ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বিচ্ছিন্নতাবাদ মোকাবেলায় বাংলাদেশের সহযোগিতা চায় ভারত

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৭, ২০১৫
বিচ্ছিন্নতাবাদ মোকাবেলায় বাংলাদেশের সহযোগিতা চায় ভারত

ঢাকা: ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদ মোকাবেলায় বাংলাদেশের সহযোহিতা চায় ভারত। মঙ্গলবার (১৭ নভেম্বর) বাংলাদেশ ও ভারতের স্বরাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের ১৭তম বৈঠকে এ সহযোগিতা চেয়েছে দেশটি।

পাশাপাশি সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় যৌথ কার্যক্রমে সম্মত হয়েছে দুই দেশ।
  
এছাড়া সীমান্তে উত্তেজনা ও হত্যা বন্ধ, অনুপ্রবেশ রোধ, অমীমাংসিত সীমান্ত সমস্যা নিরসন, মাদক প্রতিরোধ, নারী ও শিশু পাচার রোধসহ নানা বিষয়ে একমত হয়েছে দুই দেশ। স্বরাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের এ বৈঠকে নেওয়া বিভিন্ন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে দু’টি কৌশলপত্র স্বাক্ষর করা হবে দুই দেশের পক্ষে।
 
ভারতের পক্ষ থেকে বৈঠকে জানানো হয়, ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অব আসাম (উলফা), গারো ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মিসহ (জিএনএলএ) ২০টি বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপ বাংলাদেশে সক্রিয় রয়েছে। বাংলাদেশের মৌলভীবাজার ও ভারতের ত্রিপুরায় এরা সক্রিয়। এ বিষয়ে ভারত আগাম তথ্য দিয়েও সহযোগিতাও করতে চায়। তবে বাংলাদেশের সহযোগিতায় তারা সন্তুষ্ট। এ বিষয়ে বাংলাদেশের পক্ষে প্রেস ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোজাম্মেল হক খান বলেন, বাংলাদেশে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের কোনো ঘাঁটি বা আস্তানা নেই।
 
গত সোমবার (১৬ নভেম্বর) ঢাকায় সোনারগাঁও হোটেলে দুই দিনব্যাপী বাংলাদেশ ভারতের স্বরাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকের সূচনা হয়। প্রথমদিন জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে নির্ধারিত হয় দুই দেশের আলোচ্য বিষয় চুড়ান্ত করার তালিকা।

মঙ্গলবার (১৭ নভেম্বর) সকালে সচিব পর্যায়ের মূল বৈঠক শুরু হয়। এ বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোজাম্মেল হক খান এবং ভারতের পক্ষে দেশটির স্বরাষ্ট্র সচিব রাজীব মেহর্ষি নেতৃত্ব দেন। উপস্থিত ছিলেন দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর প্রধান ও  উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
 
বিচ্ছিন্নতাবাদ ও সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলা
স্বরাষ্ট্র সচিব বলেন, ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী কোনো আস্তানা নেই বাংলাদেশে, তৎপরতাও নেই। তারপরেও আমি বলবো, এগুলো ভিন্নভাবে থাকে। সেগুলোর বিষয়ে আমরা সচেতন আছি। ভারতের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তারা কোনো তথ্য পেলে তারা আমাদের জানাবে।
 
সচিব বলেন, আমার মনে হয়, পারস্পরিক সমঝোতার মাধ্যমে, ইনটেলিজেন্স শেয়ারিং এর মাধ্যমে, এনফোর্সের মাধ্যমে যেকোনো ধরনের সন্ত্রাসবাদ ও বিচ্ছিন্নতাবাদের বিরুদ্ধে একমত এবং একাত্ম হয়ে আছি আমরা। যেকোনো সমস্যা সমাধানের জন্য আমরা প্রস্তুত রয়েছি। আমরা আশা করি, আমরা যে আলোচনা করেছি, যে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, তাতে উভয় দেশের জন্য সেটি লাভজনক হবে।
 
সীমান্তে হত্যা বন্ধে শূন্যতে সম্মতি
বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে সীমান্তে হত্যা বন্ধে ভারতের সহযোগিতা চায় বাংলাদেশ। এ ইস্যুতে উভয় দেশ সম্মত হয়েছে। বাংলাদেশ জানিয়েছে, ২০১৫ সালে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিএসএফ ৩৪ বাংলাদেশিকে হত্যা করেছে। এটি বন্ধের আহ্বান জানানো হয়। অপরদিকে ভারতীয় ৮ জনকে হত্যা করা হয়েছে সীমান্তে। এ বিষয়ে দুই দেশের সম্মতিতে সীমান্তে হত্যাকাণ্ড শূন্যে নামিয়ে আনতে হবে।
 
এ বিষয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশের পক্ষে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোজাম্মেল হক খান বলেন, সীমান্তে হত্যাকাণ্ড যেন শূন্যের কোঠায় নেমে আসে সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আমাদের টার্গেট সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা এবং ভারত কর্তৃপক্ষ এতে একমত পোষণ করেছে। তারাও আমাদের সঙ্গে আন্তরিকভাবে কাজ করবে বলে জানিয়েছেন।
 
মোজাম্মেল হক খান বলেন, সীমান্তে যেন উত্তেজনার সৃষ্টি না হয়, সেজন্য দুই দেশের নাগরিকদের আমাদের সচেতন ও শিক্ষিত করতে হবে। তারা যাতে করে তাদের সীমান্ত ক্রস না করেন, আন্তর্জাতিক নিয়ম-শৃঙ্খলা মেনে চলেন। তাহলে আমার মনে হয় যে, বিএসএফ এবং বিজিবি’র দায়িত্ব পালন সহজ হবে। এ ধরনের কিলিং ইনসিডেন্স আমাদের দেশে ঘটবে না।
 
সীমান্ত কিলিং বন্ধ হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র সচিব বলেন, সীমান্তে কোনো ধরনের কিলিং হবে না। কিন্তু একটা কথা বলতেই হবে। আমাদের লোকজন যদি আন্তর্জাতিক কিছু নিয়ম কানুন না মানেন, সেখানে যদি কোনো আপত্তিকর কোনো কিছু ঘটান, সেক্ষেত্রে  হয়তো এ ধরনের কিলিং হোক আর ফায়ারিং হোক, বিষয়গুলো তখন কনসিকুয়েন্স হিসেবে আসে। কিন্তু তারা যেটি আমাদের বলেছেন, আমাদের লোকজন যদি কোনো ধরনের অনৈতিক কাজ না করে, ডেসপাস না করে তাহলে এটি জিরো লেভেলেই থাকবে। কখনও বাড়বে না।
 
একই কাজ ভারতীয়রাও করেন কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, গত এক বছরের আটজন ভারতীয় নাগরিক সীমান্ত এলাকায় মারা যান। তবে তারা বিজিবি’র গুলিতে মারা যাননি বলে জানান উপস্থিত বিজিবি প্রধান আজিজ আহমেদ।
 
মাদক প্রতিরোধ
সচিব পর্যায়ের এ বৈঠকে মাদক চোরাচালানে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ। ভারতকে জানানো হয়, বাংলাদেশ মাদক উৎপাদন করে না।

এ বিষয়ে মোজাম্মেল হক খান বলেন, ড্রাগের বিষয়ে আমরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছি। আমরা জানি, বাংলাদেশ কখনই মাদক উৎপাদনকারী দেশ না। কিন্তু তারপরও পাচার হয়। আমরা এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি ভারতের।
 
বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র সচিব জানান, ভারত ফেনসিডিল তৈরি করে, এটা তাদের জন্য একটি ড্রাগ। কিন্তু আমরা মনে করি, এটি একটি মাদক। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ আমাদের উদ্বেগের বিষয়ে তারা নিজেদের সম্মতি জানিয়েছে এবং আমাদের সঙ্গে একমত হয়েছে। তারা এ ব্যাপারে আরো আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করবে বলে বৈঠকে সম্মত হয়েছে।
 
নারী ও শিশু পাচার
বৈঠকে নারী ও শিশু পাচার প্রতিরোধে আলোচনা হয়েছে। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র সচিব মোজাম্মেল হক খান বলেন, শিশু, নারী ও অন্যান্য ট্রাফিকিং এর যে ঘটনা আছে, কিছু মামলা আছে সেগুলো নিয়ে কথা হয়েছে।
 
তিনি জানান, আমাদের জেলে কিছু ভারতীয় নাগরিক আছেন, তাদের দেশেও আমাদের নাগরিক আছেন। বন্দিদের যাতে তাড়াতাড়ি নিজ দেশে ফিরিয়ে দিতে পারি এবং নিতে পারি সে ব্যাপারে আন্তরিকভাবে আলোচনা হয়েছে। সমুদ্রসীমায় যাতে বিদেশি ট্রলার আসতে না পারে, যেন ট্রাফিকিং এর রুট না হয়- এ ব্যাপারেও আমরা ভারতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি।
 
অনুপ্রবেশ
বাংলাদেশের পক্ষে  ভারতকে জানানো হয়  বিএসএফ অনেক সময় সীমান্ত  ক্রস করে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়ে। বিষয়টি রোধে ভারতকে আহ্বান জানানো হয় বৈঠকে। ভারত এ বিষয়ে সতর্ক থাকার বিষয়ে একমত পোষণ করেছে।
 
অনুপ্রবেশ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র সচিব বলেন, ভারতীয় জেলেরা বাংলাদেশের জলসীমানায় ঢুকে যান, সেগুলো আমরা সুনির্দিষ্টভাবে বলেছি। তারা আমাদের কথা স্বীকার করেছেন এবং তারা সতর্ক অবস্থায় থাকবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।
 
বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন ফিরবেন কী?
বিএনপি নেতা সালাউদ্দিনকে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, সুনির্দিষ্ট কোনো নেতা বা ব্যক্তির নাম বলা হয়নি। যারা আছেন, তাদের আনার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
 
বৈঠক সফল
বাংলাদেশ ও ভারতের স্বরাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের ১৭তম বৈঠক সফল ও সন্তোষজনক হয়েছে বলে প্রেস ব্রিফিংয়ে জানিয়েছেন বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোজাম্মেল হক খান।
 
তিনি বলেন, ১৯৭৪ সালের সীমান্ত চুক্তির বাস্তবায়ন হয়েছে এ বছর। আমরা অনুপ চেটিয়াকে দেশে পাঠিয়েছি, নুর হোসেনকে ফিরিয়ে এনেছি। ১৯৭৪ সালের সীমান্ত চুক্তির আলোকে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তি করে ভারত-বাংলাদেশ। এ চুক্তির আওতায় রাজনৈতিক বন্দিসহ সব ধরনের বন্দি হস্তান্তরের সুযোগ সৃষ্টি হয়।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৭, ২০১৫
এসএমএ/এএসআর


** সন্ত্রাসবাদ দমনে তথ্য আদান-প্রদানে ঐকমত্য
** ভারতের কোনো বিচ্ছিন্নতাবাদী বাংলাদেশে নেই
** জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক শেষ, সিদ্ধান্ত-চুক্তি মঙ্গলবার
** ঢাকায় শুরু হচ্ছে বাংলাদেশ-ভারত স্বরাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।