ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

দিন-রাত চলছে মেট্রোরেলের কাজ

ইকরাম-উদ দৌলা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫২২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০১৫
দিন-রাত চলছে মেট্রোরেলের কাজ ছবি: দীপু মালাকার- বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: রাজধানীতে যানজট নিরসনে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় হাতে নিয়েছে স্বপ্নের প্রকল্প ঢাকা মেট্রোরেল। এতে যেমন বাঁচবে হাজার হাজার শ্রমঘণ্টা, তেমনি কমবে নগরবাসীর ভোগান্তি।


 
ইতোমধ্যে প্রকল্পের মূল কাজ ২০১৭ সালে শুরু করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এর অংশ হিসেবে বর্তমানে চলছে মাটি পরীক্ষার কাজ। এ কাজ মাঝামাঝি অবস্থায় রয়েছে। কয়েক মাস আগে এ কাজ মিরপুর-১২ নম্বর থেকে শুরু হয়েছে, তা শিগগিরই মতিঝিলে গিয়ে শেষ হবে।
 
বুধবার (২৫ নভেম্বর) দিবাগত রাত দেড়টা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি (ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র) পেরিয়ে বাংলা একাডেমির রোড ধরে এগোতেই চোখে পড়ল হলুদ বেরিকেড। যেখানে হলুদ রঙের ডিজিটাল ব্যানার টাঙিয়ে ধীরে চলাচলের জন্য সাবধানবাণীও দেওয়া হয়েছে। আবার লাল রঙের বাতিও জ্বালানো হয়েছে।

দূর থেকে দেখে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো তৎপরতা মনে করে একটু ভীত হলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই। একটু একটু করে কাছে গেলেই সেই ভীতির ভাবটা উবে গিয়ে চলে আসে প্রীতিকর কিছু ভাবনা। কী সুখকর বিষয়! এই রাস্তার ওপর দিয়েই চলবে রেলগাড়ি। কোনো ট্রাফিক নেই। কর্মস্থলে দেরিতে উপস্থিতির উদ্বেগ নেই। নেই শ্রমঘণ্টার অপচয় কিংবা ভীড়ে গাদাগাদি করে দাঁড়িয়ে বা বাফারে ঝুলে শক্তিক্ষয়ের ক্লান্তি।

অটোরিকশা থেকে নেমেই কথা হলো একটি বেসরকারি কোম্পানির নিরাপত্তা রক্ষীর সঙ্গে। শামীম নামের নিরাপত্তা রক্ষী জানালেন, রাতভর কাজ করে সকাল ৮টায় চলে যাবেন। তার স্থলে সকাল থেকে আরেকজন কাজ করবেন মেট্রোরেলের এ প্রকল্পে ।
 
মাটি পরীক্ষার জন্য গর্ত খোঁড়া হচ্ছে রাস্তার ঠিক মাঝামাঝি। ভোলার মোহাম্মদ রাসেল একমনে কোদাল চালিয়ে যাচ্ছেন। দম ফেলে ফেলে তাল মিলিয়ে হুহ্ হুহ্ শব্দে শ্বাস ছাড়ছেন তিনি। কোদালে উঠে আসছে ইট, পাথর আর মাটির মিশ্রণ। ভরছেন পাত্রে। অন্যজন তা ফেলছেন পাশেই রাস্তার ওপর। এভাবেই তাদের কোদাল চলছে স্বপ্ন পূরণের দিকে।
 
রাসেল বাংলানিউজকে বলেন, মাটি পরীক্ষার কাজের শুরু থেকেই তিনি সম্পৃক্ত আছেন। এ কাজ মিরপুর ১২ নম্বর থেকে শুরু হয়েছে। শেষ হবে মতিঝিলে গিয়ে। এরপর আবার উত্তরার দিকে কাজ চলবে।
 
দিন-রাত সমান তালেই মেট্রোরেলের কাজ চলছে-যোগ করেন তিনি।
 
ভোলার আরেক সন্তান মোহাম্মদ আব্দুল কুদ্দুস। অন্য একটি গর্ত খোঁড়ার কাজ করছিলেন। তিনি বলেন, ইঞ্জিনিয়াররা রাতে থাকেন না। তাদের পূর্ব নির্দেশনা অনুযায়ী রাতভর কাজ চলে।
 
কুদ্দুস বলেন, মাটি পরীক্ষা শেষ হলেই শুরু হবে সড়কের ওপর দিয়ে রেলওয়ে তৈরির জন্য খুঁটি বসানোর কাজ।
 
এ প্রকল্পের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের নাম এইচআইটি পাওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং। আর কনসাল্টেন্ট হিসেবে এনকেডিএম অ্যাসোসিয়েশন কাজ করছে।
 
প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে উত্তরা থেকে মতিঝিল (শাপলা চত্বর) পর্যন্ত মেট্রোরেল নির্মাণ করা হবে। এরমধ্যে জাইকা (জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি) দেবে ১৬ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। আর সরকার জোগাবে পাঁচ হাজার ৪০০ কোটি টাকা।

প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে রাস্তার মাঝ বরাবর উপর দিয়ে। এতে মোট ২৪ জোড়া মেট্রোরেল চলাচল করবে। উত্তরা থেকে শুরু হয়ে মিরপুর-ফার্মগেইট-শাহবাগ হয়ে মতিঝিল পর্যন্ত যাবে এ মেট্রোরেল। রেল চলাচল শুরু হলে এপ্রান্ত থেকে ওপার যেতে সময় লাগবে ৩৬ মিনিট।
 
প্রতি মেট্রোরেলের ৬টি বগিতে প্রায় ১ হাজার ৮০০ যাত্রী চলাচল করতে পারবে। যাত্রী উঠা-নামার জন্য মোট ১৬টি স্টেশন হবে। এগুলো হলো- উত্তরা (উত্তর), উত্তরা (সেন্টার), উত্তরা (দক্ষিণ), পল্লবী, মিরপুর-১১, মিরপুর-১০ নম্বর, কাজীপাড়া, তালতলা, আগারগাঁও, বিজয় সরণি, ফার্মগেইট, সোনারগাঁও, জাতীয় জাদুঘর, দোয়েল চত্বর, জাতীয় স্টেডিয়াম এবং বাংলাদেশ ব্যাংক এলাকায়।
 
ইতোমধ্যে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আশা প্রকাশ করেছেন, ২০১৯ সালের মধ্যেই এ প্রকল্পের কাজ শেষ হবে।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৫২২ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০১৫
ইইউডি/এমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।