ঢাকা: গ্রাম-বাংলায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা লোকজ ও কারুশিল্প বিকাশের সুযোগ করে দিতে আগামী ১৪ জানুয়ারি থেকে শুরু হতে যাচ্ছে মাসব্যাপী ‘লোক কারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসব-২০১৬’।
ঢাকার অদূরে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন এ মেলার আয়োজন করছে।
লোকজ সংষ্কৃতির অন্য উপাদানের সঙ্গে এবারই প্রথম গ্রামীণ লোকজ সংস্কৃতির অন্যতম মাধ্যম হিসেবে নকশিকাঁথার বিশেষ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হবে।
সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর মঙ্গলবার (১২ জানুয়ারি) সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে একথা জানান।
আসাদুজ্জামান নূর বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, কৃষ্টি ও সংস্কৃতি হাজার বছরের প্রাচীন। আমাদের নিজস্ব লোকজ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে অকৃত্রিমভাবে উপস্থাপন করা এবং দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের লুপ্তপ্রায় লোকজ ঐতিহ্যের অনন্য উপাদান পুনরুদ্ধার ও নতুন প্রজন্মকে তার সঙ্গে পরিচয় করানোর জন্য এ মেলার আয়োজন।
বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের পরিচালক রবীন্দ্র গোপ জানান, মেলায় মোট স্টলের সংখ্যা ১৭২টি। তারমধ্যে কর্মরত কারুশিল্পীদের কারুপণ্য উৎপাদন প্রদর্শনীর স্টল ২৪টি, হস্তশিল্প ৪২টি, পোশাক ৪১টি, স্টেশনারি ও কসমেটিক্স ৩৫টি, খাবার ও চটপটি স্টল-১০টি ও মিষ্টির স্টল ১৮টি।
দেশের পল্লি অঞ্চল থেকে ৪৮ জন কারুশিল্পী নওগাঁ ও মাগুরার শোলাশিল্প, রাজশাহীর শখের হাড়ি, চট্টগ্রামের তালপাতার হাতপাখা, রংপুরের শতরঞ্জি, সোনারগাঁয়ের হাতি ঘোড়া পুতুল ও কাঠের কারুশিল্প, নকশিকাঁথা, বেত ও বাঁশের কারুশিল্প, মুন্সীগঞ্জের শীতল পাটি, কুমিল্লার তামা-কাঁসা পিতলের কারুশিল্প, রাঙামাটির ক্ষুদ্র-নৃ-গোষ্ঠীর কারুপণ্য, কিশোরগঞ্জের টেরাকোটাশিল্প নিয়ে এ মেলায় অংশ নিচ্ছে।
সংস্কৃতিমন্ত্রী জানান, গ্রাম-বাংলায় ছড়িয়ে থাকা অবহেলিত কারুশিল্পী, লোকসঙ্গীত শিল্পীদের তাদের নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রতিভা বিকাশ ও প্রকাশের সুযোগ করে দেওয়াই এ মেলা ও লোকজ উৎসবের উদ্দেশ্য।
‘বাংলাদেশের গৌরবগাথা আমাদের এই নকশিকাঁথা’ শিরোনামে মেলার আকর্ষণ নকশিকাঁথার বিশেষ প্রদর্শনী। এ উপলক্ষে গবেষণামূলক একটি ক্যাটালগ প্রকাশের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, যশোর, জামালপুর এবং সোনারগাঁও অঞ্চলের নকশিকাঁথার প্রথিতযশা ১২ জন কাঁথাশিল্পী প্রদর্শনীতে অংশ নেবেন।
১৪ জানুয়ারি বেলা ১১টায় মেলার উদ্বোধন করবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি বেগম সিমিন হোসেন (রিমি)। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি থাকবেন নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব আক্তারী মমতাজ ও নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক আনিছুর রহমান মিঞা।
আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মেলা চলবে।
মাসব্যাপী এ মেলা ও লোকজ উৎসবের বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালায় থাকবে বাউলগান, পালাগান, কবিগান, ভাওয়াইয়া ও ভাটিয়ালি গান, জারিগান, সারিগান, হাছন রাজার গান, লালন সংগীত, মাইজভান্ডারি গান, মুর্শিদী গান, আলকাপ গান, গাঁয়ে হলুদের গান, শরিয়তী-মারফতি গান।
আরও থাকবে বান্দরবান, কমলগঞ্জের-মণিপুরী, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ছড়া পাঠের আসর, পুঁথি পাঠ, গ্রামীণ খেলা, লাঠি খেলা, ঘুড়ি ওড়ানো, লোকজ জীবন প্রদর্শনী, লোকজ গল্প বলা, পিঠা প্রদর্শনী ইত্যাদি।
কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগম, বারী সিদ্দিকী, ইন্দ্র মোহন রাজবংশী, দীপ্তি রাজবংশী, ফকির আলমগীর, কিরণ চন্দ্র রায়, মধু, রুবি সরকার, ছোট খালেক দেওয়ান, আইনাল হক বাউলসহ প্রায় একশ’ শিল্পী সান্ধ্যকালীন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে লোকসঙ্গীত পরিবেশন করবেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২, ২০১৬
এমআইএইচ/এএ