ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

৭ বছরের সুমাইয়াও এখন প্রশিক্ষক!

শাহজাহান মোল্লা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮২৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০১৫
৭ বছরের সুমাইয়াও এখন প্রশিক্ষক! ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

রায়গঞ্জ (সিরাজগঞ্জ) থেকে ফিরে: নদী অধ্যূষিত এ দেশে পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর হার অনেক বেশি। কিন্তু একটু সর্তক থাকলে বা প্রতিরোধের পদ্ধতি জানা থাকলে সে হারকেও যে হার মানানো যায়, তা প্রমাণ করেছে ৭ বছরের সুমাইয়া খাতুন।


 
সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ, বাংলাদেশ (সিআইপিআরবি) নামক একটি বেসরকারি সংস্থা থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে সুমাইয়া নিজেই এখন প্রশিক্ষক। সিরাজগঞ্জ জেলার রায়গঞ্জ উপজেলার ধানগড়া ইউনিয়নের শিমলা গ্রামের বাসিন্দা সুমাইয়া। পড়ে চতুর্থ শ্রেণিতে। এই বয়সের একটি শিশুর নিজেই যেখানে ঝুঁকিতে থাকার কথা, সেখানে নিজে তো নিরাপদই অন্যদেরও প্রশিক্ষণ দিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে যাচ্ছে।
 
কিভাবে পানিতে পড়লে একটি মানুষকে উদ্ধার করে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া যায়, তার পুরোটাই রপ্ত করেছে এই শিশু।
 
তার কথাতেই জানা যায় কিভাবে পানিতে পড়া মানুষটিকে উদ্ধার করতে হয় এবং কিভাবে তার জীবন রক্ষা করা সম্ভব।

সুমাইয়া জানায়, কখনো কাউকে পানিতে ডুবে থাকতে দেখলে প্রথমে চিৎকার করি, এই ভাই, এই ভাই, কে আছেন, এখানে একজন লোক পানিতে পড়ে আছেন। আসুন একটু ধরুন, তাকে উদ্ধার করি। এভাবে ডাকতে থাকি। এরপর কাউকে না পেলে বড় কোনো লাঠি বা রশি ফেলে দিয়ে পানিতে পড়া লোকটিকে তা আঁকড়ে ধরার অনুরোধ করি। এরপর সেই রশি বা লাঠি টেনে টেনে তাকে উদ্ধার করে আনি।
 
এরপর পানি থেকে উঁচু স্থানে সমান জায়গায় রেখে প্রথমে মুখের কাছে কান পেতে শ্বাস আছে কি-না, সেটি পরীক্ষা করি। এরপর মুখে শ্বাস, বুকের বামপাশে চাপ দিয়ে ডুবে যাওয়া লোকটির পেট থেকে পানি বের করার চেষ্টা করি। পানি বের করে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেই।
 
সুমাইয়া জানায়, কাউকে সাহায্যে করতে পারলে ভালো লাগে। তাছাড়া আমি এখন আমার বন্ধুদেরও শিখাই।

সুমাইয়ার মতো সিআইপিআরবি থেকে সাঁতার শিখে উদ্ধার (রেসকিউ) পদ্ধতি রপ্ত করেছে বর্ষা আক্তার (তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী), তামান্না, আনিকা তাবাসুম, জেবা তাছিন। এদের প্রত্যেকেরই বয়স ৫ থেকে ৭ বছর। এরা সবাই এখন পুরোদস্তুর প্রশিক্ষক।
 
ওরা সাঁতার শিখে নিজেদের জীবন রক্ষার পাশাপাশি অন্যদের উদ্ধারে ভূমিকা রাখছে।

পানিতে ডুবে মারা যাওয়ার কারণ ও প্রতিকার নিয়ে গবেষণা করে ইন্টারন্যাশনাল ড্রাউনিং রিসার্চ সেন্টার, বাংলাদেশ (আইডিআরসিবি)।

প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ডা. আমিনুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, পানিতে ডুবে মারা যাওয়ার ঘটনার ৮০ শতাংশই সাঁতার না জানার কারণে ঘটে থাকে। অথচ কেউ যদি ২৫ মিটার সাঁতার কাটতে পারেন, তাহলেই তাকে সুরক্ষা দেওয়া সম্ভব।  
 
আইডিআরসিবি’র গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি বছর  ১ থেকে ৪ বছর বয়সী ১২ হাজার শিশু মারা যায় শুধুমাত্র পানিতে পড়ে। এছাড়া ৪ বছরের উর্দ্ধে আরো ৬ বছর হাজার লোকের  মৃত্যু ঘটে পানিতে ডুবে।
 
পানিতে ডুবে মৃত্যু হ্রাস করতে ২০০৫ সালে সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জে ‘সুইম সেফ’ নামে একটি প্রকল্প চালু করে সিআইপিআরবি। এ প্রকল্পের আওতায় শিশুদের সাঁতার শেখানোর পাশাপাশি উদ্ধার পরবর্তী কার্যক্রম শেখানো হয়।  
 
সুইম সেফ প্রজেক্টের প্রকল্প সমন্বয়ক ডা. ইখতিয়ার আহমেদ বাংলানিউজকে জানান, প্রকল্প শুরু হওয়ার আগে এ এলাকায় প্রতি ৪ মাসে প্রায় ৭০টি শিশু পানিতে পড়ে অথবা বিষক্রিয়ায় মারা যেতো। এখন সেই সংখ্যা ২০-২৫ শতাংশে নামিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।
 
রায়গঞ্জ ইউনিয়নের সুইম সেফ প্রজেক্টের প্রশিক্ষক মো. সোহাগ বাংলানিউজকে জানান, প্রকল্প চালু হ্ওয়ার আগে এই এলাকায় অনেক শিশুই পানিতে ডুবে মারা যেতো। সুইম সেফ চালু করার পর তা অনেকাংশে হ্রাস করা সম্ভব হয়েছে।
 
এ প্রশিক্ষক জানান, যে শিশুটি কিছুই জানে না, তাকেই এক সপ্তাহের মধ্যে সাঁতার শেখানো সম্ভব। এখানে ৪ বছর থেকে ১৭ বছর পর্যন্ত শিশুদের সাঁতার শেখানো হয়।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৮২৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০১৫
এসএম/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।