ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বাহাদুরাবাদ-বালাসী ঘাট

অচিহ্নিত-অনিরাপদ অদ্ভুত এক নৌ-রুট!

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৩৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০১৫
অচিহ্নিত-অনিরাপদ অদ্ভুত এক নৌ-রুট! ছবি : বাংলানিউজটোয়েটিফোর.কম

বাহাদুরাবাদ (জামালপুর) থেকে ফিরে: অবহেলিত একটি নৌ-রুটের নাম বাহাদুরাবাদ-বালাসী ঘাট। ঘাট নিয়ন্ত্রণকারী সরকারি সংস্থা এ ঘাট থেকে রাজস্ব আদায় ছাড়া কোনো দায়িত্ব পালন করছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।



এমনকি নৌ-রুটটিকে চিহ্নিত করে ফ্ল্যাগ টানানোর মতো সামান্য দায়িত্বটুকুও পালন করেনি অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ।   যারা বছরান্তে ইজারা দিয়ে অর্থ আদায় করছে।

ফ্ল্যাগ না থাকায় প্রতিনিয়ত পথ ভুল করছে চলাচলকারী নৌকাগুলো। যে কারণে চরম বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন যাত্রীরা। বিশেষ করে শীত মৌসুম এ সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করে। তখন খুব জরুরি প্রয়োজন ছাড়া এ রুটে কেউ পা মাড়ান না।

শীতের দিনে একটু কুয়াশা পড়লেই সঠিক পথ চিনতে ব্যর্থ হচ্ছেন মাঝিরা। অনেক সময় ভুল পথে এগিয়ে গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা মাঝ নদীতে আটকে থাকতে হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবে এ পথটি পার হতে দুই থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টা প্রয়োজন হয়। কিন্তু একবার পথ ভুল হলে পরিস্থিতি কি হতে পারে তা সহজেই অনুমেয়।

বাহাদুরাবাদ (ফুটানিরবাজার)-বালাসী ঘাটটি গাইবান্ধা ও জামালপুর জেলাকে সংযুক্ত করেছে। এক সময় রেল চলাচল করতো, তখন জমাজমাট ছিলো রুটটি। ফেরিও চলাচল করতো তখন।

যমুনা সেতু নির্মাণের পরে এ রুটের ট্রেনগুলো বগুড়া-শান্তাহার-নাটোর ঘুরে বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে ঢাকায় যাতায়াত করছে। এরপর থেকে বন্ধ হয়ে গেছে ফেরি চলাচল। ইজারদারের ইঞ্জিনচালিত নৌকাই এখন যাত্রীদের প্রধান ভরসা।

গত বছর ঘাট দু’টির ডাক হয়েছে ৬৩ লাখ টাকা। প্রায় ২২ কিলোমিটারের এ রুটে নদীতে রয়েছে অসংখ্য শাখা প্রশাখা। ওপর থেকে দেখলে খানিকটা মাকড়সার জালের মতো মনে হবে।

রেজা নামের একজন মাঝি বাংলানিউজকে জানান, এ পথে কোথাও কোনো পথনির্দেশক চিহ্ন নেই। চোখের আন্দাজে পথ চলতে হয়। কিন্তু কুয়াশা পড়লে তখন তার বিশ বছরের চেনা পথটির দিশা খুঁজে পান না তিনি।

তিনি জানান, দুই তীরে থাকা গাছপালা ও তীরকে দেখে পথ চলতে হয়। কিন্তু কুয়াশা পড়লে কয়েক হাত দূরেও দেখা যায় না। তখন পুরোপুরি আন্দাজে চলতে হয়। আর আন্দাজে চলতে গিয়ে চরম মূল্য দিতে হয় প্রায়শই।

কুয়াশার কারণে একাধিক দিন তাকে কয়েক ঘণ্টা বাড়তি ঘুরতে হয়েছে। একদিন প্রায় ৬ ঘণ্টা লেগেছিলো নদীটি পার হতে। শুধু কি কুয়াশা? ডাকাতদের আতঙ্কও তাদের প্রতিনিয়ত তাড়া করে ফেরে।

তিনি জানান, বিকেল ৫টা পর্যন্ত থাকে পুলিশি পাহারা। পুলিশ চলে গেলে সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয় এলাকাটি। যে কারণে খুব জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বিকেলের পর আর এ রুটে পা বাড়ান না কেউ। এমনকি ইজারদাররাও দুপুর আড়াইটার পর আর কোনো নৌকা ছাড়েন না ডাকাতের ভয়ে।

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা মনোয়ার হোসেন চাকরি করেন জামালপুরে একটি এনজিওতে। প্রতিনিয়ত এ রুট দিয়েই চলাচল করেন। তিনি বাংলানিউজকে জানান, একবার তার মায়ের অসুস্থতার খবর শুনে তাড়াহুড়ো করে বাড়ির পথে রওয়ানা দেন। ঘাটে এসে আড়াইটার নৌকাও পেয়ে যান।

সেদিন ছিল অনেক কুয়াশা। দুই ঘণ্টা চলার পর দেখেন, নদী শেষ। মাঝি আবিষ্কার করেন তারা ভুল করে নদীর মরা শাখায় প্রবেশ করেছেন। ফের নৌকা ফিরিয়ে রওয়ানা দেন। কিন্তু কোনো দিকেই কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। এ ভাবে ঘুরতে ঘুরতে সন্ধ্যা হয়ে যায়।

আর তারা যা ভাবছিলেন তাই ঘটে যায়। হঠাৎ ডাকাত দল তাদের নৌকায় আক্রমণ করে। নৌকায় উঠেই একজন যাত্রীকে কোপ দেয়। ভয়ে অন্য যাত্রীরা জড়োসড়ো হয়ে যান। যার কাছে যা পেয়েছে সব নিয়ে চলে যায়।

ডাকাতরা চলে গেলে নৌকা আবার চলতে শুরু করে। রাত পৌনে ৯টায় পৌঁছান বালাসী ঘাটে। বাড়ি যেতে হলে তাকে ট্রেনে উঠতে হবে। আর সেই ট্রেন পাওয়া যায় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার মধ্যে। গাইবান্ধা রেলস্টেশনে গিয়ে দেখেন, ট্রেন চলে গেছে। দিশহারা হয়ে যান। অন্যদিকে বাড়ি থেকেও খবর আসতে থাকে, তার মায়ের অবস্থা জটিল।

মনোয়ার হোসেন বলেন, মানুষের জীবনে যেনো এমন মুহূর্ত না আসে। নদীতে যদি  পথ নির্দেশক পতাকা থাকতো তাহলে এ পরিস্থিতিতে পড়তে হতো না। ঘাট দু’টি থেকে প্রায় পৌনে এক কোটি টাকা ইজারা আদায় করে সরকার।

সেখানে কয়েকটি বাঁশ দিয়ে রুট চিহ্নিত করতে এতো গাফিলতি কেন? রাষ্ট্রের কি কোনো দায় নেই? শুধু ইজারা আদায় করা ছাড়া- এমন আক্ষেপ প্রকাশ করেন মনোয়ার হোসেন।

বালাসী ঘাট থেকে সকাল ১০টা, দুপুর ১২টা এবং আড়াইটায় নৌকা ছেড়ে যায়। আবার ফুটানিরবাজার থেকে সকাল সাড়ে ৮টা, সাড়ে ১১টা ও দুপুর আড়াইটায় নৌকা ছেড়ে যায়। নদী পার হওয়ার জন্য প্রত্যেক যাত্রীর কাছ থেকে ১শ’ টাকা এবং মোটরবাইকের জন্য আরও ১শ’ টাকা আদায় করা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৩০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০১৫
এসআই/এএসআর

** স্যার এবারের মতো...
** যে গ্রামে ৯০ শতাংশ বাল্যবিয়ে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।