ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

কপোতাক্ষের মাটি যাচ্ছে ইটভাটায়!

তপন চক্রবর্তী, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৫, ২০১৫
কপোতাক্ষের মাটি যাচ্ছে ইটভাটায়! ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

তালা (সাতক্ষীরা): প্রশাসনের নির্দেশনা উপেক্ষা করে কপোতাক্ষ নদের খননকৃত মাটি নিচ্ছেন ইটভাটা মালিকরা। প্রতিদিনই ভ্যান, ট্রলিসহ বিভিন্নভাবে নদ তীরের মাটি ইটভাটার কাজে লাগাচ্ছেন তারা।



ফলে, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ হুমকির মুখে পড়ছে। এতে আগামী বর্ষা মৌসুমে কপোতাক্ষ তীরে আবারও জলাবদ্ধতা দেখা দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, তালা উপজেলার কপোতাক্ষ নদের তীরে অবস্থিত ৮টি ইটভাটা এভাবেই মাটি নিচ্ছে। উপজেলার গোনালী এলাকার গোল্ডেন ব্রিকস ও আরবিএস ব্রিকসও নদ তীরের বেড়িবাঁধের মাটি নিয়ে ভাটা পরিচালনা করছে। ট্রলি ও ভ্যানযোগে প্রতিদিন হাজার হাজার ঘনফুট মাটি বহন করে ভাটায় নিচ্ছে তারা।

পানি উন্নয়ন বোর্ড কেশবপুরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. জাকারিয়া ফেরদৌস বাংলানিউজকে জানান, নদ তীরের মাটি নেওয়া বন্ধ করতে সংশ্লিষ্ট ভাটা মালিকদের নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তবে, কেউ এখনও মাটি নেওয়া বন্ধ করেননি। ইতোপূর্বে যাদের বিরুদ্ধে মাটি নেওয়ার অভিযোগ পেয়েছি, তাদের বিরুদ্ধে প্রথমত নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এরপর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।

তালা উপজেলার ঘোষনগর খেয়াঘাট এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, নয়টি ট্রলি ও ২৫টি ভ্যান নদের তীরে বেড়িবাঁধের মাটি বহন করছে। এসব মাটি পার্শ্ববর্তী ইটভাটায় (আরবিএস) যাচ্ছে। মাটি নেওয়ার ফলে কপোতাক্ষের তীরবর্তী ওই এলাকার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ প্রায় ২০ ফুট ধসে গেছে।

আরবিএস ইটভাটার ম্যানেজার মো. জুলফিক্কার আলী মোড়ল বাংলানিউজকে বলেন, প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে মাটি নেওয়া হচ্ছে। আর এ মাটি নিলে কি হবে। সবকিছু ঠিক করেই মাটি নেওয়া হচ্ছে।
 
একপর্যায়ে তিনি বলেন, ‘এসব নিয়ে লেখা-লেখির কিছু নেই। বেশি বাড়াবাড়ি করলে আমরাও দেখবো, কতোদিন সাংবাদিকতা করো। ’

গোনালী এলাকায় কপোতাক্ষ তীরে জেগে ওঠা চর দখল করে পরিচালনা করা হচ্ছে গোল্ডেন ব্রিকস। এর প্রতিবাদে তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দেন এলাকাবাসী।  

অভিযোগ পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, তালা থানার ওসি ও সংশ্লিষ্ট নদ তীরবর্তী সব ইউপি চেয়ারম্যানদের জনসচেতনতায় প্রচার ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন।

গ্লোডেন ব্রিকসের মালিক কল্যাণ বসু বাংলানিউজকে বলেন, স্থানীয় ভূমিহীনদের কাছ থেকে জমি লিজ নিয়ে তিনি ইটভাটা চালাচ্ছেন। সবকিছু মেনেই কাজ করছেন বলেও দাবি করেন তিনি।

খলিলনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রণব ঘোষ বাবলু বাংলানিউজকে জানান, নদ তীরের মাটি নেওয়ার কারণে বেড়িবাঁধ দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে না। প্রতিবছরই প্লাবিত হচ্ছে নদ তীরের এলাকা। যেকোনো মূল্যে মাটি নেওয়া বন্ধ না করলে আগামীতে আবারও জলাবদ্ধতার আশঙ্কা রয়েছে। মাটি নেওয়া বন্ধের জন্য ইতোমধ্যে তিনি দুই ইটভাটা মালিক ও একজন বালি উত্তোলনকারীকে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে চিঠি দিয়েছেন।

তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহাবুবুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, গত ০২ নভেম্বর ব্যবস্থা গ্রহণে জনসচেতনতার পাশাপাশি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে এ নির্দেশনা মানতে বলা হয়েছে। এতেও কোনো কাজ না হলে পরে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৫, ২০১৫
পিসি/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।