ঢাকা: দেশের দুই শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের সাকা চৌধুরীর ফাঁসি কার্যকরের জন্য সাতদিন নয়, আরও আগেই সম্ভব বলে মন্তব্য করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
তিনি জানিয়েছেন, আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেই যতো দ্রুত পারা যায় এ রায় দু’টি কার্যকর করার চেষ্টা করবে সরকার।
বুধবার (১৮ নভেম্বর) রাতে রাজধানীর গুলশানে তার নিজ বাসভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন মন্ত্রী।
মানবতাবিরোধী অপরাধের ক্ষেত্রে বিশ্বের কোথাও এমন স্বচ্ছতা রেখে বিচার কার্য সম্পাদন করা হয়নি বলেও মন্তব্য করেন আইনমন্ত্রী।
সকালে একাত্তরে বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে মুজাহিদ এবং অধ্যক্ষ নূতন চন্দ্র সিংহকে হত্যাসহ চার হত্যা-গণহত্যার দায়ে সাকা চৌধুরীর ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রেখেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে মৃত্যুদণ্ডের চূড়ান্ত রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে তাদের আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন সর্বোচ্চ আদালত।
এর মধ্য দিয়ে সাকা-মুজাহিদের মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার বিচারিক কার্যক্রম ও আইনি লড়াই শেষ হয়ে গেছে। ফাঁসির দড়ি এড়াতে সর্বশেষ সুযোগ হিসেবে এখন কেবলমাত্র রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইতে পারবেন তারা। প্রাণভিক্ষা না চাইলে বা চাওয়ার পর আবেদন নাকচ হলে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে আর কোনো আইনি বাধা থাকবে না।
আইন অনুসারে তখন সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যেকোনো সময় মুজাহিদের ফাঁসির রায় কার্যকর করবে কারা কর্তৃপক্ষ।
দণ্ডবিধি আইন ও জেলকোড অনুসারে সাধারণত রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইতে সাতদিনের সময় পান মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা। এ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, সাতদিনের আগেই ফাঁসি সম্ভব। আর এর মধ্যেই যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে।
আইনের ব্যাখ্যা দিয়ে আনিসুল হক বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন অনুযায়ী জেলকোড ফলো করতে হবে না। কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকরের সময়ও এ বিষয়টি ফলো করা হয়নি। যদিও জেলকোডের ৯৯১ রুল অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইতে সাতদিন সময় থাকে, কিন্তু এক্ষেত্রে জেলকোড ফলো করা হবে না।
‘জেলকোডের ৯১১ রুলে বলা আছে, হাইকোর্টের রায় হওয়ার পরে সাতদিনের মধ্যে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমার আবেদন করার জন্য আসামিকে বলা হবে। আবার পাশাপাশি এটাও বলা আছে, যেটা কাদের মোল্লার রায়ে বলা আছে, জেলকোড উইল নট অ্যাপ্লাই ইন দিস কেসেস’- বলেন মন্ত্রী।
তিনি বলেন, কিন্তু তাকে মার্সি পিটিশনের জন্য একটা সময় দিতে হবে।
সেটা আরও পরিষ্কার করে তিনি বলেন, এখানে সাতদিন অপেক্ষা করতে হবে এরকম কোনো নিয়ম নেই। আমি যতোটুকু আইন বুঝেছি, মার্সি পিটিশনের জন্য রিভিউ পিটিশনের রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপির প্রয়োজন নেই। আসামিরা যদি বলেন, আমরা মার্সি পিটিশন করবো না যতোক্ষণ পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপি পাবো- সেটা আইনের ধোপে ঠিকবো না-বলেন মন্ত্রী।
আইনমন্ত্রীর মতে, মুজাহিদ-সাকা চৌধুরীর ক্ষমা চাওয়ার জন্য সাতদিনের প্রয়োজন নেই। এতো সময় লাগার কথাও না। আর এর মধ্যেই সরকার সব ব্যবস্থা করে রাখবে বলেও জানান তিনি।
আইনমন্ত্রী বলেন, এখন একটাই ব্যাপারে শুধু আশ্বস্ত হতে হবে যে, রিভিউয়ের পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপি প্রয়োজন না রিভউয়ের আদেশের অংশটা প্রয়োজন। আর তারা যদি ক্ষমার আবেদন করেন তাহলে রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্তের অপেক্ষার সময়টুকুই প্রয়োজন।
বিষয়টি পরিষ্কার হতে রাতেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজি প্রিজনের সঙ্গে কথা বলবেন বলেও জানান তিনি।
ব্রিফিংয়ের শুরুতে অবশ্য এ বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রী বলেন, গতবার যখন কামারুজ্জামানের রায় কার্যকর করা হয় তখন রিভিউ আবেদনের পূর্ণাঙ্গ কপি জেল কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছিলো। এক্ষেত্রে সেটা অনুসরণ করা হবে কি না সে ব্যাপারেও আলোচনা করা হবে।
গত ০১ অক্টোবর মুজাহিদ-সাকার মৃত্যু পরোয়ানা জারি করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। সেদিনই কারাগারে লাল কাপড়ে মোড়ানো মৃত্যু পরোয়ানা ও ফাঁসির চূড়ান্ত রায় পড়ে শোনানো হয় তাদেরকে। আগেরদিন ৩০ সেপ্টেম্বর ওই দু’জনের আপিল খারিজ করে ফাঁসি বহাল রেখে সর্বোচ্চ আদালতের প্রকাশ করা পূর্ণাঙ্গ চূড়ান্ত রায়ের ভিত্তিতে এ মৃত্যু পরোয়ানা জারি করেন বিচারিক আদালত।
গত ১৪ অক্টোবর রিভিউ আবেদন করার পর থেকে মৃত্যু পরোয়ানা স্থগিত ছিল। বুধবার রিভিউ খারিজ হওয়ায় ফের সচল হয়েছে এ পরোয়ানা। এখন মুজাহিদ ও সাকাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রায় কার্যকরের বিষয়টি সম্পূর্ণ সরকারের এক্তিয়ারাধীন।
এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল দুপুরে তার দসচিবালয়ের দফতরে সাংবাদিকদের বলেছেন, ফাঁসির রায় বহাল রাখার পর এ দুই শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীর রায় কার্যকর হবে সরকারি সিদ্ধান্ত অনুসারে। আইনি নির্দেশনা মেনেই রায় কার্যকর করবে সরকার।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রিভিউ খারিজের আদেশের কপি এলে আইন অনুযায়ী রায় কার্যকর করা হবে। রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাওয়ার সময় রয়েছে। আইন মেনে সব ঠিকঠাক করে আমরা ব্যবস্থা নেবো।
রায় পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমও জানিয়েছেন, এ দণ্ড কার্যকর এখন সময়ের ব্যাপার।
অন্যদিকে দুপুরেই ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বৈঠক করেছেন উর্ধ্বতন কারা কর্মকর্তারা। রায় বহাল পরবর্তী আনুষ্ঠানিকতা নির্ধারণ ও ফাঁসি কার্যকরের প্রস্তুতি নিতে এ বৈঠকে অংশ নেন আইজি প্রিজন ব্রি. জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার, সিনিয়র জেল সুপার জাহাঙ্গীর কবিরসহ কেন্দ্রীয় কারাগারের অন্যান্য কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০১৫, আপডেট ১৯৪০
এসই/এসএ/আইএ/এএসআর
** মুজাহিদের ‘মিশন তামান্না’ যেন মৃত্যুপুরী
** এ রায় মুজাহিদ-সাকার ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের জবাব
** আইনি নির্দেশনা মেনে রায় কার্যকর
** ঊর্ধ্বতন কারা কর্মকর্তাদের বৈঠক
** শেষ দিনেও সাকার ভুয়া সার্টিফিকেট!
** দেশ স্থিতিশীল করতেই ফেসবুক সাময়িক বন্ধ
** মুজাহিদের ফাঁসি বহাল
** সেই ‘ল্যাংড়ার’ সাক্ষ্যে ফাঁসিকাষ্ঠে যাচ্ছেন সাকা
** মুজাহিদের বাড়ি এখন পোকা-মাকড়ের বাসা
** ‘মুজাহিদও ক্ষমা চাইবেন না’
** ‘ক্ষমা চাওয়ার পারিবারিক সিদ্ধান্ত নেই’
** মুজাহিদের রিভিউ আদেশে ফরিদপুরে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থা
** মুজাহিদের রিভিউ আদেশে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থা সিলেটে
** খুলনায় সর্তকাবস্থায় পুলিশ
** সাকার ফাঁসি বহাল
** ‘রায় যাতে দ্রুত কার্যকর হয়...’
** মুখ খুলছে না বিএনপি নেতারা
** সাকা’র সম্পত্তি ক্রোক চান সাক্ষী নূরুল আবসার
** বগুড়ায় সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থানে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী
** ‘রায় হয়েছে, দ্রুত কার্যকর হোক’
** সাকা’র সমর্থকদের সাড়া নেই, চলছে আনন্দ উল্লাস
** সাকার বাড়ি ফাঁকা!
** ‘টর্চার সেলকে জাদুঘর হিসেবে দেখতে চাই’