ময়মনসিংহ: নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে চাললুটের ঘটনায় ময়মনসিংহের গামা মুড়ি ফ্যাক্টরির ট্রাক ব্যবহার করে মিশনে অংশ নেন সন্দেহভাজন ডাকাতরা। ওই ট্রাকের নিয়মিত চালক মোখলেছ উদ্দিন সেদিন নিজে না গিয়ে অন্য এক চালকের হাতে তুলে দেন ট্রাকের চাবি।
ডাকাতির কাজে ময়মনসিংহের এ মুড়ি ফ্যাক্টরির ট্রাক ব্যবহারের এমন ঘটনা এক কান, দু’কান করে ছড়িয়ে পড়ার পর গোটা নগরীতে চলছে তোলপাড়। এসব নিয়ে ট্রাকের মালিক গৌতম সরকার এবং তার ফ্যাক্টরির লোকজনের পরস্পরবিরোধী কথাবার্তা ও সুর বদলানোর ঘটনায় রহস্যও বাড়ছে।
শুক্রবার (১১ ডিসেম্বর) সরেজমিনে বাংলানিউজের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর এসব তথ্য।
ট্রাক মালিক সম্পর্কে ইতোমধ্যে তথ্য অনুসন্ধান শুরু করেছে এ ঘটনার তদন্তে দায়িত্বে থাকা নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার থানা পুলিশ।
জানা গেছে, ময়মনসিংহ নগরীর বিসিক শিল্পনগরী এলাকার ময়না মোড় সড়কে গামা মুড়ি ফ্যাক্টরি। এ ফ্যাক্টরির মালিকের রয়েছে ৫টি ট্রাক। এ ফ্যাক্টরিতে উৎপাদিত মুড়ির জন্য দিনাজপুর, জামালপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে চাল আনা-নেওয়ার পাশাপাশি ভাড়ায় খাটানো হতো এসব ট্রাক।
দিন কয়েক আগে একটি ট্রাকের চালকের দায়িত্ব নেন সদর উপজেলার চুরখাই এলাকার মোখলেছ উদ্দিন। এমনটি জানিয়ে এ ফ্যাক্টরির ম্যানেজার রতন চন্দ্র দাস জানান, গত ৮ ডিসেম্বর ওই ট্রাক নিয়ে কিশোরগঞ্জে যান মোখলেছ। সেখান থেকে মালামাল নিয়ে সেদিনই তার ঢাকায় যাওয়ার কথা ছিল। এরপর আর কোনো খোঁজ নেই তার। ১০ ডিসেম্বরের ঘটনার পর থেকে তার মোবাইল ফোনও বন্ধ রয়েছে।
হঠাৎ মোখলেছের রহস্যময় অন্তর্ধানের বিষয়ে তারা কোতোয়ালি মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন বলেও দাবি করেন রতন চন্দ্র দাস। তবে ওই সাধারণ ডায়েরির কপি চাইলে তিনি কথা ঘুরিয়ে বলেন, জিডির কপি ট্রাকের ম্যানেজারের কাছে আছে। তিনি দিতে পারবেন।
অবশ্য শুক্রবার সরেজমিনে ওই ফ্যাক্টরিতে গেলে ফ্যাক্টরি ও ট্রাকের মালিক গৌতম সরকার বলেন, আমরা এখনো কোনো জিডি করিনি। ডাকাতির কাজে বদলি চালক ও নিজের ট্রাক ব্যবহারের ঘটনা মিডিয়ার মাধ্যমে নিশ্চিত হলেও কেন এবং কী কারণে পুলিশকে বিষয়টি জানাননি-জানতে চাইলে তিনি মন্তব্য করেন, ‘তাদের জানালেই কী আমার ট্রাক এনে দিতে পারবে?’
তবে পরদিন শনিবার (১২ ডিসেম্বর) বিকেলে সুর পাল্টে গৌতম সরকার বলেন, ‘ডাকাতির ঘটনার দিন সকালে মোখলেছের বিরুদ্ধে থানায় জিডি করা হয়েছে’। তবে গৌতম সরকারেরও সন্দেহ, এ ডাকাতির ঘটনার সঙ্গে চালক মোখলেছ জড়িত থাকার কারণেই মোবাইল ফোন বন্ধ করে আত্মগোপনে রয়েছেন।
ডাকাতির সঙ্গে ফ্যাক্টরি সংশ্লিষ্টতা সম্পর্কে জনমনে সন্দেহের বিষয়ে ম্যানেজার রতন চন্দ্র দাস দাবি করেন, দিনাজপুর, শেরপুর ও জামালপুর থেকে আমাদের মুড়ির জন্য চাল আসে। আর একটা ঘটনা ঘটার পর অনেকেই অনেক কিছুই বলে।
ময়মনসিংহের কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল ইসলাম জানান, মালিকের কোনো সংশ্লিষ্টতা রয়েছে কি-না সেটিও খতিয়ে দেখা হবে।
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাখাওয়াত হোসেন জানান, ট্রাকটি ময়মনসিংহ নগরীর একটি মুড়ি ফ্যাক্টরির এমন তথ্য আমরা জানতে পেরেছি। ওই মুড়ি ফ্যাক্টরি ও ট্রাকের মালিক সম্পর্কে খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে।
তবে তদন্তের স্বার্থে এর চেয়ে বেশি কিছু জানাতে আপত্তি প্রকাশ করেন তিনি।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ডাকাতির মিশনে অংশ নেন ময়মনসিংহেরই ৬ জন। এর মধ্যে ৩ জন গণপিটুনিতে নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন সদর উপজেলার মধ্যবাড়েরা গ্রামের সজিব, ত্রিশালের বীররামপুর গ্রামের মানিক ও ভাবখালী এলাকার সাব্বির।
অথচ নিহত দু’জন ও আহত একজনের পরিবার ও এলাকাবাসীর দাবি, তারা ডাকাত নন। তাদের এ দাবি উড়িয়ে দিয়ে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাখাওয়াত হোসেন জানান, গ্রেফতারকৃতরা সবাই স্বীকার করেছেন, তারা ডাকাতি করতেই এখানে এসেছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১২, ২০১৫
এএসআর