ঢাকা: ‘ইব্রাহীম ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তার আয়ের টাকা দিয়েই চলতো আমাদের সাজানো সংসার।
তাই মেয়ে ইরা (৬) ও ছোট ছেলে পরাগের (২) পড়ালেখা ও সংসার চালাতে সরকারে কাছে একটি চাকুরির আবেদন জানিয়েছেন রাজধানীর দারুসসালাম থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) নিহত ইব্রাহীম মোল্লার স্ত্রী খায়রুন্নেসা।
পুলিশ সদর দফতরে বাংলানিউজজের সঙ্গে আলাপচারিতায় খায়রুন্নেসা বলেন, ‘ইব্রাহীম মোল্লা গাবতলী চেকপোস্টে দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত হন। টেলিভিশনের সংবাদ দেখে আমি দ্রুত ঘটনাস্থলে যাই’।
‘দারুস সালাম থেকে গাবতলীতে যাচ্ছি। কিন্তু রাস্তা যেন শেষ হচ্ছিল না। পরে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে ডাক্তার মৃত বলে ষোষণা করেন। ডাক্তারের কথা শুনে মনে হচ্ছিলো যেন মাথার উপর আকাশ ভেঙ্গে পড়েছে’।
তিনি বলেন, ‘প্রায় এক মাস হলো তিনি আমার পাশে নেই। দু’সন্তানও তাদের বাবার জন্য কান্নাকাটি করে। তারা বাবাকে দেখতে চায়। ছোট বাচ্চা বোঝে না যে, তার বাবা আর কোনোদিন ফিরে আসবেন না’।
খায়রুন্নেসা বলেন, ‘আমরা দু’সন্তান নিয়ে দারুসসালামেই বসবাস করতাম। তিনি নিজের সংসার চালানোর পাশাপাশি তার বাবা- মাকেও টাকা পাঠাতেন। দেখাশোনা করতেন। বাগেরহাটে কচুয়ার পালপাড়াতে আমার শ্বশুর-শাশুড়ি বসবাস করেন’।
‘শুধু তাই নয়, অল্প বেতনের টাকা থেকে কিছু টাকা দিয়ে এক বোনের সংসারও চালাতেন ইব্রাহীম। বোন-জামাই মারা যাওয়ার পর থেকে দুই ভাগ্নে-ভাগ্নির লেখাপড়ার খরচও দিতেন তিনি।
নিহত ইব্রাহিমের স্ত্রী বলেন, ‘আইজিপি স্যার পাঁচ লাখ টাকা আর্থিক অনুদান দিয়েছেন। এ টাকা আমি ব্যাংকে রাখবো। এ টাকা দিয়ে দু’সন্তানকে পড়াশোনা করাবো’।
সরকারের কাছে আবেদন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সরকার যেন আমার জন্য একটা চাকরির ব্যবস্থা করে। চাকরি করে আমি সংসার ও বাচ্চাদের ভবিষ্যৎ গড়তে চাই’।
গত ২২ অক্টোবর গাবতলীর চেকপোস্টে দায়িত্ব পালনকালে ছুরিকাঘাতে নিহত হন দারুসসালাম থানার এএসআই ইব্রাহীম মোল্লা। তিনি বাগেরহাট জেলার কচুয়া পালপাড়া গ্রামে বাবা আব্দুস সাত্তার মোল্লার ছেলে।
ইব্রাহীম মোল্লার জন্ম ১৯৮৪ সালের ২ এপ্রিল। তিনি বাগেরহাটের গোয়ালমাঠ রশিদ লাল উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ২০০১ সালে এসএসসি পাস করেন। পরে ২০০৩ সালের ২০ নভেম্বর বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে কনস্টেবল পদে যোগদান করেন।
সোমবার (১৬ নভেম্বর) পুলিশ সদর দফতরে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে গত তিন মাসে দায়িত্ব পালনকালে নিহত ১৪ পুলিশ সদস্যের পরিবারকে আর্থিক অনুদান ও শোকবার্তা প্রদান করেন পুলিশের মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক। এ অনুষ্ঠানেই কথা হয় খায়রুন্নেসার সঙ্গে।
বাংলাদেশ সময়: ১১৫৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৬, ২০১৫
এনএ/এসজেএ/এএসআর