ঢাকা: আগের কমিশনগুলো ব্যর্থ হয়েছে এমন ঈঙ্গিত দিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (তদন্ত) কমিশনার মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু বলেছেন, আমরাই দুদকের বারান্দায় সরকারের উপদেষ্টা, মন্ত্রী-এমপি ও সচিবদের ডেকে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পেরেছি। যা আগের কমিশন পারেনি।
আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস উদযাপন উপলক্ষে দুদকের এক আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন দুদকের অন্যতম প্রধান এ নির্বাহী।
তিনি বলেন, ‘অনেক ক্ষমতাধরের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিতে পেরেছি। যেমন- মুক্তিযুদ্ধে সনদ জালিয়াতির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছি। অত্যন্ত হাই-প্রোফাইল ব্যক্তির বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরুর সময় কোনো পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল আমরা অব্যাহতি দিয়ে দেবো। শেষ পর্যন্ত আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি।
দুদক কমিশনার আরও বলেন, সরকার বা বিরোধী দল সবাই এখন আমাদের কাছে সমান। আমরা ব্যক্তি না দেখে ব্যক্তির অপরাধ দেখি। আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়, আমরা নাকি সরকারি দলকে অব্যাহতি দেই। আমরা তো বিএনপি চেয়ারপারসনকেও (খালেদা জিয়া) ভৈরব সেতুর দুর্নীতি মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়েছি। এগুলো মিডিয়ায় ফলাও করে প্রচার হয় না। হয় কেবল সমালোচনা।
দুদক কাউকে দায়মুক্তি দেয় না। আমরা কেবল তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতেই অনুসন্ধান ও তদন্ত কাজ করে থাকি- যোগ করেন দুদক কমিশনার।
সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর এমন বক্তব্য প্রসঙ্গে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ার বলেন, বর্তমান কমিশন মন্ত্রী-আমলা ও অনেক হাই-প্রোফাইল ব্যক্তিকে দুদক কার্যালয়ে হাজির করতে পেরেছে। এটা সত্যি। কিন্তু শুধু হাজির করাই যথেষ্ট নয়। তাদের বিরুদ্ধে কার্যত কী ব্যবস্থা নেওয়া হলো সেটাই গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, দুর্নীতির অনেক রাজা-মহারাজা রয়েছে, যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও দুর্নীতির দায় থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এটা মিথ্যা নয়। কারণ বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় তাদের বিষয়ে সুনির্দিস্ট অভিযোগ ছিল। এরা যখন অব্যাহতি পেয়ে যান তখন জনসাধারণের মনে ধারণা হয় যে, দুদক তাহলে ওমুক দুর্নীতিবাজকে অব্যাহতি দিয়ে দিলো।
দুদকের প্রতি জনগণের আস্থা বাড়ানোর মতো কাজ করার আহ্বান জানান গোলাম সারওয়ার।
সমকাল সম্পাদক আরও বলেন, আমরা দুদকের সার্বিক কার্যক্রম বিবেচনা করলে দেখতে পাই, দুদকের অব্যাহতির তালিকায় বিরোধী দলের সংখ্যা খুব কম। এটা সত্যি।
আলোচনা সভার সভাপতির বক্তব্যে দুদক চেয়ারম্যান মো. বদিউজ্জামান বলেন, দুদকের সমালোচনা হচ্ছে, হবেই। এর মানে দুদক কাজ করছে। আর কাজ করলে সমালোচনা হবে। তবে সব মিডিয়াকে বলবো, আপনারা গঠনমূলক সমালোচনা করুন।
এ আলোচনায় আরও বক্তব্য রাখেন দুদক কমিশনার (অনুসন্ধান) ড. নাসির উদ্দিন আহমেদ, সচিব আবু মো. মোস্তফা কামাল প্রমুখ।
আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস উপলক্ষ্যে এর আগে সকালে দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে এক বর্ণাঢ্য র্যালি ও মানববন্ধনের আয়োজন করে দুদক।
র্যালিতে দুদক চেয়ারম্যান, কমিশনারদ্বয়সহ কমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও দুদক বিটে কর্মরত সাংবাদিকদের সংগঠন রিপোটার্স অ্যাগেইনস্ট করাপশনের (র্যাক) সদস্যরা অংশগ্রহণ করেন।
র্যালিটি কাকরাইল, বিজয়নগর, প্রেসক্লাব হয়ে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে এসে শেষ হয়।
‘দেশ প্রেমের শপথ নিন, দুর্নীতিকে বিদায় দিন’- এ স্লোগানকে সামনে রেখে দ্বাদশ আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস পালন করে দুদক।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৯, ২০১৫
এডিএ/এমজেএফ
** বর্ণাঢ্য র্যালি, দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করার আহ্বান