ঢাকা: রাজধানীর চার অভিজাত এলাকাকে সুরক্ষিত করতে এবার উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। সে লক্ষ্যে এ চার এলাকায় আটশ’ সিসি ক্যামেরা (ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা) বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ডিএনসিসি সূত্র জানায়, সুরক্ষিত করার পরিকল্পনায় চার এলাকার মধ্যে রয়েছে গুলশান, বারিধারা, নিকেতন ও বনানী। শক্তিশালী ও অত্যাধুনিক মানের এসব ক্যামেরা প্রতিটি রাস্তা ও মোড়ে মোড়ে বসানো হবে। চার এলাকার বিভিন্ন পয়েন্টে পয়েন্টেও থাকবে এসব ক্যামেরা। ক্যামেরাগুলো যাতে ভালো করে রাস্তা কাভার করতে সে বিষয়টি মাথায় রেখেই স্থান নির্বাচন করা হবে।
এসবের পাশাপাশি যে জায়গাগুলোতে বেশি লোকজনের আনাগোনা ও ভিড় জমে সেগুলোকে কয়েকটি জোনে ভাগ করা হবে। তারপর চাহিদা অনুযায়ী বসবে সেই ক্যামেরা।
ওই চার এলাকা সিসি ক্যামেরার আওতায় আনার পরে ক্রমান্বয়ে পুরো উত্তর সিটির সব এলাকায়ই সিসি ক্যামেরা বসানো হবে বলে জানা গেছে।
ক্যামেরা কিনতে ব্যয়ের পরিমাণ ধরা হয়েছে ১২ কোটি টাকা। আর এসব অর্থ আসবে বিভিন্ন ব্যাংক, বিমা ও বিত্তশালী ব্যক্তির আর্থিক সহায়তা থেকে।
ডিএনসিসি’র মেয়র আনিসুল হক এ ব্যাপারে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের সঙ্গে কথা বলে তাদেরকে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার জন্য অনুরোধও করেছেন। তার এমন প্রস্তাবে অনেকেই রাজিও হয়েছেন। গুলশান, বনানী, বারিধারা ও নিকেতন সোসাইটি এবং গুলশান ক্লাব এ অর্থ দেবে বলে জানা গেছে। সংসদ সদস্য রহমত উল্লাহও এ খাতে আর্থিক সহায়তা দেবেন।
ডিএনসিসি সূত্রে আরও জানা গেছে, যেসব ক্যামেরা বসানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে সেগুলো অত্যন্ত শক্তিশালী ও আধুনিক। এখন অভিজাত এলাকাগুলোত যেসব ক্যামেরা রয়েছে সেগুলোর চেয়ে হবে ভিন্ন ও ব্যতিক্রম। সিসি ক্যামেরার সঙ্গে সংযুক্ত তার কোনো অপরাধী যদি কেটেও দেন তবুও কাজ করবে সেই ক্যামেরা এবং পাওয়ার চলে যাওয়ার পরও দুই ঘণ্টা সচল থাকবে বলে এগুলোর বৈশিষ্ট্যে উল্লেখ করা হয়েছে।
এছাড়াও প্রতিটি সিসি ক্যামেরার প্রতিরক্ষার জন্য থাকবে অত্যন্ত হেভিওয়েট কাভার। কেউ লাঠি বা হকস্টিক দিয়ে মারলেও তা সহজে ভাঙবে না বা মচকাবে না। এসব ক্যামেরা রাতের আলোতেও চমৎকার ছবি দেবে এবং দূরের কোনো বস্তুকে খুব সহজেই কাছে টেনে নেবে। পরে এসব ক্যামেরায় ধারণ করা ছবি জুম করে দেখলে খুব স্পষ্টভাবে দেখা যাবে বলেও জানা গেছে।
এসব ক্যামেরা মনিটরিং করার জন্য একটি মনিটরিং কক্ষ থাকবে। তবে এসব ক্যামেরা ডিএমপি নাকি ডিএনসিসি তত্ত্বাবধান করবে সে বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এছাড়াও ক্যামেরাগুলো কোন দেশ থেকে আনা হবে তা অর্থের ওপর নির্ভর করছে বলেও জানায় সূত্রটি।
এখন ওই চার এলাকায় মোট ১০০টি সিসি ক্যামেরা রয়েছে। এসব ক্যামেরা বসানোর ফলে ওইসব এলাকার অপরাধ অনেকাংশেই কমে গেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। তবে এবার পুরো এলাকাকে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনতেই তা বৃদ্ধি করে ৯০০টিতে উন্নিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ডিএনসিসি।
অভিজাত এলাকাকে সুরক্ষিত করা ছাড়াও মেয়রের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবে এসব নতুন ক্যামেরাগুলো বসানো হবে। তবে এ সিদ্ধান্ত অর্থ হাতে পেলেই খুব শিগগিরই বাস্তবায়ন করা হবে।
ডিএনসিসি’র এমন উদ্যোগের প্রায় সাত বছর আগে ৬৫ কোটি টাকায় রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ১৫৯টি সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করেছিল পুলিশ। তবে আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় সে উদ্যোগ তেমন আলোর মুখে দেখেনি।
সম্প্রতি গুলশানের একটি হোটেলে সিসি ক্যামেরা বসানোর বিষয়ে বিভিন্ন মহলের সঙ্গে একটি বেঠক অনুষ্ঠিত হয়। মেয়র আনিসুল হক সেই বৈঠকে বলেছিলেন, অভিজাত চার এলাকাকে পুরোপুরি সুরক্ষিত করার কাজ শেষ হলেই পর্যায়ক্রমে পুরো উত্তর সিটিকে এর আওতায় আনা হবে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবি এম এনামুল হক বাংলানিউজকে বলেন, এসব এলাকার মানুষকে নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা দিতেই এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অর্থ হাতে পেলেই এসব সিসি ক্যামেরা বসানো হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১১১৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৬, ২০১৫
এমআইকে/এএসআর