ঢাকা, শনিবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

দুদকের মামলার সিদ্ধান্ত

কম্পিউটারে সনদ বানিয়ে দেড় শতাধিককে প্রাথমিকে চাকরি!

আদিত্য আরাফাত, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৬, ২০১৫
কম্পিউটারে সনদ বানিয়ে দেড় শতাধিককে প্রাথমিকে চাকরি!

ঢাকা: চাকরি প্রার্থীদের অজ্ঞাতে পিতার মুক্তিযোদ্ধা সনদের কপি ফেলে দেওয়া হয়েছে। অফিসে বসে কম্পিউটারে তৈরি করা হয়েছে মুক্তিযোদ্ধা সনদ।

ভুয়া সনদ তৈরি করে জালিয়াতির মাধ্যমে কাউকে মুক্তিযোদ্ধার পোষ্য কোটায়, কাউকে আনসার কোটায় কিশোরগঞ্জে সহকারী শিক্ষক পদে চাকরি পাইয়ে দিয়েছেন জেলাটির তখনকার দায়িত্বরত জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোদাচ্ছের হোসেন।

জাল সনদ বানিয়ে নিজেই চাকরি দিয়েছেন সরকারি এ কর্মকর্তা। ২০০৮-০৯ সালে এ অপকর্মটি করেছেন মোদাচ্ছের।   দুদকের অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মোট ১৫৮ জনকে জালিয়াতি করে ওই সময়ে তিনি চাকরি দিয়েছেন। বিনিময়ে প্রত্যেকের কাছ থেকে ১ থেকে ৪ লাখ টাকা হাতিয়েছেন।

ভয়াবহ এ দুর্নীতি অনুসন্ধানে প্রমাণিত হওয়ায় মামলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক। সোমবার (১৬ নভেম্বর) বিকেলে কমিশন এ জালিয়াতির ঘটনায় মামলার অনুমোদন দেয়।  
মামলায় মোদাচ্ছের ছাড়াও তার দুই সহযোগী অফিস সহকারী আবুল কালাম ও আবদুল হককে আসামি করা হচ্ছে।

জানা গেছে, এ ঘটনায় দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক নেয়ামুল আহসান গাজী বাদী হয়ে শিগগিরই কিশোরগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করবেন।

দুদক সূত্র জানায়, কিশোরগঞ্জ জেলায় প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ পরীক্ষা হয় ২০০৮ ও ০৯ সালে। ২০০৮ সালে মোদাচ্ছের ৭৫ জনকে মুক্তিযোদ্ধার পোষ্যসহ বিভিন্ন কোটার মাধ্যমে সহকারী শিক্ষক পদে চাকরি পাইয়ে দেন। ২০০৯ সালে একই পদে ৮২ জনকে বিভিন্ন কোটায় জালিয়াতি করে চাকরি পাইয়ে দেন। এসব নিয়োগের পর জালিয়াতির ঘটনাটি ফাঁস হলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় মোদাচ্ছেরকে চাকুরিচ্যুত করা হয়। ঘটনা প্রমাণিত হওয়ায় পরে অবশ্য জালিয়াতির মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া ১৫৮ জনকেও চাকরি হারাতে হয়েছে।

দুদকের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, ঘটনাটি ২০০৮ ও ২০০৯ সালের। কিশোরগঞ্জ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের অধীনে ওই জেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দেড় শতাধিক শিক্ষক নিয়োগ করার সিদ্ধান্ত হয়। আবেদন যাচাই-বাছাই শেষে যোগ্য প্রার্থীদের তালিকা পাঠিয়ে দেওয়া হয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদফতরে। পরবর্তীতে লিখিত পরীক্ষা শেষে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিতদের মৌখিক পরীক্ষার জন্য বাছাই করা হয়। সংক্ষিপ্ত তালিকাটি পাঠানো হয় জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ে। সেখানেই শুরু হয় কারসাজি।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোদাচ্ছের হোসেন তার দুই অফিস সহকারীকে নিয়ে শুরু করেন অপকর্ম। নিয়োগ পরীক্ষা সংক্রান্ত সকল কমিটির সদস্য সচিব ছিলেন তিনি।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, মুক্তিযোদ্ধার পোষ্য কোটায় আবেদনকারী চাকরি প্রার্থীদের আবেদনপত্র থেকে মুক্তিযোদ্ধা সনদের কপিগুলো ফেলে দেওয়া হয়। অন্যদিকে সাধারণ কোটায় আবেদনকারী কিছু প্রার্থীর আবেদনপত্রের সঙ্গে যোগ করে দেওয়া হয় কম্পিউটারে তৈরি করা ভুয়া সনদের অনুলিপি। নিজেদের কম্পিউটারে বসে এসব অনুলিপি তৈরি করেন প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার দুই অফিস সহকারী। আবেদনকারীরা অবশ্য এর কিছুই জানতেন না।

পরবর্তীতে নির্দিষ্ট আবেদনকারীদের মুক্তিযোদ্ধার পোষ্য পরিচয় দেখিয়ে তালিকা তৈরি করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদফতরে পাঠান ওই শিক্ষা কর্মকর্তা। সেখান থেকে মুক্তিযোদ্ধার পোষ্য কোটায় এসব চাকরি প্রার্থীকে নিয়োগের অনুমতি দেওয়া হয়। এভাবে ২০০৮ সালে ৭৫ জন সহকারী শিক্ষক, ২০০৯ সালে ৮২ জন সহকারী শিক্ষক ও একজন প্রধান শিক্ষকসহ মোট ১৫৮ জনকে নিয়োগ দেন মোদাচ্ছের হোসেন।

এ জালিয়াতি ও দুর্নীতির অভিযোগে দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক নেয়ামুল আহসান গাজী তাদের বিরুদ্ধে মামলার সুপারিশ করেছেন। তার সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে কমিশন মামলার অনুমোদন দেয়।

এ ঘটনাটি ফাঁস হয়ে যায় ২০১০ সালে। ওই সময় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি মোদাচ্ছের হোসেনকে দোষী সাব্যস্ত করে বরখাস্তের সুপারিশ এবং আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করে। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে অভিযোগটি দুদকে পাঠানো হলে তারই ধারবাহিকতায় সোমবার কমিশন মামলার অনুমোদন দেয়।

বাংলাদেশ সময়: ২০০২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৬, ২০১৫
এডিএ/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।