ঢাকা: বিদেশে যাওয়ার পর নির্দিষ্ট মেয়াদের আগে দেশে ফেরত আসতে চাইলে, তিন মাসের সমপরিমাণ অর্থ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে নারী শ্রমিকদের। একইসঙ্গে রিক্রুটিং এজেন্সির বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনলে আইনগত ব্যবস্থাও নেওয়া হবে তাদের বিরুদ্ধে।
এসব শর্তাবলী সম্পর্কে অবহিত হয়েই সৌদি আরবে গমনেচ্ছুক নারী কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিস (বায়রা)। দু’দেশের সরকারের চুক্তিতে এসব শর্তের উল্লেখ রয়েছে।
বায়রা বলছে, সম্প্রতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে, বিদেশ যাওয়ার অল্প সময়ের মধ্যে বা চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই অনেকে দেশে ফেরত আসতে চাইছেন। ফেরত এসে রিক্রুটিং এজেন্সির বিরুদ্ধে আইন প্রণয়নকারী সংস্থার কাছে অভিযোগও দায়ের করছেন তারা। এর মধ্যে অনেকগুলো অভিযোগ তদন্তে মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। এ ধরনের অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হলে অভিযোগকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বায়রা সভাপতি আবুল বাশার বাংলানিউজকে বলেন, বিনা খরচেই নারী শ্রমিকরা বিদেশে যান। নিয়োগকর্তাই তার সব খরচ বহন করেন। কোনো নারী শ্রমিক যদি সেখানে যাওয়ার পরই দেশে ফেরত আসতে চান, তাহলে ওই নিয়োগকর্তা লোকসানে পড়েন। এ কারণেই সংশ্লিষ্ট কর্মীকে তিন মাসের বেতন সমপরিমান অর্থ ক্ষতিপূরণ হিসেবে দেওয়ার বিধান চুক্তিতে রাখা হয়। প্রত্যেক কর্মীকে এ শর্ত মানতে হবে।
তবে যৌন নিপীড়নের মতো অভিযোগ থাকলে তা বাংলাদেশ দূতাবাসে জানানোর প্রেক্ষিতে, দূতাবাসের মাধ্যমে দেশে আসা এমনকি নিয়োগকর্তার কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ের সুযোগও রয়েছে বলে জানান বায়রা সভাপতি।
বায়রা জানায়, বিদেশে যাওয়ার পরপরই ফেরত আসলে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয় ও সৌদি বাজারে বাংলাদেশের কর্মীদের প্রতি নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। তাই সবকিছু সঠিকভাবে জেনে, বিবেচনা করেই তবে দেশটিতে যাওয়ার জন্য আগ্রহীদের প্রতি অনুরোধ করা হচ্ছে। নিয়োগকর্তার শর্তাবলী পড়ে ও বুঝে নারী গৃহকর্মীদের সই করা আবশ্যক।
সৌদি আরবে গৃহকর্মী পাঠাতে ২০১৫ সালে দেশটির সঙ্গে চুক্তি সই করে বাংলাদেশ। এর আওতায়, গত বছরের রোজার ঈদের আগে দেশটিতে ৫০ হাজার গৃহকর্মী পাঠানোর কথা। কিন্তু ওই সময়ের মধ্যে মাত্র পাঁচ হাজার নারীকর্মী পাঠাতে সক্ষম হয় বাংলাদেশ। তবে এখন পর্যন্ত দেশটিতে থেকে ২০ হাজারের মতো নারীশ্রমিক পাঠানো হয়েছে।
এরই মধ্যে বেশকিছু নারী সৌদি যাওয়ার পরপরই দেশে ফেরত এসেছেন। তাদের উপর যৌন নির্যাতনের অভিযোগ আনেন তারা। তবে এসব অভিযোগের বেশিরভাগই মিথ্যা বলে দাবি করেছেন সৌদিতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস।
এ বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান সচিব খন্দকার মো. ইফতেখার হায়দার চৌধুরী বলেন, কম বেতন আর নির্যাতিত হওয়ার ভয়ে সৌদি আরবে যেতে নারী শ্রমিকদের আগ্রহ কম। বিষয়টি দেশটির কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। এর প্রেক্ষিতে তারা নারী শ্রমিকদের বেতন বাড়ানোয় সম্মত হয়েছেন। আশা করছি, শিগগিরই নারী কর্মীদের বেতন বাড়াবে সৌদি সরকার।
‘এছাড়া অনিরাপত্তাভীতি কাটাতে দেশটিতে কর্মরত নারীকর্মীদের পুরুষ স্বজনদের বিভিন্ন কাজে নিয়োগ দিতে রাজি হয়েছে সৌদি আরব। এর ফলে নারীকর্মীরা কিছুটা হলেও নিরাপত্তার বিষয়ে নিশ্চিন্ত হবেন। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৬২৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২, ২০১৫
জেপি/এসএস