ব্রিটিশ লেবার এমপি টিউলিপ সিদ্দিক নিজেকে বাংলাদেশি নাগরিক নন বলে যে দাবি করেছিলেন তা সত্য নয় বলে অভিযোগ উঠেছে। বাংলাদেশ ও ব্রিটেনের দুটি পত্রিকার যৌথ অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, অতীতে তিনি বাংলাদেশি পাসপোর্ট ও জাতীয় পরিচয়পত্রও (এনআইডি) গ্রহণ করেছিলেন।
টিউলিপ সিদ্দিক বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানার মেয়ে।
বাংলাদেশে তার বিরুদ্ধে একটি দুর্নীতির মামলা বিচারাধীন।
বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তরিকুল ইসলাম দ্য টাইমসকে জানিয়েছেন—টিউলিপের পাসপোর্ট, এনআইডি এবং ট্যাক্স আইডির রেকর্ড পাওয়া গেছে। দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুল মোমেনও নথিগুলোর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। নির্বাচন কমিশনও এই তথ্য মিলিয়ে দেখেছে।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক পত্রিকাটি বলেছে—টিউলিপ অতীতে যেসব বক্তব্য দিয়েছেন নতুন তথ্যগুলোর সঙ্গে তা সরাসরি সাংঘর্ষিক। তিনি ২০০১ সালের সেপ্টেম্বরে লন্ডনে বাংলাদেশি পাসপোর্ট গ্রহণ করেছিলেন। তখন তার বয়স ছিল ১৯ বছর। এ ছাড়া ২০১১ সালের জানুয়ারিতে তিনি একটি বাংলাদেশি জাতীয় পরিচয়পত্রও পান। বাংলাদেশের পাসপোর্ট অফিস ও নির্বাচন কমিশনের ডেটাবেইসেও এসংক্রান্ত রেকর্ড মিলে গেছে। উভয় ক্ষেত্রেই তার স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে উল্লেখ ছিল ঢাকার ধানমণ্ডির বাড়ি, যা তার খালা ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মালিকানাধীন।
দ্য টাইমসের তথ্য মতে, টিউলিপ সিদ্দিক বারবার দাবি করেছেন—তিনি কোনো বাংলাদেশি পরিচয়পত্র পাননি এবং শৈশবের পর থেকে পাসপোর্টও রাখেননি। গত আগস্টে তার আইনজীবী স্টিফেনসন হারউডও ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেছিলেন, ‘টিউলিপ কখনো বাংলাদেশি জাতীয় পরিচয়পত্র বা ভোটার আইডি পাননি। ’
তবে এসব পরিচয়ের বিষয়ে নতুন নথি প্রকাশিত হওয়ার পর তিনি ও তার দল (লেবার পার্টি) একে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রপাগান্ডা’ হিসেবে অভিহিত করেছে। তাদের দাবি, এসব নথি জাল এবং বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ তার সুনাম ক্ষুণ্ন করার ষড়যন্ত্র করছে।
আইন অনুযায়ী বাংলাদেশে জন্মগ্রহণকারী কিংবা বাংলাদেশি পিতা-মাতার সন্তান স্বয়ংক্রিয়ভাবে নাগরিকত্ব পান। টিউলিপ সিদ্দিক ব্রিটেনে জন্মগ্রহণ করলেও তাঁর মা-বাবা উভয়ই বাংলাদেশি হওয়ায় তিনি দ্বৈত নাগরিকত্বের অধিকারী। তবে তিনি বহুবার প্রকাশ্যে নিজেকে শুধু ব্রিটিশ পরিচয়ে তুলে ধরেছেন। ২০১৭ সালে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি ব্রিটিশ এমপি, আমি বাংলাদেশি নই। ’
টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে বর্তমানে বাংলাদেশে একটি দুর্নীতি মামলা চলছে। অভিযোগ রয়েছে, তিনি খালা শেখ হাসিনার প্রভাব খাঁটিয়ে মা ও ভাই-বোনদের জন্য জমি বরাদ্দ নিয়েছিলেন। তবে টিউলিপ এই অভিযোগকেও অস্বীকার করে মামলাটিকে ‘রাজনৈতিক নিপীড়ন’ বলে আখ্যা দিয়েছেন।
২০১১ সালে যখন টিউলিপের বাংলাদেশি এনআইডি ও পাসপোর্ট ইস্যু হয়েছিল, সেই সময়টিতে তিনি ঢাকায় সরকারি অনুষ্ঠানেও অংশ নেন। খালা শেখ হাসিনার সঙ্গে বিভিন্ন বৈঠক ও অনুষ্ঠানে তাকে দেখা যায়। এমনকি জাতিসংঘ অধিবেশন ও মস্কো সফরেও তিনি হাসিনার সঙ্গে ছিলেন।
বাংলাদেশে দুর্নীতির অভিযোগে মামলা চালু হওয়ায় চাপের মুখে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে যুক্তরাজ্যের অ্যান্টি-করাপশন মন্ত্রীর পদ ছাড়তে বাধ্য হোন টিউলিপ সিদ্দিক। তবে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সমর্থন তিনি ধরে রেখেছিলেন।
টিউলিপের মিথ্যাচার নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছে আরেক ব্রিটিশ দৈনিক এক্সপ্রেস। পত্রিকাটির প্রতিবেদনের শিরোনামে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, ‘স্টারমারের জন্য নতুন দুঃস্বপ্ন: টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে বাংলাদেশি নাগরিকত্ব নিয়ে মিথ্যা বলার অভিযোগ’।
এনডি