ঢাকা: চাকরির বয়স বাড়ানোর জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের আদালতের শরণাপন্ন হতে হয়। আন্দোলন পর্যন্ত করতে হয়।
চাকরিজীবী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বয়সসীমা ৬৫ বছর নির্ধারণে সুপ্রিম কোর্টের নির্দশনা বাস্তবায়নের দাবিতে আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে এ মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন।
ন্যাশনাল ফ্রিডম ফাইটার্স ফাউন্ডেশনের আয়োজনে এ বৈঠকে অংশ নেন চাকরিজীবী মুক্তিযোদ্ধারা।
গত বছরের নভেম্বরে মুক্তিযোদ্ধাদের সরকারি চাকরির বয়সসীমা ৬৫ বছরে উন্নীত করার প্রস্তাব মন্ত্রিপরিষদে উপস্থাপন করতে সরকারের প্রতি নির্দেশ দেন সুপ্রিম কোর্ট। আদালতের নির্দেশনা অনুসারে আগামী ২৫ জানুয়ারির মধ্যে মন্ত্রিসভায় বিষয়টি উত্থাপন করতে হবে।
শিক্ষাবিদ আনোয়ার হোসেন বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের চাকরির বয়সসীমা ৬৫ বছর করা হয়েছে। তবে এ সুবিধা যে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শিক্ষকরা পেয়েছেন তা নয়। সে সুবিধা নিয়েছেন রাজাকার শিক্ষকরাও। ১৯৭১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এসব রাজাকার শিক্ষকরা চাকরি হারান। তবে ১৯৭৫ সালের পর তাদেরকে আবার চাকরিতে বহাল করা হয়। এরপর তারাও চাকরির বয়সসীমা বাড়ানোর সুবিধা ভোগ করেন। সেখানে আজ বাংলাদেশের চাকরিজীবী মুক্তিযোদ্ধাদের চাকরির বয়স ৬৫ বছর করার জন্য আদালত পর্যরন্ত যেতে হলো।
এটা মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান। তাদের প্রতি চরম অকৃজ্ঞতা দেখানো বলেও মন্তব্য করেন আনোয়ার হোসেন।
তবে শেখ হাসিনার সরকার আদালতের দেওয়া নির্দেশনা অনুসারে মুক্তিযোদ্ধাদের দাবি বেধে দেওয়া সময়ের আগেই মেনে নেবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
ন্যাশনাল ফ্রিডম ফাইটার্স ফাউন্ডেশনের সভাপতি ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি এখন রাষ্ট্র ক্ষমতায়। অথচ সেই সরকারের জনপ্রশাসন সচিব আবদুস সোবহান শিকদার মুক্তিযোদ্ধাদের চাকরির বয়সসীমা বাড়ানোর ফাইল নাড়াতে টালবাহানা করেন। যেখানে দেশের সর্বোচ্চ আদালত বলেছেন, এ দাবি বাস্তবায়ন কোনোভাবেই সাংঘর্ষিক নয়। সেখানে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে এ টালবাহানা কেন? মুক্তিযোদ্ধাদের দাবির কথা উঠলেই একইসঙ্গে সাধারণ কর্মচারীদের বয়স বাড়ানোর কথা ওঠে। মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে এ বৈষম্যমূলক আচরণ কেন?
তিনি বলেন, আজ স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা বহনকারী ও আমাদের সন্তানতুল্য সাকিব-মুস্তাফিজদের দেখে আমরা চেয়ার ছেড়ে দেই। সেখানে এই ন্যূনতম সম্মানটুকু কেন মুক্তিযোদ্ধারা পাবো না? আমরা দেশের জন্য রক্ত দিয়েছি, এটা কোনো কল্পগল্প নয়, এটা বাস্তব। সত্য ঘটনা।
তিনি বলেন, সরকার চাকরিজীবী মুক্তিযোদ্ধাদের বয়সসীমা ৬৫ বছর করার দাবি মেনে নিলে এটা হবে দেশের জন্য মাইলফলক।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি মুহম্মদ শফিকুর রহমান বলেন, আশা করি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা শিক্ষক ও মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানের কথা ভেবে শিক্ষকদের মর্যাদা ও মুক্তিযোদ্ধাদের চাকরির বয়সসীমা বাড়ানোর দাবি মেনে নেবেন।
বৈঠকে আরো অংশ নেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস, শিক্ষাবিদ মোহাম্মদ এ আরাফাত প্রমুখ।
এর আগে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের সরকারি চাকরির বয়সসীমা ৫৭ বছর থেকে বাড়িয়ে ৬৫ বছর করার কথা বলে ২০০৬ সালে প্রস্তাব দেয় সে সময়কার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৯, ২০১৬
জেপি/এমআইএইচ/এএসআর