ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

শেষ দিনেও সাকার ভুয়া সার্টিফিকেট!

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০১৫
শেষ দিনেও সাকার ভুয়া সার্টিফিকেট!

ঢাকা: ট্রাইব্যুনালে উদ্ভট মন্তব্য আর কেওয়াজ সৃষ্টি করে বার বার আলোচনায় এসেছেন। শুধু রাষ্ট্রপক্ষের কৌসুলিকেই নয়, নিজের কৌসুলিকেও নিয়ে বিদ্রুপ মন্তব্য করতেন তিনি।

এমনকি তার বিরুদ্ধে রায় দেওয়ার আগের দিন ‘রায়ের খসড়া’ ফাঁসের মতো ঘটনাও ঘটানো হয়েছে।
 
এমন কর্মকাণ্ডে আলোচিত-সমালোচিত ফাঁসির দড়িতে ঝোলা থেকে আর মাত্র এক ধাপ দূরে (রাষ্ট্রপতির ক্ষমা) থাকা সালাউদ্দিন কাদের সাকা চৌধুরী। মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপির এই স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে চট্টগ্রাম অঞ্চলের নৃশংসতম মানবতাবিরোধী অপরাধের হোতা। অধ্যক্ষ নূতন চন্দ্র সিংহকে হত্যাসহ চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে চার হত্যা-গণহত্যার দায়ে তার ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ বুধবার (১৮ নভেম্বর) বহাল রেখেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে মৃত্যুদণ্ডের চূড়ান্ত রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে সাকা চৌধুরীর আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন সর্বোচ্চ আদালত।

বিতর্কিত, ঔদ্ধত্যপূর্ণ আর হাস্যকর কাজকর্ম আর কথাবার্তা ট্রাইব্যুনাল পর্যন্তই সীমাবদ্ধ রাখেননি সাকা চৌধুরী। সর্বশেষ আপিল বিভাগেও ভুয়া সার্টিফিকেট দেওয়া হয়েছে তার পক্ষ থেকে। তাও আবার রায়ের রিভিউ আবেদনের সময়।

এখানে এসে সাকার পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে পাকিস্তানের পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ডুপ্লিকেট সার্টিফিকেট। যে সার্টিফিকেটে সেশন ১৯৭১ দেখানো হয়েছে। এছাড়া প্রশংসাপত্রে সেশন দেখানো হয়েছে ১৯৭০-৭১। এমনকি সার্টিফিকেটে ১৯৭০ লেখার মধ্যে ১৯ সংখ্যাটি বড়, আর ৭০ সংখ্যাটি খুব ছোট। পাশাপাশি সার্টিফিকেট ও প্রশংসাপত্রে পাঞ্জাবের বানানও দু’রকম।

এসব বিষয়ে প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা রিভিউ শুনানিতে বলেন, সার্টিফিকেটে ১৯ সংখ্যাটি বড় আর ৭০ সংখ্যাটি ছোট। এছাড়া আগে ট্রাইব্যুনালে দেওয়া ডকুমেন্টের সঙ্গে এগুলোর কোনো মিল নেই। একটা মিথ্যা ঢাকতে শতটা মিথ্যা কথা বলছেন তিনি।  

এ সময় প্রধান বিচারপতি সাকার প্রধান আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেনকে উদ্দেশ্য করে চারটি প্রশ্ন করেন। সেগুলো হলো- এক. ট্রাইব্যুনাল এবং আপিল বিভাগে আপনাদের দেওয়া ডকুমেন্টগুলো ফেইক প্রমাণিত হওয়ার পরও নতুন করে কেন দিয়েছেন? দুই. লন্ডন ওয়াশিংটন থেকে হলফনামা দিয়েছেন। কিন্তু পাঞ্জাব থেকে দিতে পারেননি কেন?
তিন. কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে ক্রেডিট ট্রান্সফার করে পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন? এবং চার. ২০১২ সালের ডকুমেন্ট এখন দিচ্ছেন কেন?

জবাবে খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, এ বিষয়ে আপনাদের সন্দেহ হলে আমাদের বেনিফিট হবে। আপনারা তদন্ত করেন।

রিভিউ খারিজের পর সার্টিফিকেটের বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান আইনজীবী অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাওয়া যে ডুপ্লিকেট সার্টিফিকেট আদালতে দাখিল করেছেন সেটা ২০১২ সালে ইস্যু করা। আদালত তা গ্রহণযোগ্য মনে করেননি। ২০১৩ সালে তিনি (সাকা চৌধুরী) যখন সাক্ষ্য দেন তখন এটা উল্লেখ করেননি।

তিনি বলেন, পাকিস্তানে আমাদের যিনি হাইকমিশনার আছেন তিনি সেখানে সত্যায়িতও করেননি। কাউন্টার সাইন করতে হয়, সেটা করা হয়নি। আইনের কাছে এটা গ্রহণযোগ্য নয়।

মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, ১৯৬৮ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির কথা বলেছেন। আমিও একই সময়ে একই বিভাগের (রাষ্ট্রবিজ্ঞান) ছাত্র ছিলাম। ওই সময়ে সেমিস্টার পদ্ধতি ছিলো না। ক্রেডিট ট্রান্সফারেরও সুযোগ ছিলো না। এছাড়া সেশন হয় ১৯৭০-৭১। কিন্তু সাটিফিকেটে দেখা যাচ্ছে সেশন শুধু ১৯৭০। এমনকি যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেটের জন্য ছাত্রকেই আবেদন করতে হয়। কিন্তু তিনি তো জেলে। তাহলে কিভাবে সার্টিফিকেট আসলো?

মাহবুবে আলম আরো বলেন, আদালত তাদের এসব আবেদন বিবেচনায় নেননি।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০১৫
ইএস/আরএ/এএসআর

** মুজাহিদের ফাঁসি বহাল
** সেই ‘ল্যাংড়ার’ সাক্ষ্যে ফাঁসিকাষ্ঠে যাচ্ছেন সাকা
** মুজাহিদের বাড়ি এখন পোকা-মাকড়ের বাসা
** ‘মুজাহিদও ক্ষমা চাইবেন না’
** ‘ক্ষমা চাওয়ার পারিবারিক সিদ্ধান্ত নেই’
** মুজাহিদের রিভিউ আদেশে ফরিদপুরে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থা
** মুজাহিদের রিভিউ আদেশে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থা সিলেটে
** খুলনায় সর্তকাবস্থায় পুলিশ
** সাকার ফাঁসি বহাল
** ‘রায় যাতে দ্রুত কার্যকর হয়...’
** মুখ খুলছে না বিএনপি নেতারা
** সাকা’র সম্পত্তি ক্রোক চান সাক্ষী নূরুল আবসার
** বগুড়ায় সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থানে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী
** ‘রায় হয়েছে, দ্রুত কার্যকর হোক’
** সাকা’র সমর্থকদের সাড়া নেই, চলছে আনন্দ উল্লাস
** সাকার বাড়ি ফাঁকা!
** ‘টর্চার সেলকে জাদুঘর হিসেবে দেখতে চাই’

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।