সাতক্ষীরা: ৭ ডিসেম্বর, সাতক্ষীরা মুক্ত দিবস। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এই দিনটি সাতক্ষীরাবাসীর জন্য বিজয়ের, গৌরবের।
বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সাতক্ষীরা জেলা ইউনিটের কমান্ডার মোশারফ হোসেন মশু বাংলানিউজকে জানান, দীর্ঘ ৯ মাস পর ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর রাতেই পালাতে শুরু করে পাক হানাদার বাহিনী। পরদিন ভোরে রাজাকার-আলবদর বাহিনী তাদের অস্ত্র ও মালপত্র ফেলে প্রাণ বাঁচাতে নিজেদের ক্যাম্প থেকে পালাতে থাকে। ৭ ডিসেম্বর ভোর হতেই মুক্ত হওয়ার সুসংবাদ ছড়িয়ে পড়ে সবখানে।
তিনি বলেন, ১৬টি মুখোমুখি ও খণ্ড যুদ্ধের মধ্য দিয়ে ৭ ডিসেম্বর মুক্ত হয় সাতক্ষীরা। লেফটেন্যান্ট বেগ, ক্যাপ্টেন হুদা, লেফটেন্যান্ট আরেফিন, মেজর জলিলের বাহিনী সম্মুখ সমরে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ৭ ডিসেম্বর ভোরে মুক্তিযুদ্ধের সময় সংবাদ বাহক ছাকুর কাছে খবর পেয়ে মাটিয়াডাঙ্গা ক্যাম্প থেকে ১৭ জন মুক্তিযোদ্ধার একটি গ্রুপ পুরাতন সাতক্ষীরা হয়ে সাতক্ষীরা কোর্ট চত্বরে যান। ছাকুর বাড়ি সাতক্ষীরা শহরের সুলতানপুর এলাকায়।
বদরুল, জাহিদ, সাদেক, আবু নাছিম ময়না, আব্দুর রশিদ, আজি, মাহবুব, গফুরসহ ১৭ জনের এ গ্রুপের নেতৃত্বে ছিলেন আব্দুল মহিত খান চৌধুরি দুলু। সেখানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন আবু নাছিম ময়না। মাটিয়াডাঙ্গা ক্যাম্পের মোস্তাফিজ, জজ, মঈদ খানসহ মুজিব বাহিনীর দলটি পরে চলে যায় খুলনার কপিলমুনি যুদ্ধে। শহরের পশ্চিম দিক থেকে ৮ নম্বর সেক্টরের ক্যাপ্টেন শফিউল্লাহ ও ক্যাপ্টেন মাহবুবের নেতৃত্বে সোনা, আব্দুল্লাহ, রফিক, মান্নান শহরে প্রবেশ করে যশোরের মনিরামপুরের উদ্দেশে রওনা হন।
বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সাতক্ষীরা জেলা ইউনিটের সাবেক কমান্ডার এনামুল হক বিশ্বাস বাংলানিউজকে জানান, যুদ্ধের সময় আহত হয়ে পড়ায় তাকে সরাফপুর থেকে টিকেট ও বদরতলা থেকে সখিপুর নেওয়া হয়। সাব সেক্টর কমান্ডার শাহাজান মাস্টারের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা পিটিআইতে উপস্থিত হন।
প্লাটুন কমান্ডার নাজমুলের নেতৃত্বে আখড়াখোলার রায়পুর থেকে মিজান, রশিদ, কাদের, দিলীপ, হাসান, আব্দার, নজরুলের গ্রুপটি সকাল ১০টায় সাতক্ষীরায় পৌঁছায়। মুজিব বানিহীর উপ-অঞ্চল প্রধান কাজী রিয়াজের নেতৃত্বে আনোয়ার, লিয়াকত, শাহাবুদ্দিন, সরোয়ার, আব্দুর রশিদের দল সরাসরি বিনেরপোতায় যায়। এদিকে এফএফ বাহিনীর প্রধান স ম আলাউদ্দিনের নেতৃত্বে ৬৫ জন মুক্তিযোদ্ধার কপিলমুনি যুদ্ধে যোগ দেন। গেরিলা কমান্ডের পদ্মা গ্রুপের প্রধান সুভাষ সরকারের নেতৃত্বে অতুল, সুশীল, বক্কার, কার্তিক, রমেশের দলটি মাগুরায় যুদ্ধ শেষ করে কপিলমুনি পৌঁছায়। লেফটেন্যান্ট (অব.) রহমতুল্লা দাদু বীর প্রতীকের নেতৃত্বে পাইকগাছা হাতিয়াডাঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থান করে যুদ্ধ করেন কোকিল, আলফাজ, শফি, বজলু, মুজিবর ও আবদুল গফ্ফার। দীর্ঘ ৯ মাসে পাক সেনাদের সঙ্গে সাতক্ষীরা অঞ্চলে যেসব যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল সেগুলো হলো- টাউন শ্রীপুর যুদ্ধ, ভোমরা যুদ্ধ, কাকডাঙ্গা যুদ্ধ, বসন্তপুর যুদ্ধ ও বেলেডাঙ্গা যুদ্ধ।
** সাতক্ষীরা মুক্ত দিবসে র্যালি-আলোচনা সভা
বাংলাদেশ সময়: ১০৩৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৭, ২০১৫
এসআই