ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বেড়েছে করের বোঝা

নামেই সিটি, বাস্তবে ইউনিয়নের বাসিন্দা!

মফিজুল সাদিক ও রাজীব সরকার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৩৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০১৫
নামেই সিটি, বাস্তবে ইউনিয়নের বাসিন্দা! ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

গাজীপুর থেকে ফিরে: গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের (গাসিক) ১০নং ওয়ার্ডের কোনাবাড়ির নতুন বাজার থেকে আমবাগ রোড। অল্প বৃষ্টিতেই পানিবন্দি হয়ে পড়েন এ এলাকাবাসী।

শুধু কাগজে কলমেই এ ওয়ার্ডের বাসিন্দারা সিটি কর্পোরেশন এলাকায় বসবাস করছেন, বাস্তবে তারা যেন সাবেক ইউনিয়ন পরিষদের বাসিন্দাই রয়ে গেছেন।

শুধু কোনাবাড়িই নয়, বাস্তবে গাসিকের অনেক এলাকা এখনও আগের ইউনিয়নের মতোই রয়েছে।

গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন(গাসিক) ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। প্রায় তিন বছর পরও এ সিটি কর্পোরেশনের ৩০ লাখ নাগরিক এখনও অন্যান্য সিটি কর্পোরেশনের মতো সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন না। এ তিন বছরে সিটির অধিকাংশ এলাকার তেমন কোনো উন্নয়নমূলক কাজও হয়নি।

গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন হওয়ার আগে এলাকার রাস্তাঘাট আগে যেমন ছিল তেমনি রয়েছে। এখনো অনেক এলাকার মানুষ পানিবন্দি হয়ে থাকেন বর্ষার ৬ মাস। সরেজমিনে ঘুরে আরও দেখা গেছে, সিটি কর্পোরেশন এলাকায় যুক্ত হওয়া সাবেক গাছা, বাসন, পুবাইল, কোনাবাড়ী, কাশিমপুর ও কাউলতিয়া ইউনিয়ন পরিষদ এখনও আগের অবস্থানেই রয়েছে। সিটি কর্পোরেশনের মতো নেই সড়ক বাতি ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা। এমনকি আগের গাজীপুর ও টঙ্গী পৌরসভার মানুষের ভাগ্যেও সিটির কোনো সুবিধা জুটছে না।

উন্নয়ন দিতে না পারলেও সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ নাগরিকদের মাথায় চাপিয়ে দিয়েছে অতিরিক্ত করের বোঝা। আবাসন, দোকানপাট এবং সড়ক-মহাসড়কে চলাচলরত সকল ধরনের যানবাহনকে সিটি হওয়ার পর গাসিকের আওতায় দিতে হচ্ছে বাড়তি কর।

তবে উন্নয়ন ও সিটি কর্পোরেশনের সেবা না পাওয়া পর্যন্ত সকল ধরনের কর দিতে নারাজ বিভিন্ন এলাকাবাসী।

সিটি কর্পোরেশনের ১১নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম বাংলানিউজকে বলেন, বছরে প্রায় ৬ মাস আমাদের পানিবন্দি থাকতে হয়। এলাকায় চলাচলের কোনো রাস্তা নেই, নেই গ্যাস। চলাচলের রাস্তাঘাট, গ্যাস না হওয়া পর্যন্ত সিটি কর্পোরেশনের কোনো ধরনের কর দিতে চাই না। নাগরিক সেবা পাওয়ার পরে আমরা কর দেবো।

একই এলাকার আরেক বাসিন্দা বাদল মিয়া বলেন, আমরা সিটি কর্পোরেশনের কোনো ধরনের নাগরিক সেবা পাই না। অথচ কর দিতে হবে, এটা কেমন কথা। আমাদের আগে বুঝিয়ে দেওয়া হোক আমরা সিটি কর্পোরেশনের বাসিন্দা, তারপর সকল কর দেবো। ‍
 
সরেজমিনে ঘুরে জানা গেছে, শতাংশ প্রতি বছরে জমির খাজনা হয়েছে ৬০ টাকা, আগে যেখানে ছিল মাত্র ২২ টাকা।

সিটি কর্পোরেশনের ১০নং ওয়ার্ডে দেখা গেছে, মাটির সড়কে বাসিন্দারা চলাফেরা করতে পারেন না। খানা-খন্দ ও বেহাল অবস্থায় রয়েছে অনেক সড়ক। কারখানার দূষিত বর্জ্য পানিতো আছেই।

বিষয়টি স্বীকার করে ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আজহারুল ইসলাম মোল্লা বলেন, আমাদের ওয়ার্ডের কেউই তেমন নাগরিক সুবিধা পাননি। এলাকার রাস্তাঘাট, গ্যাস, পানি নেই। কিন্তু ভৌগলিক দিক দিয়ে এ এলাকা সিটি কর্পোরেশনের আওতায় পড়েছে। যার ফলে সিটি কর্পোরেশনের কর দিতে হবে। তাছাড়া সরকারের কথা তো মানতে হবে।

গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আসলাম হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনে ছয়টি ইউনিয়ন যুক্ত হয়েছে। এখনও সড়কে বাতি নেই এবং ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনা নেই। তবে আমরা সিটি কর্পোরেশন এলাকার চেহারা দিতে চেষ্টা করছি। পাকা রাস্তা ও গ্যাস সুবিধাসহ নানা পদক্ষেপ নেওয়া হবে যাতে করে সিটি কর্পোরেশন এলাকার সুবিধা পান নগরবাসী।
 
তিনি আরও বলেন, নাগরিক সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আমরা একটি প্রকল্প হাতে নিতে যাচ্ছি। প্রকল্পের আওতায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
 
পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য আরাস্তু খানের কাছে চিঠি লিখে নাগরিকদের দূরবস্থার কথা জানিয়েছে সিটি কর্পোরেশন। এমনকি সিটি কর্পোরেশন এলাকার নাগরিক হিসেবে যে সুবিধা পাওয়ার দরকার তা নিশ্চিত করতে প্রকল্পের প্রস্তাব করা হয়েছে।
 
সম্প্রতি পরিকল্পনা কমিশনকে গাসিক জানায়, এ সিটি কর্পোরেশনের মোট আয়তন ৩২৯ দশমিক ৫৩ বর্গ কিলোমিটার যা আয়তনের দিক দিয়ে দেশের বৃহত্তম সিটি কর্পোরেশন। সিটি এলাকার মধ্যে নতুনভাবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে ২৪৪ দশমিক ৭১ বর্গ কিলোমিটার অনুন্নত বা ইউনিয়ন পরিষদ এলাকা। প্রায় তিন বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও ইউনিয়ন পরিষদের মতো সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন নতুনভাবে যুক্ত হওয়া সিটি কর্পোরেশনের বাসিন্দারা।
 
এর ওপরে নতুন নতুন শিল্প কারখানা যেমন, গার্মেন্টস, ফার্মাসিটিক্যালস, ইলেকট্রিক অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স, প্লাস্টিক, কসমেটিক ইত্যাদি শিল্প কারখানার প্রসার ঘটছে। কিন্তু সেভাবে বাড়ছে না নাগরিক সুবিধা। অর্থনৈতিক বিবেচনায় নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন ৩০ লাখ নাগরিক।
 
এমনকি সিটি কর্পোরেশন এলাকায় উন্নয়নমূলক কাজে যানবাহন, নানা ধরনের যন্ত্রপাতি, দ্রুততার সঙ্গে আবর্জনা স্থানান্তরকরণ এবং শহরের পরিবেশ স্বাস্থ্যসম্মত রাখার তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। ইউনিয়ন থেকে সিটি কর্পোরেশন এলাকায় অন্তর্ভুক্ত হলেও একই সুবিধা পাচ্ছেন নগরবাসী। অন্যদিকে সাবেক পৌরসভার বাসিন্দারাও সিটি কর্পোরেশন এলাকার মতো সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

নাগরিক সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ‘প্রকিউরমেন্ট অব ভিকল অ্যান্ড ইক্যুইপমেন্ট ইন গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন’ প্রকল্পের প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে।

প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১৬ কোটি ৮২ লাখ টাকা। এটি ২০১৫ সাল থেকে ২০১৭ সালের জুন মেয়াদে বাস্তবায়ন করা হবে। প্রকল্পের ৪০ শতাংশ ব্যয় বহন করবে সিটি কর্পোরেশন, বাকি অর্থ সরকারকে বহন করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

যাতে করে ন্যূন্যতম নাগরিক সুবিধা বাড়ানো যায় সে লক্ষ্যে প্রকল্পের আওতায়, একটি জিপ, একটি ডাবল কেবিন পিক-আপ, ১৫টি মোটরসাইকেল এবং দ্রুততার সঙ্গে আবর্জনা স্থানান্তরের জন্য চার টন ভার বহনে সক্ষম পাঁচটি গার্বেজ ট্রাক কেনা হবে।

অন্যদিকে পাঁচ টন ভার বহনে সক্ষম পাঁচটি গার্বেজ ট্রাক, ১২টি হাইড্রোলিক বিম লিফটার, ২০ টন ভার বহনে সক্ষম একটি চেইন ড্রেজার, ৬-৮ টন ক্ষমতাসম্পন্ন চারটি রোড  রোলারসহ কম্পিউটার ও প্রিন্টার কেনা হবে।

তবে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সিটি কর্পোরেশনের মতো সুযোগ-সুবিধা পেতে চান নগরবাসী। যাতে করে ইউনিয়ন পরিষদের মতো অবস্থায় আর না থাকতে হয়।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০১৫
এমআইএস/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।