ঢাকা: রাজধানীর থানাগুলোতে বা আশেপাশের এলাকায় পর্যাপ্ত সংখ্যক ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা থাকলেও অপরাধ ঘটার সময় নজর থাকে না দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের। যার ফলে তাৎক্ষণিকভাবে অপরাধ দমন আর অপরাধীকে ধরতে পারেন না তারা।
তবে আলোচিত হত্যাকাণ্ড থেকে শুরু করে যেকোনো অপরাধ ঘটার পরে সংশ্লিষ্ট থানায় শুরু হয় নানা তোড়জোড়। দেখা হয় সিসি ক্যামেরায় থাকা রেকর্ডিং। কিছু কিছু ক্ষেত্রে অপরাধীকে শনাক্ত করা হলেও অপরাধীদের আটক করতে ব্যর্থ হচ্ছে পুলিশ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সিসিটিভি মনিটরিং করে অপরাধ সংঘটনের সময় তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে পারলে অপরাধীদের ধরতে অনেক সহজ হতো।
পুলিশ কর্মকর্তারা অবশ্য বলছেন, থানায় দায়িত্বরত একজন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা যেমন ব্যস্ত থাকেন, তেমনি যারা ডিউটিতে থাকেন তাদের ব্যস্ততাও কম নয়। এ কারণে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করাও সম্ভব নয়।
ডিএমপি থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, রাজধানীর ৪৯ থানা ও থানা সংলগ্ন এলাকায় সর্বমোট ৬শ’ ৫টি সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। সেগুলোর মধ্যে রমনা বিভাগের থানাগুলোতে ৮০টি, ওয়ারি বিভাগের থানাগুলোতে ৯২টি, লালবাগ বিভাগের থানাগুলোতে ৪৮টি, উত্তরা বিভাগের থানাগুলোতে ৬৪টি, মতিঝিল বিভাগের থানাগুলোতে ৮৫টি, মিরপুর বিভাগের থানাগুলোতে ৮৯টি, তেজগাঁও বিভাগের থানাগুলোতে ৬০টি ও গুলশান বিভাগের থানাগুলোতে ৮৭টি ক্যামেরা রয়েছে। কিন্তু ক্যামেরা থাকলেও নেই সেসবের সার্বক্ষনিক মনিটরিং।
রোববার (১৫ নভেম্বর) রাজধানীর মিরপুর থানায় গিয়ে দেখা গেছে, ঘটে যাওয়া ঘটনা, বিভিন্ন মামলাসহ নানাবিধ সমস্যা নিয়ে আসা আগন্তকদের সঙ্গে কথা বলছেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ভূঁইয়া মাহবুব হাসান। তার কক্ষেই সিসি ক্যামেরার স্ক্রিন। কিন্তু মনিটরিং করা তো দূরের কথা ভুলেও মনে হয় ওই স্ক্রিনের দিকে তাকাচ্ছেন না তিনি। এর অবশ্য কারণও রয়েছে। থানাকেন্দ্রিক সব ধরনের সমস্যা তাকেই তদারকি করতে হচ্ছে। তাই আলাদা করে সিসি ক্যামেরা মনিটরিং করাও তার জন্যও কঠিন। প্রায় ১ ঘণ্টা সেখানে বসে থেকেও একই চিত্র দেখা গেলো।
এ থানায় মোট ২০টি সিসি ক্যামেরা থাকলেও বর্তমানে ১৬টি অ্যাকটিভ রয়েছে বলে জানান ওসি মাহবুব হাসান । এসবের মনিটরিং কে করেন জানতে চাইলে তিনি বললেন, মূলত আমিই মনিটরিং করে থাকি। অন্য যারা মনিটরিং এর দায়িত্বে আছেন তারাও করেন। কিন্তু বাস্তবে অন্য কোনো পুলিশ সদস্যকে সিসি ক্যামেরা মনিটরিং করতে দেখা গেলো না।
রমনা মডেল থানায় এসে দেখা গেলো সেখানকার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মশিউর রহমানের কক্ষটি তালাবদ্ধ। ডিউটি অফিসারের কক্ষে যে সিসি ক্যামেরা চলছে সেটার দিকে নজরদারি নেই কোনো পুলিশ সদস্যের।
এ থানায় সিসি ক্যামেরা মনিটরিং কে করেন জানতে চাইলে ডিউটি অফিসার শফিক বলেন, আমরাই করছি। কিন্তু মামলা, জিডি, অভিযোগ নিয়ে যে ব্যস্ত থাকতে হয় তাতে দিনের সবটা সময় মনিটরের দিকে চোখ রাখা সম্ভব নয়।
কিছুক্ষণ পর সেখানে উপস্থিত হন থানার ওসি মশিউর রহমান। এ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, থানা বা থানার আশেপাশে যে ক্যামেরা রয়েছে তার সবগুলোই আমার এখানেই মনিটরিং করা হয়। এছাড়াও আমার অবর্তমানে ডিউটি অফিসারের কক্ষেও মনিটরিং এর ব্যবস্থা রয়েছে।
ব্যস্ততার কারণে তো সবসময় মনিটরিং করা সম্ভব হয় না, তাহলে সার্বক্ষণিক মনিটরিং এর জন্য কাউকে নিয়োগ করা প্রয়োজন আছে কি? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তা তো প্রয়োজন আছেই। সার্বক্ষণিক মনিটরিং এর জন্য কাউকে রাখা হলে যেকোনো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড আমাদের চোখ এড়ানোর কথা নয়। তাৎক্ষণিকভাবে অপরাধীদের আটক করতে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করা সম্ভব।
ঠিক একই চিত্র দেখা গেলো শাহবাগ থানায়। যে থানা থেকে কিছুটা দূরত্বেই অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছিলো। এছাড়া মনিটরিংয়ের অভাবে পয়লা বৈশাখের সন্ধ্যায় নারীদের শ্লীলতাহানি ঠেকাতে পারেনি পুলিশ।
রমনা জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) শিবলী নোমান বলেন, সতর্কতার সঙ্গেই থানাগুলোতে সিসি ক্যামেরা তদারকি করা হয়। অনেক সময় ব্যস্ততার কারণে হয়তো কিছু ঘটনা চোখ এড়িয়ে যায়। তারপরও সিসি ক্যামেরা মনিটরিং এর জন্য সার্বক্ষণিক একজনকে নিয়োগ দেওয়া হলে সেটা আমাদের জন্য খুব ভালো হয়। এতে করে অপরাধীদের পালিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কমে আসবে।
ঢাকা মেট্রোপলিট্রন পুলিশের (মিডিয়া) উপ-কমিশনার মুনতাসিরুল ইসলাম বলেন, রাজধানী শহরের বিভিন্ন এলাকায় থাকা সিসি ক্যামেরাগুলো মনিটরিং এর জন্য কন্ট্রোল রুমে জনবল নিয়োগ করা আছে। ওসিরা সাধারণত থানার সিসি ক্যামেরা মনিটরিং করে থাকেন। সেক্ষেত্রে তাদের পক্ষে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা সম্ভব হয়ে ওঠে না।
তিনি আরো জানান, যখন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বেড়ে যায় তখন কন্ট্রোল রুমের সিসি ক্যামেরার মনিটরিং আরো জোরদার করা হয়। থানাগুলোতে থাকা মনিটরেও সার্বক্ষণিক রেকর্ড রাখা হয়। যার ফলে আমরা ভিডিও ফুটেজ দেখে আসামি শনাক্ত করতে পারি।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৫২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৭, ২০১৫
জেডএফ/এএসআর