ঢাকা, শনিবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

রাজধানীতে কমছেই না মশার উপদ্রব

হাসিবুর রহমান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১০৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৭, ২০১৫
রাজধানীতে কমছেই না মশার উপদ্রব প্রতীকী ছবি

ঢাকা: শীতের আগমনে সাধারণত মশার উপদ্রব কমে গেলেও এবার চিত্র ভিন্ন। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় মশার উপদ্রব না কমে বরং বেড়েছে।

ফলে দিনেও বাসা-বাড়িতে মশারি টাঙিয়ে ঘুমাতে হচ্ছে অনেককে। মশার এ উপদ্রবে অতিষ্ঠ ও ক্ষুব্ধ নগরবাসী।

তবে দুই সিটি করপোরেশন ও মশক নিবারণী দফতর কর্তৃপক্ষ বলছে, মশক নিধনে নিয়মিত কাজ করলেও বদ্ধ জলাশয় ও নর্দমার কারণে এ উপদ্রব নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খেতে হচ্ছে। রয়েছে জনবল ও যন্ত্রপাতির সংকটও।

চলতি অর্থবছরে মশক নিধনে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ত্রিশ কোটি টাকা। এর মধ্যে ডিএনসিসি ১৭ কোটি টাকা ও ডিএসসিসি ১৩ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছে।

উত্তর সিটিতে জলাশয় রয়েছে ২১ একর, দক্ষিণে ৩৮২ একর। দুই সিটির অধিকাংশ জলাশয়ই বদ্ধ। এসব জলাশয়ে মশা বংশ বিস্তার করলেও এতে ওষুধ ছিটানোর মতো যন্ত্রপাতি নেই দুই নগর কর্তৃপক্ষের কারোরই। আবার এসব জলাশয় ছাড়াও নগরীর ড্রেনেজ ব্যবস্থাও খুবই নাজুক। যেগুলোতে সহজেই বংশ বিস্তার করছে মশা।

দুই সিটি করপোরেশন ছাড়াও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের মশক নিবারণী দফতর রাজধানীতে মশক নিবারণে কাজ করছে। এ তিন প্রতিষ্ঠানের সব মিলিয়ে মশক নিধনে সাতশ’র মতো জনবল রয়েছে, যা রাজধানীর জনসংখ্যার তুলনায় খুবই অপ্রতুল।

প্রতিদিন সকালে নগরীর বিভিন্ন এলাকার নালা-নর্দমায় ওষুধ ছিটিয়ে লার্ভা (মশার ডিম ও বাচ্চা) নিধন এবং বিকেলে ফগিংয়ের মাধ্যমে উড়ন্ত মশা নিধনের নিয়ম থাকলেও সপ্তাহে একবারও তাদের কার্যক্রম চোখে পড়ে না। আবার কিছু অসাধু ক্রু (ফগার চালক) ও স্প্রেম্যান বরাদ্দকৃত ওষুধ বিক্রি করে দেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

রাজধানীর আজিমপুর, বাড্ডা, মুগদা, বাসাবো, মোহাম্মদপুর, মিরপুর, কামরাঙ্গীরচর, মহাখালীসহ বিভিন্ন এলাকার সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ বছর অন্যান্য বছরের তুলনায় মশার উপদ্রব না কমে বরং অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে।

এছাড়া এ বছরের অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে চারজনের। ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজাসহ দুই হাজার নগরবাসী।

আজিমপুর কোয়ার্টারের বাসিন্দা তানহা ইয়াসমিন বাংলানিউজকে বলেন, মশার যন্ত্রণায় রাতে ঘুমানো যায় না, কয়েল জ্বালিয়েও কাজ হয় না। দুই বছরের বাচ্চাকে দিনের বেলায়ও ঘুম পাড়াতে হয় মশারির মধ্যে।

দক্ষিণ মুগদার বাসিন্দা সাজ্জাদ আহমেদ ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, সিটি করপোরেশনের লোকজন প্রতিদিন আসা তো দূরের কথা, গত ছয় মাসের মধ্যে এ এলাকায় তাদের কোনো লোক দেখিনি। তারা আছেন ভিআইপি এলাকা নিয়ে আর সরকারি অর্থ লোপাটের ধান্দায়।
 
ডিএসসিসি’র প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, অক্টোবর মাসে একাধিক ক্রাশ প্রোগ্রাম চালানোর পরও বদ্ধ জলাশয় ও নর্দমার কারণে মশার উপদ্রব নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি।

পর্যাপ্ত যানবাহনের অভাবে মাঠ পর্যায়ের কর্মকাণ্ড তদারকিতেও ঘাটতি রয়েছে বলে তিনি স্বীকার করেন।

অতিরিক্ত মশা উপদ্রুত অঞ্চলগুলো চিহ্নিত ও বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে শ্রেণীবিন্যাস করে ডিএসসিসি শিগগিরই মশক নিধন কার্যক্রম পরিচালনা করতে যাচ্ছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

ডিএনসিসি’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিএম এনামুল হক বাংলানিউজকে বলেন, নিয়মিত মশক নিধন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। তবে সিটি করপোরেশনের আওতা বড় হওয়ায় এবং জনবল কম থাকায় একই এলাকায় সপ্তাহে দুই বারের বেশি কাজ করা সম্ভব হয় না।

বাংলাদেশ সময়: ০০৫৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৭, ২০১৫
এইচআর/আরএম/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।