ঢাকা: আবার দেখা হবে পহেলা অঘ্রায়ণে- এই বার্তার মধ্য দিয়ে শেষ হলো চারুকলার বকুলতলায় দীর্ঘ প্রায় ১৫ ঘণ্টার নবান্ন উৎসব উদযাপন। দুই ভাগে বিভক্ত এ উৎসবে আয়োজন করা হয় নানা লোকজ সঙ্গীত, নৃত্য, কবিতা আবৃত্তি আর আদিবাসী ওয়ানগালা জুম নৃত্যের।
জাতীয় নবান্নোৎসব উদযাপন পর্ষদের আয়োজনে রোববার (১৫ নভেম্বর) সকাল ৭টায় বকুলতলায় শুরু হয় এবারের নবান্ন উৎসব। তবে অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয় সকাল ৯টার দিকে। শিক্ষাবিদ সিরাজুল ইসলাম এটি উদ্বোধন করেন।
বকুলতলায় বাঙালীর হাজার বছরের ঐতিহ্যে লালিত এই প্রাণের উৎসবের শুরু হয় প্রিয়াংকা গোপ’র রাগ সঙ্গীত আর ইফতেখার আলম প্রধানের তবলা বাদনের মধ্য দিয়ে। এরপর ঢাক-ঢোলসহ বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রের তালে লোকজ সঙ্গীত ও নৃত্য পরিবেশনের মধ্য দিয়ে রাত অবধি মুখর হয়ে থাকে চারুকলার বকুলতলা।
রাগ সঙ্গীত দিয়ে শুরু হওয়া বাঙালীর এ প্রাণের উৎসবের সমাপ্তি ঘটে জাতীয় সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে। এর মাঝে পরিবেশিত হয় নানা লোকজ অনুষ্ঠান। উপস্থিতদের মধ্যে বিতরণ করা হয় মুড়ি, মোয়া আর বাতাসা।
উদ্বোধনী অংশে সব থেকে বেশি নজর কাড়ে দলীয় সঙ্গীত। এর মধ্যে ছিলো- ‘বকুল ফুল বকুল ফুল...’, ‘আবার জমবে মেলা বট তলা হাট তলা...’সহ আরও কয়েকটি সঙ্গীত।
আর দ্বিতীয় অংশে নৃত্যের সঙ্গে নানা লোকজ সঙ্গীতে বিমহিত হয়ে পড়েন উপস্থিত সবাই। বকুলতলার অনুষ্ঠান মঞ্চে একের পর এক চলতে থাকে ‘ও ধান ভাঙেরে ঢেকিতে পাড় দিয়া....’, ‘আমার মাঝাইয়া ভাই..সাইজা ভাই কই গেলা রে...’, ‘আমি রবনা রবনা গৃহে..বন্ধু বিনা প্রাণ বাঁচে না....’সহ আরও কয়েকটি লোকজ গান। সেই সঙ্গে চলে নৃত্য শিল্পীদের নৃত্য পরিবেশনা।
উদ্বোধনী অংশে প্রিয়াংকা গোপ’র রাগ সঙ্গীত আর ইফতেখার আলম প্রধানের তবলা বাদনের পর দলীয় নৃত্য, ফরিদা পারভিন ও মাহাবেদ ঘোষের একক সঙ্গীত, কবিতা আবৃত্তি, সমবেত পরিবেশনা, আদিবাসী ওয়ানগালা জুম নৃত্য মুখর হয়ে উঠে চারুকলার বকুল তলা।
এ অংশে রাজশাহীর রঙ্গরস থিয়েটার আলকাপ পরিবেশনের পর চারুকলার বকুল তলা থেকে বের হয় নবান্ন শোভাযাত্রা। এরপর শোভাযাত্রাটি টিএসসি চত্বর ঘুরে আবার বকুল তলায় এসে শেষ হয়। এর মধ্য দিয়ে শেষ হয় উদ্বোধনী অংশ।
এরপর প্রায় ৬ ঘণ্টা বিরতি দিয়ে বিকাল ৪টার দিকে শুরু হয় উৎসবের দ্বিতীয় পর্ব। সিগ্নন্ধা রিতার একক সঙ্গীত দিয়ে শুরু হয় এ পর্ব। একক সঙ্গীতের পর পরিবেশিত হয় দলীয় শিশু নৃত্য। এই নৃত্যের সঙ্গে বাজতে থাকে ঐতিহ্যবাহী গান 'ও ধান ভাঙেরে ঢেকিতে পাড় দিয়া... ঢেকি নাচে আমি নাচি হেলিয়া দুলিয়া.......। ’
এর পর পরিবেশিত হয় লালন গীতি। শিল্পী শায়লা শামিনের কণ্ঠে ‘করিমনা কাজ ছাড়ে না মদনে........। ' মানুষ ভোজলে সোনার মানুষ.......' গান মুগ্ধ করে উপস্থিতদের। এরপর একে একে পরিবেশিত হয় আরও কয়েকটি একক সঙ্গীত ও দলীয় নৃত্য। অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে আবারও নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে পরিবেশিত হয় রাজশাহীর রঙ্গরস থিয়েটার আলকাপ।
তবে এ পর্বে উপস্থিতদের সব থেকে বেশি আকৃষ্ট করে ‘ভালো করিয়া বাজাও গো দোতারা কমলা সুন্দরী নাচে..... ও তুই ভালো করিয়া বাজাও গো দোতারা সুন্দরী কমলা নাচে.....’ গানটির সঙ্গে পরিবেশন করা নৃত্য। এ গানে সবুজ পাড়ের লাল শাড়িতে নৃত্য পরিবেশন করে কিশোরী একদল কমলা।
শেষ দিকে ‘নারী হয় লজ্জাতে লাল..... ফাগুনে লাল শিমুল বোন....এ কোন রঙে রঙ্গীত হলো বাউল মন.....’ গানটি অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করতে যাওয়া দর্শানার্থীদের আবারও বকুলতলায় ফিরিয়ে আনে। অবশ্য এরপর আর বেশি দীর্ঘ হয়নি বকুলতলার নবান্ন উৎসব। শেষ মুহুর্তে সম্মিলিত কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত ‘আমার সোনার বাংলা। আমি তোমায় ভালোবাসি.....’ পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় বাঙালীর প্রাণের নবান্ন উৎসব।
বাংলাদেশ সময়: ০৫১৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৬, ২০১৫
এএসএস/আরএইচ