ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

১৬ কোটি মানুষের দুর্নীতি রোধে ‍মাত্র ১,০৭৩ জন

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২২, ২০১৫
১৬ কোটি মানুষের দুর্নীতি রোধে ‍মাত্র ১,০৭৩ জন ছবি: সোহাগ শেখ- বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: ১৬ কোটি মানুষের দেশে দুর্নীতি প্রতিরোধে মাত্র এক হাজার ৭৩ জন কাজ করছেন। এই বিশাল জনগোষ্ঠীর দুর্নীতি নামমাত্র লোকবল দিয়ে কীভাবে আমরা নিয়ন্ত্রণ করবো? এমন প্রশ্ন খোদ দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান মো. বদিউজ্জামানের।



রোববার (২২ নভেম্বর) দুপুরে দুদকের একাদশ প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশ লিল্পকলা একাডেমির অডিটোরিয়ামে আয়োজিত ‘শপথ গ্রহণ ও আলোচনা সভায়’ সভাপতির বক্তব্যে এ প্রশ্ন তোলেন দুদক চেয়ারম্যান।

মো. বদিউজ্জামান বলেন, ‘আমাদের কাজে সফলতার পাশাপাশি ব্যর্থতাও রয়েছে তা অস্বীকার করার উপায় নেই। ১৬ কোটি মানুষের দেশে দুর্নীতি প্রতিরোধে এক হাজার ৭৩ জন কাজ করছেন। এর মধ্যে মাত্র ৩০০ জন দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান ও তদন্তের কাজে জড়িত। এত স্বল্পসংখ্যক লোক দিয়ে বৃহৎ এ জনগোষ্ঠীর দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের প্রফেসর ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, দুর্নীতি দমন বা নিয়ন্ত্রণের সব চেয়ে বড় শর্ত সুশাসন। দুর্নীতিহীন প্রশাসন না হলে এই সুশাসন সম্ভব নয়।

তিনি বলেন, দুর্নীতি বাংলাদেশের একটি ক্ষুদ্র সমস্যা। সমাজের ৫ শতাংশ মানুষ দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। বাকি ৯৫ শতাংশ মানুষ সচেতন হলেই দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। তবে তার চেয়ে বড় কথা হলো সরকারের সদিচ্ছা। সরকার যদি একান্তভাবে দুর্নীতি দমন করতে চায় তবেই দেশে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।

তিনি আরও বলেন, শতভাগ দুর্নীতি দমন কোনো সমাজেই সম্ভব নয়। তবে দুর্নীতিকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। দুদকের গত ১০ বছরে যে অগ্রগতি হয়েছে তাতে আমরা কমিশনের প্রতি আস্থা রাখতে পারি।

বিশেষ অতিথি দুদক কমিশনার (তদন্ত) মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু বলেন, দুর্নীতি দমনে জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণই আমাদের অনুপ্রেরণা। আমরা দুর্নীতি দমনে নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, দুর্নীতি দমন ব্যুরো থেকে দুর্নীতি দমন কমিশন প্রতিষ্ঠা করা হয় দুর্নীতি লাঘবের জন্য। দাতাগোষ্ঠীদের চাপে ওই সময়ে (২০০৪ সালে) কমিশন গঠিত হয়। কিন্তু কমিশন গঠন করা হলেও তাকে নিষ্ক্রিয় করে রাখা হয়। দৃশ্যমান কোনো কর্মকাণ্ডই সে সময় পরিলক্ষিত হয়নি।

‘পরবর্তী সময়ে দেশের রাজনীতি অঙ্গনে পরিবর্তন আসে। ওই সময় বিরাজনীতিকরণে দুর্নীতি দমন কমিশনকে ব্যবহার করা হয়। এক এগারের সময় এতই আইনগত ত্রুটি ছিল যে সেগুলোর বোঝা এখনও আমাদের টানতে হচ্ছে। আমরা ওই জঞ্জালগুলো দূর করে প্রভাবমুক্ত হয়ে নিরপেক্ষভাবে কাজ করে যাচ্ছি। আমরাদের কাছে যে কোনো পরিচয় মুখ্য নয়। আমাদের কাছে অপরাধই মূখ্য। ’- যোগ করেন দুদক কমিশনার সাহাবুদ্দিন চুপ্পু।

তিনি আরও বলেন, বিগত সরকারের আমলে ‘যুবক’ নিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির কোনো অনুসন্ধানই করেনি তৎকালীন কমিশন। ‘যুবক’ এর মাধ্যমে হাজার হাজার মানুষ প্রতারণার শিকার হলেও একটি মামলাও করা হয়নি। এছাড়া ওই সময় ওরিয়েন্টাল ব্যাংক লুট হলে তারও মামলা হয়নি। আমরা এ সব বিষয়ে অনুসন্ধান ও মামলা করেছি।

বিশেষ অতিথি দুদক কমিশনার (অনুসন্ধান) ড. নাসিরউদ্দীন আহমেদ বলেন, দুর্নীতি প্রতিরোধে আমাদের সীমাবদ্ধতা বা ব্যর্থতা যে নেই তা বলা যাবে না। তবে আমরা দুর্নীতি প্রতিরোধে কাজ করে যাচ্ছি। এ বছরই আমরা ভারতের সিবিআইসহ ১৪২টি দেশের অংশগ্রহণে একটি সভা করেছি। সেখানে পাচারকৃত অর্থ কীভাবে উদ্ধার করা যায় ও অর্থপাচার কীভাবে বন্ধ করা যায় তা আলোচনা হয়েছে। অর্থপাচার বিষয়ে তাদের কাছ থেকে সহযোগিতা পাওয়া যাবে বলে আমরা আশ্বাস পেয়েছি।

অনুষ্ঠানে দুদক সচিব আবু মো. মোস্তফা কামাল, মহাপরিচালক ড. মো. শামসুল আরেফিন, ফরিদ আহমেদ ভূইয়া, জিয়া উদ্দিন আহমেদ, মো. মইনুল ইসলাম, পরিচালক নিরু শামসুন নাহার, মীর মো. জয়নুল আবেদীন শিবলী, জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রণব কুমার ভট্টাচার্য্যসহ কমিশনের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত, ২১ নভেম্বর দুদকের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী। তবে সেদিন সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় রোববার এই প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২২, ২০১৬/আপডেট: ১৫৩৭ ঘণ্টা
এডিএ/এমজেএফ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।