বাগেরহাট: সুন্দরবনের দুবলার চরের আলোরকোলে ঐতিহ্যবাহী রাস উৎসবকে ঘিরে হরিণসহ বন্যপ্রাণী শিকার বন্ধ ও বনজ সম্পদ রক্ষায় কঠোর নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে বন বিভাগ।
রাস পূর্ণিমা উপলক্ষে আগামী মঙ্গলবার (২৪ নভেম্বর) থেকে সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের আলোরকোলে তিন দিনব্যাপী রাস মেলা ও রাস উৎসব শুরু হবে।
১৩২তম রাস উৎসবে এবারও দেশি-বিদেশি পূণ্যার্থীসহ প্রায় অর্ধলক্ষ পর্যটক অংশ নেবেন বলে আশা আয়োজকদের।
এদিকে, সুন্দরবনের ভেতরে এ উৎসবের আগে ও পরে হরিণসহ বন্যপ্রাণী শিকার ও পাচারের অভিযোগ ওঠে। ফলে এবার বন বিভাগের পাশাপাশি র্যাব, পুলিশ ও কোস্টগার্ডের একাধিক দল কাজ শুরু করেছে। ইতোমধ্যে বাতিল করা হয়েছে সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগে কর্মরত সব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারি ছাড়াও বন বিভাগের ২টি সহ প্রশাসনের অন্তত ৫টি ভ্রাম্যমাণ আদালত রাস মেলার সময় সুন্দরবনে কাজ করবে। এছাড়া সার্বিক নিরাপত্তাসহ হরিণ শিকাররোধে বনরক্ষীদের পৃথক ২০টি ভ্রাম্যমাণ দল টহলে থাকবে।
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. সাইদুল ইসলাম বাংলানিউজকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, রাস উৎসবকে ঘিরে যেকোনো বন্যপ্রাণী শিকাররোধে সর্বোচ্চ সতকর্তামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। শরণখোলা রেঞ্জের দুবলার চরের আলোরকোলে দর্শনার্থীদের যাতায়াতের জন্য নির্দিষ্ট ৮টি রুট নির্ধারণ করা হয়েছে।
এগুলো হলো, বাগেরহাট থেকে মংলার পশুর নদী দিয়ে চাঁদপাই রেঞ্জের ঢাংমারী, শরণখোলার বলেশ্বর নদী দিয়ে বগী, শরণখোলা স্টেশন হয়ে দুবলার চর দিয়ে আলোরকোল, খুলনা ও সাতক্ষীরা থেকে বুড়িগোয়ালিনী, কদমতলা, কৈখালী, কয়রা ও নলিয়ান স্টেশন হয়ে দুবলার চর আলোরকোল।
সূত্র জানায়, মঙ্গলবার প্রথম ভাটার সময়ে ওই ৮টি নৌরুট দিয়ে লঞ্চ, নৌকা ও ট্রলারযোগে পূণ্যার্থী ও দর্শনার্থীরা আলোরকোলের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করবেন। বন বিভাগের নির্ধারিত ১৩টি বন অফিস থেকে জনপ্রতি ৫০ টাকা দিয়ে রাস মেলায় যাওয়ার অনুমতিপত্র নিতে হবে।
এছাড়া এবার প্রবেশের ক্ষেত্রে পূণ্যার্থী ও দর্শনার্থীদের সবাইকে নিজ নিজ জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি জমা দিতে হবে। সুন্দরবনে প্রবেশের সাধারণ বিধি-বিধানের পাশাপাশি রাস উৎসবের সময় বাধ্যতামূলক কিছু শর্ত ও নিষেধাজ্ঞাও এবার আরোপ করা হয়েছে।
এগুলো হলো, ভ্রমণ শেষে একই রুট দিয়ে ফিরতে হবে ও সংগৃহীত পাস জমা দিতে হবে, অনুমতি ছাড়া বনে প্রবেশ করা যাবে না, সুন্দরবনে অবস্থানকালে গৃহপালিত হাঁস/মুরগি ছাড়া অন্য কোনো প্রাণীর মাংস বহন বা রান্না করা যাবে না, প্রতিটি নৌযানে মোট জনবলের জন্য পর্যাপ্ত দেশি জ্বালানি কাঠ রয়েছে কি না তা পরীক্ষার পর সংশ্লিষ্ট স্টেশন ফি দিয়ে বনে প্রবেশের অনুমতি নিতে হবে, বন বিভাগের চেকিং ছাড়া অন্য কোথাও নৌ যান রাখা যাবে না, খাবার ও অন্যান্য দ্রব্যাদি নদীতে বা যত্রতত্র ফেলা যাবে না, পূণ্যস্নান অনুষ্ঠানে আগত তীর্থযাত্রী ও দর্শনার্থীরা রাতে উৎসব স্থলের বাইরে অবস্থান করতে পারবেন না, রাতে চলাচল করা যাবে না, আবেদনপত্রের বাইরে অতিরিক্ত লোক বহন করা যাবে না, বন থেকে জ্বালানি সংগ্রহ করা যাবে না। এছাড়া, দর্শনার্থীর সঙ্গে অগ্নেয়াস্ত্র-বিস্ফোরক দ্রব্য রাখা যাবে না।
অপরদিকে, বাগেরহাট স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্র জানায়, রাস মেলায় অংশগ্রহণকারীদের জন্য ৩ জন চিকিৎসকসহ ১০ সদস্যের মেডিকেল টিম থাকবে।
রাস পূর্ণিমা উপলক্ষে রাস মেলা ও উৎসবকে ঘিরে সার্বিক নিরাপত্তা এবং বনপ্রাণী শিকারের বিষয়টি মাথায় রেখে আগামী বছর থেকে রাস উৎসবে আসতে ইচ্ছুকদের আগাম আবেদন করতে বলে জানান ডিএফও মো. সইদুল ইসলাম।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২২, ২০১৫
এসআর