ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

নিয়ম না মেনে লাউয়াছড়ায় ঝুঁকিপূর্ণ বৈদ্যুতিক লাইন

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৪৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০১৫
নিয়ম না মেনে লাউয়াছড়ায় ঝুঁকিপূর্ণ বৈদ্যুতিক লাইন ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার): গাছ কেটে ঝুঁকিপূর্ণ নতুন বৈদ্যুতিক লাইন নির্মাণ করা হয়েছে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে। এতে চরম হুমকির মুখে উদ্যানের জীববৈচিত্র্য।

ইনসুলেটেড ওয়ার বা আবরণজড়িত তার ব্যবহার না করে ‘খোলা তার’ ব্যবহারের ফলে যে কোনো সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যেতে পারে বিরলপ্রজাতির সব প্রাণী।
 
আরও আশ্চর্যের ব্যাপার, এই নতুন সংযোগের জন্য নেওয়া হয়নি খোদ বন্যপ্রাণি ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষক বিভাগের কোনো অনুমতি।
 
সোমবার (১৬ নভেম্বর) সরেজমিন লাউয়াছড়ায় গিয়ে দেখা যায়, কোনো কোনো স্থানে বনের গাছ গুঁড়ি থেকে কেটে সেখানে খুঁটি বসানো হয়েছে। সাত/আটটি খুঁটি বসিয়ে তারও লাগানো হয়েছে। কোনো স্থানে কেটে ফেলা হয়েছে খুঁটির পাশের গাছগুলো। ছাঁটা হয়েছে বাঁশঝাড় ও বিভিন্ন প্রজাতির গাছ।
 
বিট অফিস সূত্র জানায়, লাউয়াছড়ায় ৪শ ৬০ প্রজাতির দুর্লভ উদ্ভিদ ও প্রাণী রয়েছে। এর মধ্যে ১শ ৬৭ প্রজাতির উদ্ভিদ, ২শ ৪৬ প্রজাতির পাখি, ২০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণি, ৬ প্রজাতির সরীসৃপ এবং ৪ প্রজাতির উভচর রয়েছে। এখানে বসবাস করছে পৃথিবীব্যাপী মহাবিপন্ন প্রাণী উল্লুক (Hoolock Gibbon)।
 
মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি (মৌপবিস) সূত্রে জানা যায়, লাউয়াছড়া বন বিভাগের অফিস থেকে লাউয়াছড়া খাসিয়াপুঞ্জি পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার এই নতুন সংযোগ বসানো হচ্ছে। লাইনটির ধারণক্ষমতা এগারো কেভি।
 
লাউয়াছড়াপুঞ্জিতে গিয়ে দেখা যায়, খাসিয়াদের বিভিন্ন ঘরে বিদ্যুতের ওয়্যারিং করে রাখা হয়েছে। এখন শুধু বিদ্যুৎ আসার অপেক্ষায় তারা।
 
বন্যপ্রাণি ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মিহির কুমার দো বাংলানিউজকে বলেন, এ নতুন সংযোগের ব্যাপারে মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি কোনো প্রকার যোগাযোগ করেনি আমাদের সঙ্গে। আমাদের ওয়াইল্ডলাইফ জোনে বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে হলে অবশ্যই ইনসুলেটেড ওয়ার ব্যবহার করতে হবে। ব্যাপারটি আমি দেখছি।
 
মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির এজিএম (অপারেশন অ্যান্ড মেনটেন্যান্স) পার্থ চক্রবর্তী বলেন, এটি ১১ কেভির লাইন। ইনসুলেটেড ওয়ার আমাদের কাছে নেই। আর এর খরচও অনেক বেশি।
 
মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) শিবু লাল বসু বাংলানিউজকে বলেন, সংরক্ষিত বনের সব ধরনের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করেই বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হবে।
 
লাইনম্যানদের লাউয়াছড়া বনের কিছু গাছ কাটার কথা উল্লেখ করলে এই বিদ্যুৎ কর্মকর্তা বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।
 
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে জাহাঙ্গীনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও প্রখ্যাত বন্যপ্রাণি গবেষক ড. মনিরুল খান বাংলানিউজকে বলেন, যেখানে বনের ভেতর অ্যানিমেল মুভমেন্ট রয়েছে সেখানে ইনসুলেটেড ওয়ার বা অবরণজনিত তার অবশ্যই ব্যবহার করা দরকার। তা না হলে প্রাণীরা বিদ্যুৎখুঁটির তারে ঝুলে যে কোনো সময় মারা পড়তে পারে।    
 
বাংলাদেশ সময়: ০৭৪৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০১৫
বিবিবি/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।