ঢাকা: বিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের সীমানা বাড়ানো হচ্ছে। শিগগিরই এ সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করা হতে পারে বলে জানা গেছে সংশ্লিষ্টদের মাধ্যমে।
এর মধ্যে দিয়ে বড় হচ্ছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) ।
ঢাকা সিটির সীমানা বাড়াতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্মতি পাওয়া গেছে। এখন চলছে সীমানা নির্ধারণের কাজ- এমনটিই জানা গেছে ঢাকা জেলা প্রশাসন কার্যলয় থেকে।
ঢাকার জেলা প্রশাসক মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বাংলানিজকে বলেন, এখনো চূড়ান্ত হয়নি, তবে অচিরেই হয়ে যাবে। মন্ত্রণালয় থেকে নতুন এলকার নামগুলো এলেই আমরা মূল কাজ শুরু করে দেবো। নামগুলো চূড়ান্ত হলেই গেজেট দিয়ে দুই সিটি করপোরেশনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ করা হবে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিএম এনামুল হক বাংলানিউজকে বলেন, তেজগাঁও সার্কেলের ১৭টি ইউনিয়ন সিটি করপোরেশনভুক্ত করা হবে। এর মধ্যে উত্তরে রয়েছে ৯টি, দক্ষিণে ৮টি। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি পাওয়া গেছে। তবে কিছু কিছু ইউনিয়ন পুরোটাই আসবে নাকি আংশিক আসবে সে নিয়ে জটিলতা রয়েছে। যাই হোক তিনমাসের মধ্যেই চূড়ান্ত করে গেজেট জারি করা হবে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হারুন মো. বেলাল বাংলানিউজকে বলেন, কয়েকটি ইউনিয়ন সিটি করপোরেশনের আওতায় আনা হচ্ছে। তবে নাম এখনো চূড়ান্ত হয়নি। অচিরেই হয়ে যাবে বলেও জানান তিনি।
ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের মাধ্যমে জানা গেছে, সিটি করপোরেশনভুক্ত হতে যাওয়া নতুন ১৭টি ইউনিয়ন হচ্ছে- ভাটারা, বাড্ডা, উত্তরখান, দক্ষিণখান, দক্ষিণগাঁও, সুলতানগঞ্জ, ডেমরা, দিনয়া, মাতুয়াইল, শ্যামপুর, নাসিরাবাদ, হরিরামপুর, ডুমুনি, বেরাইদ, মাণ্ডা, সাঁতারকুল ও সারুলিয়া।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ আদমশুমারির তথ্য অনুযায়ী, ঢাকার আয়তন ১ হাজার ৪৬০ বর্গকিলোমিটার। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) অধিভুক্ত ঢাকার আয়তন ১ হাজার ৬৮৩ দশমিক ৫ বর্গকিলোমিটার। কিন্তু সিটি করপোরেশন হিসাবে ঢাকা এখনো অনেক ছোট নগরী। সর্বশেষ কামরাঙ্গীরচরের কয়েকটি ইউনিয়ন সিটি করপোরেশনভুক্ত হওয়ার পর দুই সিটি করপোরেশনের আয়তন দাঁড়িয়েছে ৩৮০ বর্গকিলোমিটার। নতুন ১৭টি ইউনিয়ন অন্তর্ভুক্ত করার পর আয়তন কতোটুক বাড়বে সেটা এখন দেখার বিষয়।
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, কয়েকটি ইউনিয়ন ঢাকার মধ্যে থেকেও সিটি করপোরেশনের সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত ছিলো। এটা দীর্ঘদিনের দাবি ছিলো যেন এগুলো সিটি করপোরেশনের আওতায় আনা হয়। এ সিদ্ধান্ত হয়ে থাকলে তা যৌক্তিক। বরং এতোদিন ইউনিয়ন পরিষদের অধীনে থাকায় এসব ইউনিয়ন অনেক সুযোগ-সুবিধা থেকেই বঞ্চিত হয়েছে।
তিনি বলেন, ইউনিয়ন পরিষদকে সিটি করপোরেশনে আনার অন্যতম শর্ত হচ্ছে দুই তৃতীংশ লোকের পেশা অকৃষি হতে হবে। সে শর্ত অনেক আগেই পূরণ করেছে ভাটারাসহ কয়েকটি ইউনিয়ন। এসব ইউনিয়নে এখন কৃষি পেশার লোক পাওয়াই দুরুহ।
তিনি আরো বলেন, ইউনিয়নগুলো সিটি করপোরেশনের আওতায় আনা হলে একটি সমস্যা দেখা দিতে পারে। সেটি হলো ইউনিয়ন পরিষদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কি হবে। তাদের কি সরকার আত্মীকরণ করবে? এ নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিতে পারে।
ইউনিয়ন পরিষদ আইন অনুযায়ী সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে কোনো ইউনিয়ন পরিষদ বা এর অংশবিশেষ পৌরসভায় বা সিটি করপোরেশনে রূপান্তরিত বা কোনো বিদ্যমান পৌরসভায় বা সিটি করপোরেশনের অন্তর্ভুক্ত করতে পারবে।
আইনে বলা আছে, ইউনিয়ন বা এর অংশবিশেষকে পৌরসভা এবং সিটি করপোরেশন সংক্রান্ত প্রচলিত আইনে বর্ণিত শর্তগুলো পূরণ করতে হবে।
একই সঙ্গে পৌর এলাকা বা সিটি করপোরেশন ঘোষণা সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর ওই এলাকার সংশ্লিষ্ট স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান বা সংক্ষুদ্ধ ব্যক্তি অনুর্ধ্ব ৩০ দিনের মধ্যে ঘোষণার বিরুদ্ধে সরকারের কাছে লিখিত আপত্তি উত্থাপন করতে পারবে। উত্থাপিত আপত্তি সম্পর্কে সরকার পরবর্তী ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে নির্ধারিত পদ্ধতিতে পৌর এলাকা বা সিটি করপোরেশন গঠনের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে সরকার।
বাংলাদেশ সময়: ০৭২৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০১৫
এসএম/এএসআর