ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

কলম দেখলেই এগিয়ে আসেন তারা!

জেসমিন পাপড়ি, ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৬, ২০১৫
কলম দেখলেই এগিয়ে আসেন তারা! ছবি: প্রতীকী

হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে: কারো হাতে কলম দেখলেই এগিয়ে আসেন তারা। চোখে স্বজনদের বিদায় দেওয়ার কষ্টের চেয়ে কণ্ঠে অনুরোধ আর আকুতি নিয়ে ইমিগ্রেশন ফরম পূরণে সাহায্য চেয়ে ছুটে আসেন তারা।



হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের প্রতিদিনকার দৃশ্য এটি। আর ওই মানুষগুলো বাংলাদেশরই। বিদেশে গিয়ে শরীরের ঘাম ঝরিয়ে দেশে টাকা পাঠান তারা। তাদের অবদানেই লাখ লাখ বৈদেশিক মুদ্রা মজুদ আছে বলে দেশ গর্ব করে।

অথচ দেশ ছাড়ার আগে ছোট্ট ফরমটি পূরণ করার জন্য কতো না হেনস্তা হতে হয় এসব প্রবাসী শ্রমিকদের।  

বিমানবন্দরে প্রবেশের পর বোর্ডিং কার্ডের সঙ্গে বিদেশগামী যাত্রীদের হাতে একটি ইমিগ্রেশন ফরম তুলে দেয় এয়ারলাইন্সগুলো। নিজ দায়িত্বে সেটি পূরণ করেন যাত্রীরা। কিন্তু বিপাকে পড়েন প্রবাসে কাজ করতে যাওয়া শ্রমিকরা। বাংলা ও ইংরেজিতে লেখা ছোট ছোট অক্ষরের ফরমটি পূরণ করতে হবে শুনেই মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে যায় বেশিরভাগ শ্রমিকেরই। পুরনো যাত্রী হলেও ইমিগ্রেশন ফরম পূরণের সময় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে তাদের মাথায়।

প্রবাসী কল্যাণ ডেস্ক বা সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইন্সের পক্ষ থেকে কোন ধরনের সহায়তা না পেয়ে বাধ্য হয়ে অন্য যাত্রীদের (শিক্ষিত) শরণাপন্ন হতে হয় তাদের।

রোববার (০৬ ডিসেম্বর) বিমানবন্দরে সরেজমিনে ইমিগ্রেশন বিভাগে প্রবেশের আগে বিদেশগামী যাত্রী শ্রমিকদের ফরম পূরণে এই হয়রানির দৃশ্য চোখে পড়ে। বোর্ডিং কার্ড সংগ্রহ করে ইমিগ্রেশনের এক নম্বর গেট দিয়ে ঢুকতে যেতেই দুবাই প্রবাসী জয়নাল হোসেনকে আটকে দেন কর্তব্যরত কর্মকর্তারা। বলেন, ফরমটি পূরণ করে নিয়ে আসেন। কয়েকবার বিদেশ যাওয়া এই যাত্রী হোঁচট খান। এদিকে ওদিকে তাকাতে থাকেন। চোখের সামনে পেয়ে যান কলম হাতে কয়েকজন যাত্রী, যারা নিজেদের ফরম পূরণ করছিলেন। এবার জয়নাল তাদের দিকে ছুটে গিয়ে পাশে দাঁড়িয়ে যান। ওই যাত্রীর কাজ শেষ হতেই তার ফরমটি পূরণ করে দেওয়ার অনুরোধ জানান। এভাবেই কাজ সেরে ইমিগ্রেশন ডেস্কের সামনে পৌঁছান  জয়নাল।

কিন্তু বাহরাইন প্রবাসী সাইফুল ইসলাম এতো সহজে তার ফরম পূরণ করতে পারেননি। দ্বিতীয়বার বিদেশ যাওয়া এই তরুণ কিছুটা লিখতে জানলেও ফরম পূরণ করতে সংকোচে ভোগেন  বলে জানান বাংলানিউজকে।

তিনি বলেন, ফরমটা পূরণ করার জন্য তিনজন যাত্রীকে অনুরোধ করি। এদেরে মধ্যে প্রথমজন আমার মতোই, লেখাপড়া জানেন না, বাকিদের ফ্লাইট ছাড়ার সময় হয়ে গেছে বলে চলে গেছেন।
তবে চতুর্থজনের সাহায্য পেতে দেখা গেল সাইফুলকে।

তিনি বলেন, ‘এটি খুব বড় ঝামেলা। শ্রমিকদের বিরাট একটি অংশ শিক্ষিত নন। আর যারা একটু লিখতে-পড়তে জানেন, তারা এসব ফরম পূরণে ভয় পান। কারণ, একটু ভূল হলেই ইমিগ্রেশন অফিসারদের ঝাড়ি শুনতে হয়। তাই একে-ওকে ধরে পূরণ করিয়ে নেই। কেউ দেন, কেউ দেন না’।

এ বিষয়ে ফরম পূরণ করে দিয়েছেন এমন একজন যাত্রী আতিকুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ‘যেমন এসব শ্রমিকদের পাঠানো রেমিটেন্সে উপকৃত হচ্ছে, তেমনি এয়ারলাইন্সগুলোও যাত্রী পরিবহনের মাধ্যমে আয় করছে। সুতরাং এই এয়ারলাইন্সগুলোর পক্ষ থেকে ফরমটি (শুধুমাত্র শ্রমিকদের জন্য) পূরণের ব্যবস্থা করা উচিত। এছাড়া প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের পক্ষ থেকেও এ সাহায্য আসতে পারে। প্রবাসীদের পাঠানো টাকাকে শুধু নয়, তাদেরকেও সম্মান করা উচিত’।

বাংলাদেশ সময়: ১৭০০ ঘণ্টা,  ডিসেম্বর ০৬, ২০১৫
জেপি/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।