ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

রাজস্ব সংক্রান্ত বাঞ্চ কেইসগুলো একত্রে বিচারের ব্যবস্থা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৫২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০১৫
রাজস্ব সংক্রান্ত বাঞ্চ কেইসগুলো একত্রে বিচারের ব্যবস্থা ছবি: দীপু মালাকার/ বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: রাজস্ব আমাদের অর্থনীতির প্রাণশক্তি। রাজস্ব বাড়ানোর জন্য উপজেলা পর্যায় থেকে কার্যক্রম হাতে নিতে হবে।

এছাড়া রাজস্ব সংক্রান্ত বাঞ্চ কেইসগুলো একত্রে বিচারের ব্যবস্থা করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা।
 
মঙ্গলবার (১৬ নভেম্বর) রাতে রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে ‘রাজস্ব মামলার ব্যবস্থাপনা ও বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি এর কার্যকারিতা’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা জানান।

প্রধান বিচারপতি বলেন, রাজস্ব মামলার প্রদত্ত স্থগিতাদেশ দ্রুততার সঙ্গে নিষ্পত্তি, দ্রুত আপিলের জন্য অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড  নিয়োগ ও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে রাজস্ব  মামলা নিষ্পত্তির জন্য সবাইকে আন্তরিকভাবে কাজ করতে হবে।

বিচারপতি বলেন, সরকার ঘোষিত রূপকল্প ২০২১ তথা একটি সুখী সমৃদ্ধ উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণে সামগ্রিক অর্থনীতির গতি সঞ্চার ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণ জোরদার করার লক্ষ্যে, সক পর্যায়ের মামলা নিষ্পত্তির জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড যুগপৎ কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এনবিআর’র রাজস্ব বাড়ানোর লক্ষ্যে গৃহীত এ প্রয়াস  সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে।
 
এস কে সিনহা বলেন, বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টে ১শ বিচারকের বিপরীতে তিন লাখ ৮০ হাজার মামলা নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে। ১শ বিচারকের পক্ষে এতো অধিক সংখ্যক মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করা বাস্তবতার নিরিখে সম্ভব নয়। তা স্বত্বেও সঙ্গত কারণেই বাণিজ্যিক ও আয়কর সংক্রান্ত মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য ৬টি বেঞ্চ গঠন করা হয়েছে। আয়কর সংক্রান্ত মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য আয়কর তথা বাণিজ্যিক আইন সম্পর্কে অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের উচ্চ আদালতে বিচারক হিসেবে নিয়োগ করা হলে ইতিবাচকফল পাওয়া যাবে বলে আমার বিশ্বাস।
 
বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির বিধান আয়কর সংশ্লিষ্ট সব আইন সন্নেবেশিত করার ফলে আয়কর মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি সম্ভব হবে। তবে এজন্য জনগণকে সচেতন করতে হবে। আর এর মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব আয় বহুলাংশে বাড়বে বলে মনে করেন প্রধান বিচারপতি।
 
প্রধান বিচারপতি বলেন, রাজস্ব সংক্রান্ত মামলাগুলো নিষ্পত্তিতে যেসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয় তা হলো- আইন সম্পর্কে করদাতা ও আইন প্রয়োগকারীদের ব্যাখ্যার মত পার্থক্য, রাজস্ব দিতে বিলম্ব করার হীন মানসিকতা, জনগণের মধ্যে আয় লুকানোর প্রবণতা, হাইকোর্ট বিভাগে বেঞ্চের অপর্যাপ্ততা, প্রসিকিউশনের অপর্যাপ্ততা, দক্ষ আইনজীবীর স্বল্পতা ও পদ্ধতিগত জটিলতা।  
 
সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, আমরা গত ছয় বছরে বাজেটের আয়তন তিন গুণের চেয়ে বেশি বাড়িয়েছি। যেখানে ৯১ থেকে ৯২ হাজার কোটি টাকার বাজেট হতো। সেখানে এখন হয় তিন লাখ কোটি টাকার বাজেট। আমরা আশা করছি, আমাদের যখন শেষ বছর আসবে, তখন এটি পাঁচ লাখ কোটি টাকার বাজেট হবে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, সুপ্রিম কোর্টে এনবিআরের একটি সেল থাকা উচিত। আমি বলবো না, আপনারা সেখানে সব সময় থাকেন। তবে যেদিন আপনাদের কেইস রয়েছে, সেদিন আপনাদের অন্ততপক্ষে একজন থাকতে হবে।

সেমিনারে প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নেওয়া হাইকোর্টের বিচারপতি শামীম হাসনাইনের বক্তব্যের সঙ্গে সহমত পোষণ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, অনেক আশা নিয়ে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি (এডিআর) প্রবর্তন হলেও আমরা এ বিষয় নিয়ে সেরকম সাড়া পাচ্ছি না। এ বিষয় নিয়ে ব্যবসায়ী ও এনবিআরের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ানো প্রয়োজন। বর্তমানে এডিআর বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি না হয়ে এডিশনাল বিরোধ নিষ্পত্তিতে পরিণত হয়েছে।

সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ, অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও এফবিসিসিআই এর সভাপতি আব্দুল মাতলুব আহমেদ। সেমিনারে ব্যবসায়ী ছাড়াও সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের বিচারপতি এবং ডেপুটি ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলরা উপস্থিত ছিলেন।  

এফবিসিসিআই সভাপতি মাতলুব বলেন, এনবিআর বলছে, ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে তারা প্রায় ৩১ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব পায়। আবার ব্যাংকগুলো বলছে তাদের প্রায় ৫৭ হাজার কোটি টাকা পাওনা রয়েছে ব্যবসায়ীদের কাছে। এজন্য তারা টাকা আদায়ের জন্য মামলা করছে। মামলায় মামলায় ব্যবসায়ীরা জর্জরিত।

তিনি বলেন, এনবিআর ও ব্যাংকের অনেক মামলা রয়েছে, যা প্রায় ১০ বছর ধরে চলছে। কিন্তু এগুলোর এখনও নিষ্পত্তি হয়নি। তাই সময় এসেছে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি ব্যবস্থার মাধ্যমে মামলার বিরোধ মেটানো। এতে ব্যবসায়ীর পাশাপাশি এনবিআর ও ব্যাংক লাভবান হবে।

অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সচিব ও এনবিআর চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কর কমিশনার মো. আলমগীর হোসেন।
 
প্রবন্ধে এডিআর কার্যকরে বিলম্ব হওয়ার বেশকিছু কারণ চিহ্নিত করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে- আইনগত বিধি-বিধান সম্পর্কে করদাতা ও আইন প্রয়োগকারীদের মধ্যে ব্যাখ্যাগত মতপার্থক্য, বিলম্বে রাজস্ব দেওয়ার প্রবণতা, হাইকোর্টে গঠিত বেঞ্চের অপর্যাপ্ততা, অ্যাটর্নি জেনারেলের দফতরে রাজস্ব মামলা পরিচালনায় দায়িত্বপ্রাপ্ত আইন কর্মকর্তার স্বল্পতা এবং হাইকোর্টের আদেশ প্রদান ও বাস্তবায়নের জন্য প্রদত্ত সময়স্বল্পতার কারণে জটিলতা সৃষ্টি।

প্রবন্ধে রাজস্ব মামলা নিষ্পত্তি দ্রুততর করতে বেশকিছু প্রস্তাবনার কথা বলা হয়। এগুলো হলো- রাজস্ব মামলার বিচারের জন্য বিশেষায়িত বেঞ্চের সংখ্যা বাড়ানো, রাষ্ট্রের পক্ষে অধিক সংখ্যক আইন কর্মকর্তা নিয়োগ, আয়কর, শুল্ক ও ভ্যাট আইন সম্পর্কে নিবিড় প্রশিক্ষণ, অধিক রাজস্ব জড়িত এমন মামলা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দ্রুত নিষ্পত্তি করা, মামলা দাখিলকারী বাদীর আরজির সফট কপি সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে আপলোড করা, মামলার আরজিসহ দাখিল, শুনানি ও রায় সংক্রান্ত হালনাগাদ তথ্য সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইট থেকে এনবিআরের সাইটে সয়ংক্রিয়ভাবে স্থানান্তর, সুপ্রিম কোর্টের রায় দ্রুত কার্যকর করা এবং প্রদত্ত নির্দেশনা অন্যান্য ক্ষেত্রেও বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা।

প্রবন্ধে আরও বলা হয়, সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগে প্রায় ২৪ হাজার ৫শ ৭২টি রিট মামলা রয়েছে। এর সঙ্গে প্রায় ৩১ হাজার কোটি টাকার বকেয়া রাজস্ব জড়িত (চলতি অর্থবছরের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রার ১৭.৫৫ শতাংশ)। এর মধ্যে কাস্টমসের ১৭ হাজার ৪শ ৭০ মামলায় বকেয়া রাজস্ব চার হাজার ৮শ ২৫ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। আয়করের তিন হাজার ৮শ ৭৬ মামলায় বকেয়া রাজস্ব আট হাজার ১শ ৮২ কোটি ৭০ লাখ টাকা। মূসকের (ভ্যাট) তিন হাজার ২শ ২৬ মামলায় বকেয়া রাজস্ব ১৭ হাজার ৯শ ৩৮ কোটি ৪৯ লাখ টাকা।

বাংলাদেশ সময়: ০০৫২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০১৫
ইএস/এসএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।