ঢাকা, শনিবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

অজ্ঞাত ব্যক্তিদের নজরদারি

আতঙ্কে শিশু রাকিবের পরিবার

মাহবুবুর রহমান মুন্না, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৬, ২০১৫
আতঙ্কে শিশু রাকিবের পরিবার ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

খুলনা: ‘রাস্তায় বাইর অইতেই ভয় লাগে, তবুও গরিবের সংসার তো চালাইতেই অইবে। যার কারণে ভয় আর আতঙ্ক নিয়া কাজে বের হই।

জানি না কখন কি হয়’।

হতাশা নিয়ে বাংলানিউজের কাছে এমনটিই জানালেন খুলনায় নির্মম নির্যাতনে নিহত শিশু রাকিবের মা লাকি বেগম ও বাবা দিনমজুর নূরুল আলম সর্দার।

তাদের অভিযোগ, অজ্ঞাত পরিচয়ের ব্যক্তিরা পথে-ঘাটে তাদের গতিবিধির ওপর নজরদারি করছেন। যেকোনো সময় তাদের ক্ষতি করতে পারেন ওই ব্যক্তিরা।

যে কারণে গত ১২ নভেম্বর খুলনা সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন বলেও জানান রাকিবের মা-বাবা।

সোমবার (১৬ নভেম্বর) দুপুরে নগরীর টুটপাড়া সেন্ট্রাল রোডের ভাড়ার বাড়িতে গেলে এমন আশঙ্কার কথা জানান লাকি বেগম ও নূরুল আলম সর্দার।

তারা বলেন, ছেলে রাকিব হত্যা মামলায় দুই খুনির ফাঁসির আদেশ হলেও আমরা প্রতিনিয়ত আতঙ্কে ভুগছি। যে কারণে একমাত্র মেয়ে রিমিকে স্কুলে পাঠাতেও ভয় লাগে।

আবেগে আপ্লুত কণ্ঠে রাকিবের মা লাকি বেগম জানান, মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত খুনি শরীফ ও মিন্টু কারাগারে থাকলেও মামলার অপর আসামি খালাসপ্রাপ্ত শরীফের মা বিউটি বেগম কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ায় ভয় আর আতঙ্কে দিনযাপন করছেন তারা।

এর ওপরে রোববার (১৫ নভেম্বর) মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মিন্টু উচ্চ আদালতে আপিল করায় তাদের আতঙ্ক বহুগুণে বেড়ে গেছে বলেও জানান তিনি।

তিনি জানান, ফাঁসির আদেশ ঘোষণার পর তিনদিন তাদের পরিবারের নিরাপত্তা দিয়েছিলো পুলিশ। কিন্তু বর্তমানে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন তারা। প্রশাসনও কোনো নিরাপত্তা দিচ্ছে না।

রাকিবের মা বলেন, বিউটির অনেক টাকা আছে। তিনি যেকোনো মুহূর্তে তার একমাত্র মেয়ে রিমির (৮) ক্ষতি করতে পারেন।

শিশু রাকিবের বাবা নূরুল আলম সর্দার আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, বিউটি খালাস পেয়ে বের হয়ে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র করছেন। আর মিন্টু-শরীফকে বের করার চেষ্টা করছেন। যেকোনো ভাবে খুনিরা বের হতে পারলে তাদের পরিবারের ওপর প্রতিশোধ নিতে পারেন।

শিশু রাকিবের মা ও বাবার আকুতি, কোনোভাবেই যেনো খুনিরা রেহাই না পান। আর যেনো কোনো মায়ের বুক খালি না হয়। তাদের ফাঁসি যেনো দ্রুত কার্যকর হয়।

এদিকে একমাত্র ভাই রাকিবকে হারিয়ে বোন রিমি (৮) শোকে পাথর হয়ে কাগজে রং-পেন্সিল দিয়ে তার নাম লিখে স্মৃতিচারণ করছে। আবার কখনো ভাইয়ের বাঁধানো ছবি নিয়ে ভাইকে দেখছে আর কাঁদছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নগরীর আলোচিত শিশু রাকিব হত্যা মামলার রায়ের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মিন্টু খানের পক্ষে উচ্চ আদালতে আপিল করা হয়েছে।

রোববার (১৫ নভেম্বর) দুপুর ৩টায় সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের আপিল শাখায় এ আবেদন দাখিল করেছেন তার আইনজীবী।

এদিকে হাইকোর্টে খুলনার চাঞ্চল্যকর শিশু রাকিব হত্যা মামলা পরিচালনার জন্য বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থাকে ক্ষমতা অর্পণ করেছেন মামলার বাদী ও রাকিবের বাবা নুরুল আলম সর্দার।

বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার খুলনা জেলা সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট মোমিনুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, বিচারিক আদালতের মতো হাইকোর্টেও রাকিব হত্যা মামলা পরিচালনার জন্য মামলার বাদী রাকিবের বাবা নুরুল আলম বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থাকে ক্ষমতা অর্পণ করেছেন।

তিনি বলেন, রাকিবের পরিবারের ভয় কিংবা আতঙ্কিত হবার কোনো কারণ নেই। তিনি আশা প্রকাশ করেন, উচ্চ আদালতেও খুনি শরীফ ও মিন্টু ফাঁসির আদেশ বহাল থাকবে।

গত ৩ আগস্ট বিকেলে নগরীর টুটপাড়া কবরখানা মোড়ে শরীফ মোটরসের মালিক শরীফ যানবাহনের টায়ারে হাওয়া দেওয়া (কম্প্রেসার) মেশিনের নল ১২ বছরের শিশু রাকিবের মলদ্বারে ঢুকিয়ে হাওয়া দিতে থাকেন। এতে তার পেট ফুলে ফেঁপে যায়। এক পর্যায়ে রাকিব মারা যায়।

পরদিন ০৪ আগস্ট রাকিবের বাবা নূরুল আলম বাদী হয়ে শরীফ, শরীফের সহযোগী মিন্টু খান ও মিন্টুর মা বিউটি বেগমের বিরুদ্ধে সদর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।

২৫ আগস্ট এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এজাহারভুক্ত তিন আসামিকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। গত ০৬ সেপ্টেম্বর খুলনা মহানগর হাকিম আদালত বিচার কাজ শুরুর জন্য মামলাটি মহানগর দায়রা জজ আদালতে পাঠান। মহানগর দায়রা জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক দিলরুবা সুলতানা ০১ অক্টোবর দণ্ডবিধির ৩০২/৩৪ ধারায় আসামিদের বিরুদ্ধে মামলাটি বিচারের জন্য আমলে গ্রহণ করেন। এর মধ্য দিয়ে পৈশাচিক ওই হত্যাকাণ্ডের বিচার শুরু হয়।

গত ০৫ অক্টোবর তিন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করেন আদালত। ১১ থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত মামলার ৩৮ সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। ২৮ অক্টোবর ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৫২ ধারা অনুযায়ী আসামিদের বক্তব্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়।

গত ০১ নভেম্বর যুক্তিতর্ক শুনানি শেষ হওয়ার পর ০৮ নভেম্বর মামলার রায়ের দিন ধার্য করেন বিচারক। রায়ে আসামি শরিফ ও মিন্টুকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ ও বিউটি বেগমকে খালাস দেন আদালতের বিচারক।

বাংলাদেশ সময়: ১৪১৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৬, ২০১৫
এমআরএম/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।