ময়মনসিংহ: বিভাগীয় কমিশনার নিয়োগের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে নবগঠিত ময়মনসিংহ বিভাগের কার্যক্রম। আগামী মাসের প্রথম অথবা দ্বিতীয় সপ্তাহে বিভাগীয় কমিশনার হিসেবে নিজ কর্মস্থলে যোগ দিতে পারেন পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের বর্তমান অতিরিক্ত সচিব জি এম সালেহ উদ্দিন।
দেশের অষ্টম এ বিভাগের বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় হিসেবে আপাতত কাজ চালাতে ময়মনসিংহ জেলা পরিষদের ৩ নম্বর ভবনকে বেছে নেওয়া হয়েছে। বিভাগীয় পুলিশ উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) কার্যালয়ও স্থাপিত হবে এ ভবনে। ফলে এখান থেকে সরিয়ে নিতে হচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সমন্বিত কার্যালয় এবং কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের কার্যালয়।
অথচ সরকার নির্ধারিত বাড়িভাড়া দর অনুযায়ী অফিসের জন্য এখনো প্রত্যাশামতো বাড়ি পাননি ওই দুই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। নগরীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় মাত্রাতিরিক্ত বাড়িভাড়ার কারণে অপেক্ষাকৃত কম ভাড়ায় বাড়ি খুঁজতে হন্যে হয়েই ছুটতে হচ্ছে তাদের।
বাড়ির পেছনে ছুটতে গিয়ে রীতিমতো ঘুম হারাম সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের।
গত ১৪ অক্টোবর ময়মনসিংহ, জামালপুর, শেরপুর ও নেত্রকোনা জেলা নিয়ে ময়মনসিংহ বিভাগের গেজেট প্রকাশিত হয়। এরপরই বিভাগীয় কমিশনার ও ডিআইজিপি’র কার্যালয় স্থাপনের জন্য ঠিক করা হয় জেলা পরিষদের ৩ নম্বর ভবনটিকে।
এ ভবনের দোতলায় ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার ও নিচতলায় বিভাগটির পুলিশ উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) বসবেন। বিভাগীয় কমিশনারের অফিসের জন্য লাখ পাঁচেক টাকার আসবাবপত্র কেনা হচ্ছে। ভবনের ভেতরে-বাইরে চুনকাম করা হচ্ছে। তবে এখনো পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) পদে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। শিগগির এ পদেও নিয়োগ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে একটি সূত্র।
এ ভবনে থাকা দুদকের ৩ জেলার সমন্বিত কার্যালয় এবং কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের কার্যালয় দু’টিকে সেজন্য সরিয়ে নিতে হচ্ছে।
সূত্র জানায়, ২০০৯ সালে সরকার নির্ধারিত বাড়িভাড়া দর অনুযায়ী মাসিক ২৬ হাজার টাকায় জেলা পরিষদ থেকে এ বাড়িটির দোতলা ভাড়া নেয় জেলা দুদক। আর ১৬ হাজার টাকায় নিচতলা ভাড়া নেয় কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের কার্যালয়।
সূত্র মতে, গত ৩ নভেম্বর ওই দুই প্রতিষ্ঠানকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বাড়ি ছাড়ার জন্য চিঠি দেয় জেলা পরিষদ। কিন্তু সরকার নির্ধারিত ৬ টাকা বর্গফুট দর অনুযায়ী এখনো বাড়ির ব্যবস্থা করতে পারেনি দুদক ও কল-কারখানা পরিদর্শন অধিদফতর।
দুদক কর্মকর্তারা জানান, গণপূর্ত বিভাগের সরকার নির্ধারিত বাড়িভাড়া দর প্রতি বর্গফুট ৬ টাকা। কিন্তু নগরীর পুলিশ লাইন, জামতলা, গোহাইলকান্দি, বুড়াপীরের মাজার, জিলা স্কুল রোড, ভাটিকাশর, পণ্ডিতপাড়াসহ কোনো এলাকায়ই এ মূল্যের বর্গফুট দরে অফিসের জন্য বাড়ি পাওয়া যাচ্ছে না।
এসব এলাকায় বাড়ির প্রতি বর্গফুটের ভাড়া গড়ে ৫০ টাকা। সে হিসেবে এখানকার মতো অফিস করতে গেলে প্রতি মাসে ভাড়া দরকার প্রায় ২ লাখ টাকা। কিন্তু এতো টাকার বরাদ্দ নেই। ফলে বাড়ি খুঁজে না পেয়ে চরম অস্বস্তির মধ্যে সময় কাটছে দুদকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের।
দুদকের সহকারী পরিদর্শক সাইফুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, ৩ জেলার এ অফিসের জন্য কমপক্ষে ১২ থেকে ১৫ কক্ষ প্রয়োজন। কিন্তু ভাড়া যেমন বেশি, তেমনি এতো বড় বাড়ি মেলানোও দুষ্কর। ফলে শহরতলীতে অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ জায়গায়ই এ অফিস স্থানান্তর করতে হবে।
অফিসের জন্য বাড়ি খুঁজতে গিয়ে নিজেদের ঘুম হারামের কথা জানান দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, নির্দেশনা মোতাবেক এ ভবন ছাড়ার বিষয়ে আমরা আন্তরিক। গত একমাস ধরে নতুন বাড়ির সন্ধানে করতে দিন-রাত কাজ করছেন আমাদের সব কর্মকর্তারা। কিন্তু নির্ধারিত দরে চাহিদামতো বাড়ি মিলছে না। এরপরেও আমরা চেষ্টা করছি। ডিসেম্বরের মধ্যে এ ভবন ছেড়ে দেবো।
দুদকের মতোই বিপাকে পড়েছেন নিচ তলার কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের কর্মকর্তারাও। এ অধিদফতরের শ্রম পরিদর্শক (সাধারণ) আব্দুল মোতালেব জানান, ১৬ হাজার টাকায় এ ভবন ভাড়া নিলেও এ টাকায় নতুন কোনো অফিস পাওয়া যাচ্ছে না। এ বিষয়টি শ্রম মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে। এখনো কোনো নির্দেশনা পাওয়া যায়নি।
ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মোস্তাকিম বিল্লাহ ফারুকি বাংলানিউজকে জানান, ডিসেম্বরের প্রথম দিকেই এখানে আসতে পারেন বিভাগীয় কমিশনার। ওই সময়ের আগেই তাদের এ ভবন ছেড়ে দিতে হবে। অনেকদিন আগেই তাদের এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। জেলা পরিষদই সব ব্যবস্থা করবে।
ময়মনসিংহ জেলা পরিষদের প্রশাসক অ্যাডভোকেট জহিরুল হক খোকা বাংলানিউজকে বলেন, ওই দুই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের ভবনটি খালি করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নতুন বিভাগীয় কমিশনারকে বরণ করে নিতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০১৫
এএসআর