ব্রাহ্মণবাড়িয়া: ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মাদ্রাসা শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ-ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষে এক শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার জের ধরে রেললাইন উপড়ে ফেলে রেলপথ অবরোধ, রেল স্টেশনে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে তার সহপাঠীরা।
এ সময় বিক্ষুব্ধ মাদ্রাসা ছাত্ররা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে বিভিন্ন স্থানে হামলা ও ভাঙচুর চালায়।
মঙ্গলবার (১২ জানুয়ারি) সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত বিচ্ছিন্নভাবে এসব ঘটনা ঘটে।
এদিকে মাদ্রাসা শিক্ষার্থী হাফেজ মাসুদুর রহমান মাসুদ (২৫) নিহত হওয়ার ঘটনায় বুধবার দেশজুড়ে হরতালের ডাক দেওয়া হয়েছে।
সোমবার সন্ধ্যায় শহরের জেলা পরিষদ মার্কেটের একটি দোকানে জামিয়া ইউনুছিয়া মাদ্রাসার এক ছাত্রের সঙ্গে মোবাইল কেনা নিয়ে কথা কাটাকাটির জের ধরে মোবাইল ব্যবসায়ী-মাদ্রাসা ছাত্র ও ছাত্রলীগের ত্রিমুখী সংঘর্ষের ঘটনায় মাসুদ আহত হন। মঙ্গলবার ভোরে তার মৃত্যু হলে ক্ষুব্ধ হয়ে সকালে রাস্তায় নেমে আসে তার সহপাঠীরা।
তারা শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করে। পরে আরও সংগঠিত হয়ে থানার সামনে পুলিশ লক্ষ্য করে ঢিল ছুঁড়তে থাকে। পরে ছাত্ররা মিছিল করতে করতে শহরের মৌড়াইল রেলগেটে গিয়ে রেললাইন উপড়ে ফেলে ও গাছের গুঁড়ি ফেলে ও আগুন দিয়ে রেলপথ অবরোধ করে।
পরে, বিক্ষুব্ধরা ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেল স্টেশনে হামলা চালায়। এ সময় স্টেশনের টিকেট বিক্রির জন্য ব্যবহৃত কম্পিউটার, সহকারী স্টেশন মাস্টার কক্ষের সিগন্যালিং যন্ত্র, আটটি সিসি টিভি ক্যামেরা, স্টেশন মাস্টারের কক্ষ, টিকিট কাউন্টার, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির বিশ্রামাগার সহ সব কক্ষের আসবাবপত্র ও সরঞ্জাম ভাঙচুর করে। স্টেশন কাউন্টারে থাকা কম্পিউটার, টিকিট, প্লাটফর্মে থাকা যাত্রীদের আসন, বিশ্রামাগারে থাকা সোফা ও রেলের ট্রলিতে আগুন ধরিয়ে দেয় তারা।
এদিকে, মাদ্রাসা ছাত্রদের একটি দল ফকিরাপুলের উত্তরাংশের হালদারপাড়ায় স্থানীয় সংসদ সদস্য উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর কার্যালয় ভাঙচুর করে। তারা কুমারশীল মোড়ের সুরসম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ সঙ্গীতাঙ্গনে ভাঙচুর করে।
এছাড়া ইন্ডাস্ট্রিয়াল স্কুল, প্রশিকা কার্যালয়, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মাহমুদুল হক ভূঁইয়ার কাজীপাড়ার বাসভবন ও ব্যাংক এশিয়ার শাখা অফিস ভাঙচুর করে তারা।
মাদ্রাসা ছাত্ররা কাজীপাড়ায় মাহমুদুল হক ভূঁইয়ার বাসার সামনে থাকা তিনটি মোটরসাইকেল ও একটি প্রাইভেটকার ভাঙচুর করে। এ সময় মাদ্রাসা ছাত্রদের সঙ্গে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মাহমুদুল হক ভূঁইয়ার সমর্থকদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষ থামাতে পুলিশ কয়েক রাউন্ড টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট ছোড়ে।
জেলা কওমী ছাত্র ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক খালেদ মোশাররফ অভিযোগ করে বলেন, ‘পুলিশ মাদ্রাসায় ঢুকে মাসুদুর রহমানকে হত্যা করেছে। এ জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও সদর থানার ওসির অপসারণ দাবি করেন তিনি। ’
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সহকারী পুলিশ সুপার শফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। মাদ্রাসার শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনার চেষ্টা চলছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২, ২০১৬
এমজেড
** ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিজিবি মোতায়েন
** ঢাকার সঙ্গে চট্টগ্রাম-সিলেটের রেল যোগাযোগ বন্ধ
** ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সংঘর্ষে নিহত ১, বিজিবি মোতায়েন
** ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সংঘর্ষে শিক্ষার্থী নিহত
** ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সংঘর্ষ ৪ ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে