ঢাকা: টেলিযোগাযোগ সেবায় সকল প্রকার লোভ-লালসার উর্ধ্বে থেকে বিটিআরসি’র ক্ষমতা প্রয়োগে কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম।
তিনি বলেছেন, আমরা কারও ক্ষমতা হরণ করতে চাই না।
মঙ্গলবার (১৭ নভেম্বর) রাজধানীর রমনায় বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) পরিদর্শনে গিয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এসব কথা বলেন তারানা হালিম।
তিনি বলেন, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগকে আশ্বস্ত করতে চাই, আপনারা কখনই মনে করবেন না আপনাদের ক্ষমতা হরণ করা হচ্ছে। আমরা কারও ক্ষমতা হরণ করতে চাই না, ক্ষমতা যার যেখানে থাকবে সেটি নিশ্চিত করতে চাই। সেই সঙ্গে নিশ্চিত করতে চাই, ক্ষমতার যেন অপব্যবহার না হয়। সকল প্রকার লোভ-লালসা, বিতর্কের উপরে থেকে সকল ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারেন। সেক্ষেত্রে সহযোগিতার হাত সব সময়ই প্রসারিত ছিল এবং ভবিষ্যতেও থাকবে।
কর্মকর্তাদের সতর্কবাণী শুনিয়ে তারানা হালিম বলেন, মনে রাখতে হবে পরস্পরের স্বার্থবিরোধী অবস্থানে যেন না যাই। সততা ও দক্ষতার সঙ্গে কাজ করি। আপনারা নিশ্চয়ই অবগত আছেন, প্রত্যেক সংস্থায় কিছু রদ বদল হয়েছে। আমরা যেমন কর্মকর্তাদের ভালো কাজের জন্য উৎসাহ, ইনসেনটিভ, প্রমোশনে যেন বিলম্ব না হয় বিষয়টি মাথায় রাখতে চাই।
একই সঙ্গে যাদের পারফরমেন্স ভালো হবে না তাদের সেই ব্যাপারটিকেও মাথায় রাখতে হবে। সেজন্য বদলি হতে পারে, কিছু সংস্কার হতে পারে। কথাটি অপ্রিয়, কিন্তু আমার জন্য বলাটা অত্যাবশ্যক। কারণ, একটি সংস্থায় গতিশীলতা আনতে ভালো কাজের প্রশংসা করতেই হবে। আপনাদের প্রতিটি ভালো কাজের প্রশংসা করছি এবং করবো।
সংস্থায় গতিশীলতা আনতে হলে কিছু ব্যাড এলিমেন্টস যদি থাকে, সেই ব্যাড এলিমেন্টস যেন না থাকে সেজন্য ব্যবস্থা করতে হয়। সেই কঠিন দায়িত্ব কিছুটা আমার ওউপরে বর্তায়। আমি এ বিষয়ে আপনাদের আত্মসমালোচনা করতে বলবো, উদ্যোমী হয়ে কাজ করেন।
বিটিআরসি’র উদ্দেশ্যে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আপনারা রেগুলেটরি বডি, প্রত্যেক সময় এটা মাথায় রাখতে হবে। আমি চাই সকলকে সমান দৃষ্টিতে দেখতে, একটি প্রতিযোগিতামূলক বাজারে যেন কোনো ধরনের পক্ষপাতিত্ব না থাকে। চাই রেগুলেটরি বডি রেগুলেট করবে। রেগুলেটরি বডি সব রকম বিতর্কের উর্ধ্বে থেকে রেগুলেট করবে।
বিটিআরসি চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ বলেন, আমি নিশ্চিত করতে চাই, যাদেরকে আমরা রেগুলেট করছি তাদের সঙ্গে যেন ব্যক্তিগত সম্পর্কসহ কোনো ধরনের সম্পর্ক স্থাপিত না হয়।
প্রতিমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে বিটিআরসি চেয়ারম্যান বলেন, আপনি আমাদের স্বাধীনভাবে চলার ক্ষমতা দেন। তাহলে এই কমিশন যেজন্য তৈরি হয়েছিল আমরাও আপনাকে আমাদের সমস্ত কার্যক্রমের মাধ্যমে প্রমাণ করে দেবো। আমি নিশ্চয়তা দিচ্ছি, এখন থেকে কোনো কমিউনিকেশন গ্যাপ থাকবে না।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, আপনাদের শতভাগ নিশ্চিত করতে চাই, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ থেকে কোনো অন্যায়ের সুপারিশ আসবে না, কোনো অন্যায় চাপ আপনাদের ওপর থাকবে না। আপনারা আপনাদের মতো সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করবেন।
টেলিযোগাযোগকে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়েছি উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, জনগণের ছোট ছোট দাবিকে যদি মাথায় রাখি তাহলে সেগুলো পূরণ করা অসম্ভব না। একটু ইন্টারনেটের দাম কমানো, একটু সার্ভিস ভালো করা, দ্রুতগতির ইন্টারনেট, অবৈধ মোবাইল সিমের কারণে মানুষের যে হয়রানি হচ্ছে সেগুলো রোধ করার ব্যাপারে অনমনীয় দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এগিয়ে যাওয়া।
তিনি বলেন, আমরা যদি এ কাজগুলো সঠিকভাবে করতে পারি, তাহলে টেলিযোগাযোগ খাতে যেমন শৃঙ্খলা ফিরে আসবে, একইভাবে গতিশীলতাও আসবে এবং সেবার মান উন্নত করে জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে পারবো।
গত ১৪ জুলাই প্রতিমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগের চারমাস পর প্রথমবার বিটিআরসি পরিদর্শনে আসা প্রসঙ্গে তারানা হালিম বলেন, প্রত্যেকটি মানুষ কিছু ব্যক্তিগত মূল্যবোধ, কিছু নীতি নিয়ে জন্মগ্রহণ করে, যে নীতি ও মূল্যবোধের সঙ্গে কখনও আপোস করে না। আমিও তার ব্যতিক্রম নই, আমি যদি নিজেকে মানুষ হিসেবে দাবি করি। আমিও কিছু মূল্যবোধ নিয়ে জন্মেছি এবং আমারও কিছু নীতি আছে। সে নীতিগুলো, মূল্যবোধের সঙ্গে আমি অতীতে আপোস করিনি, এখনও করবো না, ভবিষ্যতেও করবো না।
আমার অতীতে অনেকবার মনে হয়েছে, আমার মূল্যবোধের জায়গাগুলোর সঙ্গে বিটিআরসি’র মূল্যবোধের জায়গাগুলোতে একটা ফারাক রয়েছে। সে কারণে এতোদিন বিটিআরসিতে আসিনি, সজ্ঞানে আসিনি, ইচ্ছাকৃতভাবে আসিনি। আজকে এসেছি, কর্মকর্তাদের সঙ্গে আমার অনেক মিটিং হয়েছে, অনেক সৎ উদ্যোমী কর্মকর্তা আছেন। দু’একজনের জন্য একটি সংস্থাকে দোষী করতে পারি না। আপনাদের উদ্যম আমাকে অনেক কাজে অনুপ্রাণিত করেছে। তারপরও আমি আসতে পরিনি। আজকে আমার মনে হচ্ছে, আমাদের বিবেক এবং মূল্যবোধের জায়গায় আমরা একটি একত্রিত এবং সম্মিলিত জায়গায় এসে পৌঁছেছি।
বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান সুনীল কান্তি বোসকে সরিয়ে দেওয়ার পর গত ২৩ অক্টোবর চেয়ারম্যান হিসেবে যোগ দেন শাহজাহান মাহমুদ।
সরকারের বকেয়া আদায় করে দেওয়ার প্রশংসা করে তারানা হালিম বলেন, এটা কম কথা নয়। কিন্তু প্রচারের জায়গায় পিছিয়ে আছেন। এজন্য সাংবাদিকদের সঙ্গে নিয়ে অভিযান পরিচালনার নির্দেশ দেন প্রতিমন্ত্রী।
নকল মোবাইল ফোন জব্দ কর্মসূচি ও অবৈধ ভিওআইপির বিরুদ্ধে যে অভিযান তা অব্যহত রাখারও কথা বলেন তারানা হালিম।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪১ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৭, ২০১৫
এমআইএইচ/এএসআর