ঢাকা: ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় নির্বাচন ঠেকানোর নামে এবং তা না পেরে ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের প্রথম বর্ষপূর্তিকে কেন্দ্র করে বিএনপি-জামায়াত জোট যে সহিংসতা ও তাণ্ডব চালিয়েছে তার সঙ্গে শুধুমাত্র একাত্তর সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এবং তাদের সহযোগী রাজাকার আলবদরদের তাণ্ডবের সঙ্গেই তুলনা চলে বলে উল্লেখ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মঙ্গলবার (১২ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
টানা দ্বিতীয়বারের মত ক্ষমতারোহনের দ্বিতীয় বার্ষিকী উপলক্ষ্যে দেয়া ভাষণে জনগণকে ইংরেজি নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘সবাইকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা। আজ ১২ জানুয়ারি। ২০১৪ সালের এই দিনে আপনাদের সমর্থনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। আমি আপনাদের দো’য়ায় প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ গ্রহণ করি। ’
বক্তব্যের শুরুতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ, জেলখানায় নিহত চার জাতীয় নেতা, মুক্তিযুদ্ধে নিহত ৩০ লাখ শহীদের পাশাপাশি বিএনপি জামায়াতের তাণ্ডবে নিহতদের স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে বিএনপি-জামাত জোট সারাদেশে যে ঘৃণ্য ও পৈশাচিক সন্ত্রাস চালায় তা কোনদিন বিস্মৃত হওয়ার নয়। তাদের এই নৃশংসতা ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হায়েনা ও তাদের দোসরদের নির্মমতার সাথেই কেবল তুলনা করা যায়। জামাত-বিএনপি জোটের সহিংসতায় যাঁরা জীবন দিয়েছেন তাঁদেরকে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি। তাঁদের পরিবারের সদস্যদের জানাচ্ছি গভীর সমবেদনা। আহতদের জন্য আন্তরিক সহানুভূতি।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বিএনপি-জামাত জোটের সন্ত্রাস, অগ্নিসংযোগ ও পেট্রোল বোমার শিকার হয়ে নিরীহ বাসড্রাইভার, বাস-টেম্পো-সিএনজি যাত্রী, প্রিজাইডিং অফিসার, পুলিশ-বিজিবি-আনসার, সেনাবাহিনীর সদস্য, এমনকি স্কুলের শিক্ষক ও শিশুও নিহত হয়েছেন। অনেকে আগুনে দগ্ধ হয়েছেন, জীবনের তরে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য হয়েছেন।
সন্ত্রাস বোমাবাজি উপেক্ষা করে সেদিন আপনারা গণতন্ত্রকে বিজয়ী করেছিলেন। কিন্তু গণতন্ত্র ও উন্নয়ন বিএনপি-জামাত নেতৃত্ব সহ্য করতে পারে না। মানুষ শান্তিতে থাকবে, হাসি মুখে জীবনযাপন করবে তা ওদের সহ্য হয় না।
সারাবিশ্বে বাংলাদেশ যখন উন্নয়নের রোলমডেল, জাতিসংঘসহ বিভিন্ন সংস্থা যখন বাংলাদেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, সুশাসন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন, ডিজিটাইজেশন, এমডিজির লক্ষ্যসমূহ অর্জন, জলবায়ুর প্রতিকূল প্রভাব মোকাবেলাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি ও পুরস্কারে ভূষিত করছে, তখনই ২০১৫ সালের ৪ জানুয়ারি থেকে বিএনপি জামাত আবারও দেশে সন্ত্রাস, সহিংসতা শুরু করে।
এ সময় বিএনপি-জামায়াতের তাণ্ডবের বিভিন্ন পরিসংখ্যান তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা এবং বিএনপি নেত্রী আদালত হাজিরায় অনুপস্থিত থাকার উদ্দেশ্যে বিএনপি-জামাত অনির্দিষ্টকালের অবরোধ শুরু করে সারাদেশে তাণ্ডব ও হত্যাযজ্ঞ শুরু করে। পেট্রোলবোমায় ২৩১ জন নিরীহ মানুষ নিহত এবং ১ হাজার ১৮০ জন আহত হয়। ২ হাজার ৯০৩টি গাড়ি, ১৮টি রেল গাড়ি ও ৮টি লঞ্চে আগুন দেয়া হয়। পরিকল্পিতভাবে টার্গেট করে ৭০টি সরকারি অফিস ও স্থাপনা ভাঙচুর এবং ৬টি ভূমি অফিস পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
এসবের জন্য প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে দায়ী করে বলেন, জনগণকে ভোগান্তিতে রেখে, অমানবিক কষ্ট দিয়ে তাদের জীবন বিপন্ন করে বিএনপি নেত্রী নাটক করে ৬৮ জনকে নিয়ে আরাম আয়েশে ৯২ দিন অফিসে থাকেন। হত্যাযজ্ঞ ও তাণ্ডবের হুকুম দেন। তার এই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড জনসমর্থন পায়নি। ব্যর্থতার বোঝা নিয়ে আদালতে হাজিরা দিয়ে নাকে খত দিয়ে বাড়ি ফিরে যান।
এ সময় তিনি বিএনপি জামাতের কর্মসূচিতে সমর্থন না দেয়ার জন্য জনগণকে ধন্যবাদ জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনাদের আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই বিএনপি-জামাতের অনৈতিক অবরোধ কর্মসূচির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে প্রতিবাদ করায়।
এছাড়া এসব ঘটনায় জড়িতরা পার পাবে না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অগ্নি-সন্ত্রাসীদের আটক করে বিচারের আওতায় আনা হয়েছে। তাদের বিচার কাজ চলছে। যারা আপনাদের আপনজনকে কেড়ে নিয়েছে, জানমালের ক্ষতিসাধন করেছে সেই অপরাধীরা অবশ্যই শাস্তি পাবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২, ২০১৬
আরআই
** সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় জাতির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ