ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বাংলাদেশ প্রতিদিনের গোলটেবিল বৈঠক

‘কাঠামো পরিবর্তন না করে শুধু প্রতীক দেওয়া ভুল হয়েছে’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০১৫
‘কাঠামো পরিবর্তন না করে শুধু প্রতীক দেওয়া ভুল হয়েছে’ ছবি: দীপু মালাকার/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: রাজনৈতিক দল ও স্থানীয় সরকার কাঠামোতে পরিবর্তন না করে পৌরসভা নির্বাচনে শুধুমাত্র দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করতে দেওয়াটা অন্যায় ও ভুল হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ।
 
শনিবার (২৬ ডিসেম্বর) ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেডের (ইডব্লিউএমজিএল) কনফারেন্স রুমে দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন আয়োজিত ‘পৌরসভা নির্বাচন: নিরপেক্ষতা ও বাস্তবতা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ অভিমত ব্যক্ত করেন।


 
তিনি বলেন, স্থানীয় বাস্তবতা একরকম, আবার কেন্দ্রের বাস্তবতা অন্যরকম। যারা নিরপেক্ষ, তাদের বাস্তবতা আরেক রকম। কারও বাস্তবতার সঙ্গে কারও বাস্তবতা মিলছে না। এটিই জাতির বড় অসঙ্গতি। রাজনৈতিক নেতাদের কথা যখন শুনি, মনে হয় তারা যা ভাবেন, তা করেন না। যা বলেন, তা তাদের মুখের কথা, না মনের কথা, তাও বুঝি না। তারা জাতির জন্য বলছেন, না শুধু দলের জন্য বলছেন, তাও বোঝা যায় না।
 
‘সময় অনুযায়ী পৌরসভা নির্বাচন হচ্ছে বলে সরকারকে অভিনন্দন। আর চড়াই-উতরাই পেরিয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য বিএনপিকে অভিনন্দন। আন্দোলনের অংশ হিসেবেই বলুন, আর জনমত যাচাইয়ের জন্যই বলুন, নির্বাচনে তারা (বিএনপি) যাচ্ছেন। কারণ একটি গণতান্ত্রিক দেশে নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। ’
 
ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, যেভাবেই হোক ৩০ তারিখ এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এতে বিএনপি অংশ নেওয়ায় আমরা সবাই আনন্দিত। স্থানীয় সরকার নিয়ে সুধী সমাজ ও গবেষকরা বিভিন্ন স্থানে কতোগুলো বিষয় নিয়ে আলোচনা করছেন। কিন্তু বিএনপির এ নিয়ে কোনো মন্তব্য নেই। আওয়ামী লীগেরও একই অবস্থা।
 
‘দলীয়ভাবে স্থানীয় নির্বাচন করতে রাজনৈতিক দল ও স্থানীয় সরকার কাঠামোতে অনেকগুলো পরিবর্তন আনা দরকার। এ পরিবর্তনগুলো না করে শুধুমাত্র প্রতীক দিয়ে দেওয়াটি ভুল হয়েছে। আইনের মধ্যে অনেকগুলো ভুল রয়ে গেছে। নির্বাচনের পরই এসব টের পাওয়া যাবে। দেখা যাবে, ৮-১০টি বিষয় মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে।

তিনি বলেন, এখনও সময় আছে, আগামী বছর ইউনিয়ন পর্যায়ের নির্বাচনের আগেই এই নির্বাচনের শিক্ষাগুলো কাজে লাগিয়ে আইন করার এবং এ সময়ের মধ্যে সরকারের দিক থেকে একটি কাঠামা ও আইনগুলো সুষম করার উদ্যোগ নেওয়ার।
 
এই স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ বলেন, একটি অবাস্তব বিষয় হলো আমাদের রাজনীতি, গণতন্ত্র সবটাই নির্বাচনের জন্য। এর বাইরে আর কিছু নেই। নির্বাচন মানেই গণতন্ত্র, আর রাজনীতি মানেই নির্বাচন। নির্বাচনটা কার জন্য করছি? যে পৌরসভার জন্য নির্বাচন, তা নিয়ে কিন্তু কোনো কথা নেই। পৌরসভার আইন এবং বিধি-বিধান, পৌরসভার সাংগঠনিক কাঠামো, কাজ ও অর্থায়ন, এটি কি ঠিকভাবে কাজ করছে? এসব জায়গায় আমরা কেউ যাচ্ছি না।
 
ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, দুঃখের বিষয় বড় দুই রাজনৈতিক দলের মধ্যে স্থানীয় সরকারের কোনো নীতিমালা নেই। তারা কেন্দ্রীয় সরকার চালাচ্ছে। স্থানীয় সরকার কিভাবে চলবে? এটা কতোটুকু? তার কোনো স্পষ্ট নীতিমালা নেই। স্থানীয় সরকারকে জাতীয় বাজেট থেকে অনুদান হিসেবে কতো টাকা দেওয়া হবে, তার কোনো নীতিমালা নেই। স্থানীয় সরকারকে যে অর্থটা দেওয়া হয়, তা কোথায় পায় সরকার? এটা অনুদান, জনগণের ট্যাক্সের টাকা।
 
এই যে আমরা মেয়র ও কাউন্সিলদের আলাদা করে দিচ্ছি, মেয়র হবে দলীয়ভাবে আর কাউন্সিলর আগের মতোই, এ বিষয়গুলো সাংঘর্ষিক, বলেন তিনি।
 
ড. তোফায়েল আহমেদ আরও বলেন, নির্বাচন কমিশনের ওপর সব ভার চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এই কমিশন অত্যন্ত নাজুক একটি প্রতিষ্ঠান। তার লোকবল কম। তারপরও আমাদের যতো বড় নির্বাচন কমিশন আছে, এতো বড় নির্বাচন কমিশন পৃথিবীর কোথাও নেই। ভারতের যে নির্বাচন কমিশন, তা আমাদের এক-চতুর্থাংশও না। কথা হচ্ছে নির্বাচনটা করতে হবে সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়ে। নির্বাচন কমিশনে সারা বছর ধরে লোকবল রাখতে হবে, এমন কোনো কথা নেই। নির্বাচনটা একটি সমন্বিত কর্মসূচি। নির্বাচন কমিশন রেফারির দায়িত্ব পালন করবে। তাই বলে আমরা কেউ দায়িত্ব পালন করবো না, আর নির্বাচন কমিশন একাই সব কাজ করে দিবে, এমন প্রত্যাশা ঠিক হবে না।
 
তিনি বলেন, সরকার আন্তরিক না হলে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব না। সরকার মানে শুধু কোনো রাজনৈতিক দল না। সরকার মানে প্রশাসনযন্ত্র। প্রশাসন ও পুলিশ যদি নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন না করে, এখানে যদি দুর্নীতি থাকে তাহলে সুফল আসবে না।
 
দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজামের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত আছেন সাবেক নির্বাচন কমিশন মুহম্মদ ছুহুল হোসাইন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ, সাবেক মন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাফর ইমাম, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য রুহুল আমিন হাওলাদার, সাবেক সংসদ সদস্য মেজর (অব.) আকতারুজ্জামান প্রমুখ।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০১৫
এএসএস/আরএইচ/আরআই

** ‘বিনা যুদ্ধে নাহি দিব সূচ্যগ্র মেদিনী’

** ‘বিএনপি নির্বাচনে থাকে কি-না, সে শঙ্কা রয়েছে’
** ‘নির্বাচন কমিশনের আইনি শক্তি দৃশ্যমান করতে হবে’
** পৌর নির্বাচনে প্রমাণ হবে আ’লীগ-বিএনপির জনপ্রিয়তা

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।