ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

মাগুরায় কাত্যায়নী পূজা শুরু

রূপক আইচ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৭, ২০১৫
মাগুরায় কাত্যায়নী পূজা শুরু ছবি : বাংলানিউজটোয়েটিফোর.কম

মাগুরা: মঙ্গলবার(১৭ নভেম্বর) দুপুরে ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে ঐতিহ্যবাহী কাত্যায়নী পূজা। হিন্দু সম্প্রদায়ের পূজা হলেও এটি মাগুরার ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সার্বজনীন প্রাণের উৎসবে রূপ নিয়েছে।

এ উৎসব উপলক্ষে ইতোমধ্যেই সারা শহর সেজেছে বর্ণিল সাজে।

শহরের বিভিন্ন স্থানে তৈরি করা করা হয়েছে দৃষ্টি নন্দন গেট, প্যান্ডেল, মন্দিরসহ গোটা শহরে তৈরি করা হয়েছে আলোকসজ্জা। মণ্ডপগুলো সাজানো হয়েছে প্রাচীণ ইতিহাস এবং ঐতিহ্যের স্থাপত্য কলার আদলে।

জেলায় এ বছর জেলায় মোট ৬৮টি মণ্ডপে কাত্যায়নী পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তবে, পূজার মূল আকর্ষণ থাকবে পৌরসভা এলাকার জামরুল তলা, নতুনবাজার, ছানার বটতলা, বাটিকাডাকা, সাতদোহা, নিজনান্দুয়রী ও পারনান্দুয়ালীসহ শহরের ১২টি মণ্ডপে। এ কারণে শহরকে ঘিরে জেলা ও পুলিশ প্রশাসন ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থ নিয়েছে।

প্রতিবছর শারদীয় দুর্গা পূজার একমাস পরেই জাঁকজমকপূর্ণভাবে মাগুরাতে এই পূজা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। আগামী ২১ নভেম্বর ৫দিনব্যাপী এ পূজা শেষ হলেও শহরের নতুন বাজার ও ছানার বচতলায় মেলা চলবে আরও ১০ দিন। যেখানে থাকবে বিভিন্ন ধারনের ফার্নিচারসহ নানা সামগ্রী পাশপাশি গ্রামীণ ঐতিহ্যের নানা আয়োজন। দেশের দূর-দূরান্ত থেকে আসা ব্যবসায়ীরাও এ মেলায় অংশ নিতে ইতোমধ্যেই পসরা সাজিয়ে বসেছে।

মাগুরা জেলা কাত্যায়নী পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি পংকজ কুণ্ডু বাংলানিউজকে জানান,  ব্রিটিশ আমল থেকে শহরে পারনান্দুয়ালি এলাকার জনৈক সতীশ মাঝি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম এ পূজা শুরু করেন। পেশায় তিনি ছিলেন মুদি দোকানি। সেই থেকেই জেলার মানুষের অন্যতম উৎসবে পরিণত হয়েছে এই পূজা। ৮০ দশকে এ পূজা কেবল মাগুরা শহরের ছানার বটতলা, নিজনান্দুয়ালি, নতুন বাজার, বাটিকাডাঙ্গা এবং জামরুল তলার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল।

কিন্তু গত দুই যুগে এর ব্যাপ্তি যেমন বেড়েছে সংখ্যাও বেড়েছে অনেক। যার আয়োজন হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান উৎসব হিসেবে পরিচিত দুর্গা পূজার আমেজকেও ছাড়িয়ে গেছে।

শাস্ত্র মতে, দ্বাপর যুগে শ্রীকৃষ্ণের জন্মের আগে গোপবালারা শ্রীকৃষ্ণকে ঈশ্বর, বন্ধু, স্বামী, পুত্র হিসেবে আরাধনা করতেন। তাদের এক মাসব্যাপী আরাধনা সে সময় কাত্যায়নী পূজা হিসেবে চিহ্নিত হতো। যার সময়কাল ছিল কার্তিক ও অগ্রহায়ণ মাস। প্রতিমা স্থাপন থেকে শুরু করে দূর্গাপূজার আদলেই সবকিছু হতো। তবে, অতিরিক্ত হিসেবে দেবী দুর্গার কোলে শ্রীকৃষ্ণের একটি মূর্তি স্থাপন করা হয়। যার অর্থ দেবী দুর্গার আরাধনার মাধ্যমে কৃষ্ণের সান্নিধ্য পাওয়া। যেটি কাত্যায়নী পূজার ধর্মীয় যোগসূত্র।

মাগুরায় এই বর্ণিল পরিবেশের উৎসবে অংশ নিতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের লাখ লাখ দর্শনার্থীদের পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী নেপাল ও ভারত থেকেও ছুটে আসেন উৎসাহীরা। এলাকার প্রতিটি বাড়িতে আত্মীয় স্বজন আসেন পূজা দেখতে।  

মাগুরার পুলিশ সুপার একেএম এহসান উল্লাহ বাংলানিউজকে জানান, মেলায় আগত দর্শনার্থীদের নিরাপত্তার জন্য শহরে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবির সমন্বয়ে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এ ছাড়া মণ্ডপগুলোর আশপাশের এলাকায় সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। ওয়াচ টাওয়ার স্থাপনের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক পুলিশ টহলের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।  

কাত্যায়নী পূজা হিন্দু সম্প্রদায়ের উৎসব হলেও গত তিন দশকে এটি মাগুরার সার্বজনীন উৎসবে রূপ নিয়েছে। যেখানে সব সম্প্রদায়ের মানুষ সানন্দে অংশ নিয়ে থাকেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৭, ২০১৫
পিসি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।