ঢাকা: টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়নে জাতীয় পর্যায়ের পরিকল্পনায় প্রতিবন্ধীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় পরামর্শ সভার বক্তারা।
বুধবার (১৮ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর রমনায় বিআইআইএসএস অডিটোরিয়ামে ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ও প্রতিবন্ধিতা: প্রেক্ষিত বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক সভায় বক্তারা এ আহ্বান জানান।
এ সময় বক্তারা জরিপের মাধ্যমে সারাদেশের প্রতিবন্ধীদের সঠিক সংখ্যা তুলে ধরার আহ্বান জানান।
পরামর্শ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. শামসুল আলম বলেন, প্রতিবন্ধীরা সমাজের মূল ধারায় আসতে না পারার কারণ হলো প্রতিবন্ধীদের নিয়ে সমাজে অজ্ঞতা রয়েছে। এর প্রতিফলই আজ আমাদের সমাজে দেখা দিয়েছে। প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে যে আইন হয়েছে তা বাস্তবায়নে বিধিমালা প্রয়োজন।
প্রতিবন্ধীদের নিয়ে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সেক্টরকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে পরিকল্পনা কমিশনের এই সদস্য বলেন, সরকার উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন দিক নিয়ে সচেতন। তা বাস্তবায়নের জন্য সুন্দর সুন্দর অনেক ফাইল হয়। সমস্যা শুধু বাস্তবায়ন ও মনিটরিংয়ের ক্ষেত্রে।
বর্তমান সরকার চলতি বাজেটে সামাজিক ক্ষেত্রে বেশ গুরুত্ব দিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, প্রতিবন্ধীদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তায় গতবারের চেয়ে এবার তিনগুণ বৃদ্ধি করা হয়েছে। এবার বাজেটে ৩৭ হাজার ৩১৭ কোটি টাকা সামাজিক সুরক্ষায় ক্ষেত্রে বরাদ্দ আছে , এর মধ্যে ৩৬০ কোটি রাখা হয়েছে প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে।
তবে প্রতিবন্ধীদের নিয়ে সরকারের উপরের লেভেল অনেক আন্তরিক থাকলেও তা নিচেরে লেভেলে গিয়ে ছোট হয়ে যায় ও থেমে যায় বলে তিনি মন্তব্য করেন।
এসময় প্রতিন্ধীদের সংগঠনগুলোকে অন্যান্য সংগঠন, গণমাধ্যম ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে নিয়ে তাদের অধিকার আদায়ে কাজ করার কথা বলেন তিনি।
প্রতিবন্ধীদের নিয়ে জরিপ হচ্ছে জানিয়ে অধ্যাপক ড. শামসুল আলম বলেন, প্রতিবন্ধীদের নিয়ে দেশে তথ্য অপর্যাপ্ত। সঠিক তথ্য না থাকলে কার্যকরী পরিকল্পনা নিতে সমস্যা হয়। সঠিক ও পর্যাপ্ত তথ্য পাওয়া গেলে প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে কাজ সহজ হবে।
সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভলপমেন্ট স্টাডিস বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবু ইউসুফ বলেন, দেশের বিভিন্ন উন্নয়ন সংক্রান্ত বিষয়ে কাগজে-কলমের লেখা ও বাস্তব চিত্র ভিন্ন। অনেক কিছু নিয়ে নীতিমালা হয়, কিন্তু সেই নীতিমালা তেমন বাস্তবায়ন হয় না।
এসডিজি বাস্তবায়নে দেশের প্রতিবন্ধীদের থেকে প্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্টদের মধ্যে টিম গঠন করে তা বাস্তবায়নে কাজ করার পক্ষে মত দেন তিনি।
ডিজঅ্যাবিলিটি কাউন্সিল ইন্টারন্যাশনালের কাযনির্বাহী কমিটির সদস্য মনসুর আহমেদ চৌধুরী অভিযোগ জানিয়ে বলেন, সরকারের নীতি নির্ধারকরা সব সময় প্রতিবন্ধীদের নিয়ে উদাসীন। প্রতিবন্ধীরা সব ক্ষেত্রেই বৈষম্যের শিকার। প্রতিবন্ধীদের নিয়ে যে আইন হয়েছে তা বাস্তবায়নেও সরকারের উদাসীনতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
সারা দেশে কী ধরণের ও কত পরিমাণ প্রতিবন্ধী মানুষ রয়েছে তা জরিপের মাধ্যমে প্রকৃত সংখ্যা বের করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, দেশের জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ, বাস্তবায়নে ও মনিটরিংয়ের জন্য প্রতিবন্ধীদের রাখতে হবে।
এছাড়া বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধীরা নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রতিবন্ধীদের নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গীকার থাকতে হবে। সরকার ও বিভিন্ন এনজিওর মধ্যে সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করতে হবে।
সভায় বিভিন্ন প্রতিবন্ধী সংগঠনের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। এ সময় তারা জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধীদের নানা প্রতিবন্ধকতা তুলে ধরেন তারা।
অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবিরের সঞ্চলনায় জাতীয় সভায় ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ও প্রতিন্ধীতা: প্রেক্ষিত বাংলাদেশ’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইমপেক্ট ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের ট্রাস্টি’র ড. রেজাউল হক।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০১৫
টিএইচ/আরএইচএস/এমজেএফ