ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বান্দরবানে ঐতিহ্যবাহী রাজপুণ্যাহ মেলা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০১৫
বান্দরবানে ঐতিহ্যবাহী রাজপুণ্যাহ মেলা ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বান্দরবান: বান্দরবানে বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে বোমাং সার্কেলের ১৩৮তম ঐহিত্যবাহী রাজপূণ্যাহ (পইংজ্রা) মেলা।
 
শুক্রবার (১৮ ডিসেম্বর) বান্দরবান শহরের রাজবাড়ী মাঠে সকাল ১০টায় ১৭তম বোমাং রাজা ইঞ্জিনিয়ার উ চ প্রু চৌধুরী অস্থায়ী রাজমঞ্চে হেডম্যান কারবারী ও প্রজাদের কাছ থেকে রাজকীয় কায়দায় খাজনা আদায়ের মাধ্যমে দিয়ে মেলার উদ্বোধন করেন।



এসময় হাতে স্বর্ণখচিত তলোয়াড় ও রাজকীয় পোশাকে রাজা উ চ প্রু মঞ্চে উঠার সঙ্গে সঙ্গে প্রজারা দাঁড়িয়ে রাজাকে সম্মান জানায়। পরে সার্কেলের হেডম্যান, কারবারী, রোয়াজাগণ একে একে রাজাকে কুর্নিশ করে জুম খাজনা ও উপঢৌকন জমা দেন।

বোমাং সার্কেলের ১৭তম রাজা বোমাংগ্রী ইঞ্জিনিয়ার উ চ প্রু রাজা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর এটি তার দ্বিতীয় রাজপূণ্যাহ।

মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন।

এছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈংসিং এমপি, বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা, ৬৯ পদাতিক ব্রিগেডের রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নকিব আহমদ চৌধুরী, বান্দরবান জেলা প্রশাসক মিজানুল হক চৌধুরী, জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মিজানুর রহমান প্রমুখ।

রাজপরিবার সূত্রে জানা যায়, বোমাং সার্কেলের ১০৯টি মৌজার হেডম্যান কারবারীগণ রাজপূণ্যাহ উপলক্ষে বান্দরবানে এসে পৌঁছেছেন। তারা বাৎসরিক খাজনার পাশাপাশি নানা রকম উপঢৌকন দিবেন রাজা বাহাদুরকে।

চার দিনব্যাপী রাজপূণ্যাহ মেলায় প্রতিবারের মতো এবারও নানা বিনোদনের আয়োজন করা হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে সার্কাস, যাত্রাপালা, পুতুল নাচ, মৃত্যুকুপসহ নানা আয়োজন।

প্রতি বছর প্রায় ১৫ হাজার জুমিয়া পরিবারের কাছে নব্বই হাজার টাকা খাজনা আদায় করা হয়। তন্মধ্যে ৪২% রাজা, ২১% হেডম্যান এবং ২৭% রাজস্ব সরকার পেয়ে থাকে।

আনন্দঘন পরিবেশে শান্তিপূর্ণভাবে ঐতিহ্যবাহী রাজপূণ্যাহ মেলা আয়োজনে সবার সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন রাজা।

এদিকে রাজপ‍ূণ্যাহ দেখতে ভিড় জমিয়েছেন দেশি-বিদেশি অসংখ্যা পর্যটক। চার দিনব্যাপী রাজপ‍ূণ্যাহ উপলক্ষে বোমাং রাজা প্রজাদের শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে রাজপ‍ূণ্যাহর ঐতিহ্য বজায় রাখতে সরকারের সহযোগিতা কামনা করেছেন।

১৪টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি সম্প্রদায় এবং প্রায় ১৭৬৪ বর্গমাইল এলাকার ১০৯টি মৌজা নিয়ে গঠিত বোমাং সার্কেল। ১৭২৭ সাল থেকে বোমাং রাজ প্রথা শুরু হলেও ১৮৭৫ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে বোমাং রাজাগণ ঐতিহ্যবাহী রাজপূণ্যাহ মেলার আয়োজন করে আসছেন।

বান্দরবানে প্রত্যেকটি মৌজার প্রতিটি পরিবার বছরে ৬ টাকা হারে খাজনা দিবেন। আর তা থেকে সরকারের তহবিলে জমা হয় ২.২৫ পয়সা, ১.২৫ পয়সা পান মৌজার হেডম্যানরা। বাকি ২.৫০ পয়সা পান বোমাং রাজা। ১৮৭৫ সালে নবম বোমাং রাজা সা নাইঞ্রো রাজকর আদায় উপলক্ষে প্রথম রাজপূণ্যাহ অনুষ্ঠানের প্রচলন করেছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৮১৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০১৫
এএটি/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।