ঢাকা: আসাদুজ্জামান রিপন শেখের বাবা নহর আলী শেখ পেশায় সাংবাদিক ছিলেন। বাবার আয়ে তাদের সংসার চলতো।
কীভাবে মা ও ভাই-বোনদের নিয়ে ওই অভাবের সংসারের হাল ধরেছেন তার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন আসাদুজ্জামান রিপন। তিনি বলেন, ‘কোনো সাংবাদিক পরিবারে যেন এমন না হয়’।
সাংবাদিকদের উদ্যোগে তাকে সিঙ্গাপুরে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ উপলক্ষে রোববার (১০ জানুয়ারি) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স রুমে ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা জ্ঞাপন অনুষ্ঠানে আসাদুজ্জামান এসব কথা বলেন।
গণমাধ্যমে আসাদুজ্জামান ও তার পরিবারের কথা জানার পর জনশক্তি প্রেরণকারী মেরিট ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল এর সিইও হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বিনা খরচে সিঙ্গাপুরে হুন্দাই কনস্ট্রাকশন কোম্পানিতে তার চাকরির ব্যবস্থা করেন।
সাংবাদিক ও কলাম লেখক মনজুরুল আহসান বুলবুলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, সাংবাদিকরা কতোটা ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেন এবং মারা যাওয়ার পর কতোটা অসহায় হয়ে পড়ে পরিবার তার দৃষ্টান্ত আজকের এই অনুষ্ঠান।
অধিকাংশ সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখনো আমরা হত্যার শিকার অধিকাংশ সাংবাদিকদের বিচার পাইনি। এটা খুবই দু:খজনক ও জাতির কাছে লজ্জার। আমরা সাংবাদিক হত্যাকে ইস্যু তৈরি করতে চাই না।
প্রবাসীকল্যাণ ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব খন্দকার মো. ইফতেখার হায়দার বলেন, আগামী অভিবাসন দিবসে ভালো কাজ করা রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোকে পুরস্কৃত করবো। আর যারা খারাপ কাজ করছে, তাদের তো ধারাবাহিকভাবে শাস্তির আওতায় আনা হচ্ছে। তিনি দরিদ্রদের বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে আশ্বাস দেন।
সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ার সমাজের বঞ্চিত মানুষদের কথা সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ করার আহ্বান জানান।
মেরিট ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল ও ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ প্রতি বছর পাঁচজন দরিদ্রকে বিদেশে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি বলেন, যারা জনশক্তি প্রেরণের সঙ্গে সম্পৃক্ত তারা যেনো প্রতি বছর অন্তত সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে এ ধরনের উদ্যোগ হাতে নেন।
হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ সিঙ্গাপুরের হুন্দাই কনস্ট্রাকশন কোম্পানিকে রিপনের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ধন্যবাদ জানান।
অনুষ্ঠানে আসাদুজ্জামান সব সাংবাদিকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, আজ আমার জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া। দীর্ঘ কয়েক বছর অভাব-অনটনের মধ্য সময় পার করতে গিয়ে আমরা হাঁপিয়ে উঠেছিলাম। কিন্তু আবার আলোর মুখ দেখতে পাচ্ছি। এর চেয়ে আনন্দের কিছু নাই।
সবশেষে তার হাতে ভিসা, পাসপোর্ট ও টিকেট দেওয়া হয়। বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠনের নেতারা অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, খুলনা থেকে প্রকাশিত দৈনিক অনির্বাণ পত্রিকার সাংবাদিক ডুমুরিয়ার নহর আলী শেখ ২০০০ সালের ২১ এপ্রিল চরমপন্থীদের হামলায় নির্মমভাবে নিহত হন। নহর আলী নিহত হওয়ার পর তার পরিবারে অভাব, অনটন আর দুর্ভোগ নেমে আসে।
নহর আলীর স্ত্রী আসমানী বেগম দুই ছেলে আসাদুজ্জামান রিপন ও মেহেদী হাসান রানা এবং দুই মেয়ে রেহানা পারভীন ও হীরা খাতুনকে নিয়ে চরম অভাবের মধ্যে পরেন। এ সময় বড় ছেলে হিসেবে আসাদুজ্জামান রিপন সংসারের হাল ধরার চেষ্টা করেন।
এ অবস্থায় রিপন সংসারের হাল ধরতে খুলনায় গামছা দিয়ে মুখ ঢেকে রিকশা চালাতেন। এরপর পরিচিতজনের সামনে পড়ার ভয়ে ঢাকায় রিকশা চালানো শুরু করেন।
কিন্তু কোনোভাবেই সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে পারছিলেন না রিপন। ২০১৪ সালে ঢাকায় সমকালের সাংবাদিক হাসান তার রিকশার যাত্রী হন। এক সময় রিপনের সঙ্গে হাসানের পরিচয় হয়। রিপন হাসানকে তার সাংবাদিক পিতার হত্যাকাণ্ড, পরিবারের আর্থিক অনটন এবং তার রিকশা চালানোর কাহিনী খুলে বলেন। এরপর বিষয়টি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়।
এরপর সাংবাদিক মনজুরুল আহসান বুলবুল রিপনের একটি চাকরির ব্যবস্থা করার উদ্যোগ নেন। এরই ধারাবাহিকতায় জনশক্তি প্রেরণকারী প্রতিষ্ঠান মেরিট ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের সিইও হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ তাকে সিঙ্গাপুরে পাঠানোর উদ্যোগ গ্রহণ করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫১৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০১৬
একে/এএসআর