বরিশাল সিটি করপোরেশনের পশ্চিমাংশ এখনো অন্ধকারে। সিটি গঠনের পর ১৩ বছর পেরিয়ে গেলেও জনপদটি পশ্চাৎপদই রয়ে গেছে।
বরিশাল থেকে ফিরে: নানামুখী উন্নয়নের জন্য বরিশাল সিটি করপোরেশনকে (বসিক) মডেল সিটি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তবে এটা যেমন মিথ্যা নয়, তেমনি এর নানা অব্যবস্থাপনাও প্রতিষ্ঠিত। কেননা, এ সিটির সকল বাসিন্দাদের কাছ থেকে ট্যাক্স আদায় করা হলেও উন্নয়ন হয়েছে কেবল মূল শহরকেন্দ্রিক।
বরিশাল সিটির ৩০টি ওয়ার্ডে প্রায় ছয় লাখ নাগরিক বসবাস করেন। সকল ওয়ার্ডের সকল বাড়ি থেকেই ট্যাক্স আদায় করে কর্তৃপক্ষ। অথচ উন্নয়ন হয় শুধু মূল শহরে। আবার এই ট্যাক্স আদায়ের ক্ষেত্রেও রয়েছে নানা ‘অনিয়ম’। এমন অভিযোগও উঠেছে যে, গোয়ালঘরের জন্যও ট্যাক্স দিতে হয় নাগরিকদের।
সরেজমিনে নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বরিশাল সিটির ২৩ নম্বর থেকে ৩০ নম্বর ওয়ার্ড পর্যন্ত আটটি ওয়ার্ডের জনসাধারণ নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত। তাদের দেওয়া অর্থে উন্নয়ন হচ্ছে কেবল বরিশালের মূল শহরে।
বঞ্চিত ওই আটটি ওয়ার্ডের জনসংখ্যা প্রায় এক লাখ। কিন্তু এসব নাগরিকদের জন্য নেই পানির সুব্যবস্থা, ড্রেনেজ সিস্টেম ও স্যুয়ারেজ লাইন। এছাড়া বিদ্যুতের সংযোগও নেই।
কিন্তু এ নিয়ে বেশ কয়েকবার অভিযোগ করেও কোনো ফল পাননি সাধারণ মানুষ। বর্তমান মেয়র কেবল তাদের আশ্বাস দিয়েছেন।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, ২০০২ সালে সিটি করপোরেশন হওয়ার পর ১৩ বছর কেটে গেলেও জীবন-মানের কোনো পরিবর্তন হয়নি। মহল্লাগুলোর ভেতর দিয়ে মূল রাস্তা পাকা হওয়া ছাড়া আর কোনো উন্নয়ন হয়নি। এখনো বাঁশের সাঁকো বা ভাঙ্গা ঝুঁকিপূর্ণ লোহার পুলের ওপর দিয়েই তাদের চলাচল করতে হয়।
হরিনাফুলিয়ার (২৬ নম্বর ওয়ার্ড) বাসিন্দা নরেন্দ্র সরকার। অভিযোগের সুরে বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমার একটি মাত্র গরু। তার জন্য একটা গোয়ালঘর আছে। কিন্তু করপোরেশনের লোক এসে সেই গোয়ালঘরের ওপর ৭শ’ টাকা ট্যাক্স বসাইয়া দিছেন। কিন্তু শুধু ট্যাক্সই নিচ্ছে। আমার গোয়ালঘরে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা হয়নি’।
এলাকাবাসী জানান, বছরে শতাংশ প্রতি ৫০ টাকা হারে জমির খাজনা দিতে হয়। এছাড়া হোল্ডিং ট্যাক্স নেওয়া হয় ৩শ’ টাকা থেকে ১২শ’ টাকা পর্যন্ত। কিন্তু এ ট্যাক্স আদায়ের বিপরীতে পরিসেবা কিছুই নেই।
টিয়াখালীর বাসিন্দা হারুন-অর রশিদ। কয়েক বছর আগে বর্ডার গার্ড অব বাংলাদেশ (বিজিবি) থেকে অবসর নিয়ে বর্তমানে বাড়িতেই বসবাস করেন। তিনি বলেন, ‘সকল ধরনের ট্যাক্সই আমরা দিই। অথচ আমাদের জন্য কোনো সেবা নেই। সেটা দেখারও কেউ নেই’।
পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত সদস্য প্রিয়লাল সরকার বলেন, নগরের নাগরিক সুবিধা শুধু মূল শহরের দিকেই। আমাদের উন্নয়নের জন্য কারো ভাবনা নেই।
বসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রনজিৎ কুমার দাশ বাংলানিউজকে বলেন, গোয়ালঘরের জন্য ট্যাক্স আদায় করার কথা নয়। এমনটি হয়ে থাকলে আমরা খোঁজ নিয়ে দেখবো। তবে এ কথা সত্যি, ওই আটটি ওয়ার্ডে ট্যাক্স আদায় করা হলেও নাগরিক সেবাগুলো এখনো পৌঁছেনি। মূল শহরের উন্নয়নের জন্যই ওইসব এলাকায় উন্নয়ন করা যায়নি। কিন্তু জার্মানির একটি প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় একটি উন্নয়ন প্রকল্প শিগগিরই হাতে নিচ্ছি। আশা করি, ওই প্রকল্পটি হয়ে গেলে অবহেলিত পশ্চিমাংশের ওয়ার্ডগুলোর উন্নয়ন হবে।
২০০২ সালের ২৫ জুলাই বরিশাল পৌরসভা থেকে সিটি করপোরেশন হিসেবে যাত্র শুরু করে। যা মোট ৩০টি সাধারণ ওয়ার্ড ১০টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত। প্রায় ৬ লাখ লোকের এ সিটির আয় আয়তন ২৪ বর্গকিলোমিটার।
সিটি গঠন হওয়ার পর ২০০৩ সালে বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট মো. মজিবুর রহমান সারওয়ার, ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের নেতা শওকত হোসেন হিরণ (প্রয়াত) মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হন। সর্বশেষ ২০১৩ সালের নির্বাচনে বিএনপির থেকে জয়ী হয়ে মো. আহসান হাবীব কামাল বর্তমানে মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৪৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৭, ২০১৫
ইইউডি/এএসআর
** খুঁটি আছে, বিদ্যুৎ নেই!
** ৮টি ওয়ার্ডে বাঁশের সাঁকোই ভরসা!
জাতীয়
বসিক, পর্ব-৩
ট্যাক্স আছে, সেবা নেই
ইকরাম-উদ দৌলা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।