জলকে মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে উল্লেখ করা হলেও একবছরেও তাকে আটক করতে পারেনি পুলিশ। যুবদলের ওই নেতা পলাতক অবস্থায় মামলা থেকে রেহাই পেতে নানাভাবে তদবির করে যাচ্ছেন বলেও পুলিশের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।

এসব খবরে নিহত শফিউলের সহকর্মী ও শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ। তাদের আশংকা, ঘটনার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানে পুলিশ ব্যর্থ হয়েছে অথবা সাদামাটাভাবে দায়সারা একটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়ে হত্যা মামলাটি নিষ্ক্রিয় করার ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এখনো মামলার অভিযোগপত্র দিতে না পারায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

ড. শফিউলের সহকর্মী ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি প্রফেসর ওয়ারদাতুল আকমাম বাংলানিউজকে বলেন, প্রফেসর শফিউল হত্যার এক বছর হলেও তদন্তে আশানুরুপ অগ্রগতি হয়নি। পুলিশের কর্মকর্তারা মাঝেমধ্যেই যোগাযোগ করে শুধু আশার বাণী শুনিয়েছেন। আমরা চাই দ্রুত এ হত্যাকাণ্ডের অভিযোগপত্র দিয়ে বিচার শুরু হোক।

এদিকে হত্যার পর একবছর পেরিয়ে গেলেও বাবার শোক ভুলতে পারেন নি ড. শফিউলের একমাত্র সন্তান সৌমিন শাহরিদ জেবিন। শুক্রবার নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে বাবার ও বাবার সঙ্গে নিজের দু’টি ছবি আপলোড করে জেবিন বলেছেন, ‘এটা এক বছরের বিষয় নয়, প্রতিটা মুহুর্তের বিষয়। তোমাকে ছাড়া আমি কিভাবে বাঁচবো বাবা, আমি বিচার চাই, এটার জন্যই আমি বেঁচে আছি। ’

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রেজাউস সাদিক বাংলানিউজকে বলেন, মামলাটি অনেক দিনের হওয়ায় তাড়াহুড়ো করে চার্জশিট দাখিল করা সম্ভব হচ্ছে না। একটু সময় নিয়ে হলে ভালো হয়। আশা করছি, এ মাসের মধ্যে ১০ থেকে ১২ জনের নাম উল্লেখ করে চার্জশিট দাখিল করা সম্ভব হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪০৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৫, ২০১৫
এসএস/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।