ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বন কর্মকর্তাদের দুর্নীতি -২

৩০ টাকা বিক্রি, ৫ টাকা সরকারি কোষাগারে!

বেলাল হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০১৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০১৫
৩০ টাকা বিক্রি, ৫ টাকা সরকারি কোষাগারে! ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

শেরপুর (বগুড়া) থেকে ফিরে: বগুড়ার শেরপুর সামাজিক বনায়ন নার্সারি ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে (এসএফএনটিসি) চারা উৎপাদন এবং বিক্রিতে ব্যাপক দুর্নীতির আশ্রয় নেওয়া হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। এখানে ফলদ, বনজ ও ভেষজ প্রজাতির বিভিন্ন গাছের চারা রোপণ করা হয়।



এসব চারা সব শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে প্রতিটি পাঁচ টাকায় বিক্রির নিয়ম থাকলেও তা মানা হয় না। বরং পাঁচ টাকার একেকটি গাছ ৩০ টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি করা হয়। তবে সরকারি কোষাগারে পাঁচ টাকাই জমা পড়ে। বাকি টাকা সংশ্লিষ্টরা ভাগাভাগি করে পকেটে ভরেন।

গত ১৬ নভেম্বর শেরপুর সামাজিক বনায়ন নার্সারি ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে (এসএফএনটিসি) সরেজমিনে অনুসন্ধানকালে অনিয়ম-দুর্নীতির এসব অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, চারা রোপণের বেডে বিভিন্ন প্রজাতির চারা শোভা পাচ্ছে। তবে কোনোটি অনেক বড়, আবার কোনোটি একেবারে ছোট। বেডের ভেতরের অবস্থা একেবারো এলোমেলা। এসব বেডে কোনো মালির হাত পড়ে বলে দেখে মনে হয় না। অথচ চারা রোপণের সময় অনুসারে এমনটা হওয়ার কথা ছিল না।

কেননা, সবগুলো চারার বীজ ফেব্রুয়ারি মাসে রোপণ করা হয়েছে। এ হিসেবে চারা গাছগুলোর বয়স নয় মাস চলেছে। কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন। বেডে তিন সারি একেবারে ছোট চারা। আর পুরো অংশের চারাগুলো অনেক বড় হয়ে গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এ বছর ফলদ, বনজ ও ভেষজ মিলে বিভিন্ন প্রজাতির ২০ হাজার চারা রোপণ করা হয়েছে। এসব চারার মধ্যে রয়েছে মেহগনি, সেগুন, নিম, আকাশমনি, হাইব্রিড আকাশমনি, কাঁঠাল ও আগর। ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে এসব চারাবীজ রোপণ করা হয়। জুলাই-আগস্ট থেকে এসব চারা বিক্রি শুরু হয়েছে। এ পর্যন্ত মাত্র হাজার দেড়েকের মতো চারা বিক্রি হয়েছে।

নিয়ম অনুসারে এসব চারার প্রতিটির উৎপাদন ব্যয় মাত্র পাঁচ টাকা। সে হিসেবে বিক্রি মূল্যও পাঁচ টাকা। কিন্তু ছোট চারা পাঁচ টাকায় বিক্রি করা হলেও বড় চারা অনেক বেশি দামে বিক্রি করা হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বন বিভাগের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, সামাজিক বনায়ন বাড়াতে সরকার রাজস্ব খাত থেকে এসব চারা রোপণের জন্য অর্থ বরাদ্দ দিয়ে থাকে। এ কারণে এসব প্রজাতির প্রতিটি চারার পাঁচ টাকা উৎপাদন ব্যয় অনুসারে পাঁচ টাকা করেই বিক্রি করার নিয়ম। কিন্ত বন বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্তরা চারা বিক্রির ক্ষেত্রে এ নিয়ম মানেন না।

তারা ছোট চারাগুলো প্রতিটি পাঁচ টাকায় বিক্রি করলেও বড় চারার বেলায় বাড়তি দাম নেন। বড় চারাগুলো তারা ১৫-৩০ টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি করে থাকেন। এখান থেকে নিয়মানুসারে উৎপাদন ব্যয় পাঁচ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিয়ে বাকিটা নিজেদের পকেটে ওঠান বলে সূত্রটি জানায়।

শেরপুর সামাজিক বনায়ন নার্সারি ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ফরেস্ট রেঞ্জার আয়নাল হক এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বাংলানিউজকে বলেন, বাড়তি দামে চারা বিক্রির প্রশ্নই ওঠে না। উৎপাদন ব্যয় অনুসারে পাঁচ টাকায় প্রতিটি চারা বিক্রি করা হয়।

তাহলে বেশ কয়েকদিন ধরে যে চারাগুলো বিক্রি হয়নি সেই বড় বড় চারাগুলো কোথায় গেলো- এমন প্রশ্নের উত্তরে বন বিভাগের এই কর্মকর্তা জানান, অনেক গাছ নষ্ট হয়ে গেছে। সেগুলো কেটে ফেলা হয়েছে। সেখানে আবার নতুন করে চারা রোপণ করা হয়েছে। আর এসবের হিসাবের খাতা দেখতে চাইলে তিনি এ প্রতিবেদককে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করার পরামর্শ দেন।

বাংলাদেশ সময়: ০০২০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০১৫
এমবিএইচ/এএসআর

** হাতুড়ির সিলেই অবৈধ কাঠ বৈধ!

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।