ঢাকা: মাদকাসক্তদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা ও মাদকমুক্ত দেশ গড়ার অংশ হিসেবে আসক্তদের ফ্রি কাউন্সিলিং ও মাদকবিরোধী প্রচারণা চালাচ্ছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর।
ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলায় স্থাপিত একটি প্যাভিলিয়নে এসব কাজ চালিয়ে যাচ্ছে অধিদফতর।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের প্যাভিলিয়নটিতে প্রবেশের পরই বামপাশে সেলিব্রেটিদের মাদকবিরোধী বক্তব্য দেওয়ার জন্য একটি জায়গা করা হয়েছে। কোনো সেলিব্রেটি এলে সেখানে দাঁড়িয়ে মাদকের নানা কুফল সম্পর্কে বক্তব্য রেখে থাকেন।
এরপর বামদিকের সোফায় প্রতিদিন দুই জন আইডল বসেন, যারা ইতোমধ্যে মাদকের ভয়বহ অবস্থা থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছেন।
বৃহস্পতিবার (১৪ জানুয়ারি) বিকেলে সেখানে ছিলেন আইডল অ্যালবার্ট ডেনিশ মোল্লা ও আহসানুল্লাহ শুভ।
এরপরের স্থানে প্যাভিলিয়নের ভেতরে (বাম পাশে) দেশে বেশি ব্যবহৃত ইয়াবা, গাঁজা, হেরোইন ও ফেনসিডিল- এ চার ধরনের মাদকের নানা কুফল ও ভয়াবহতা সম্পর্কে একটি বোর্ডে বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
এছাড়া প্যাভিলিয়নে ঝুলছে ‘আমি মাদকমুক্ত, আপনিও তো??’ লেখা কয়েকটি প্লাকার্ড।
প্যাভিলিয়নের মাঝের অংশে রয়েছে মাদকাসক্তদের কাউন্সিলিং করার জন্য বিশেষজ্ঞের চেম্বার। যারা মাদক থেকে বের হয়ে আসতে চান তাদেরকে বিনা মূল্যে কাউন্সিলিং করা হয়।
বৃহস্পতিবার বিকেলে এক মাদকাসক্ত যুবককে কাউন্সিলিং করছিলেন বিশেষজ্ঞ ধর্মেন্দ্র নাথ রায়।
প্যাভিলিয়নের এক পাশে একটি স্ক্রিনে দেখানো হচ্ছে মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের মাদকবিরোধী বেশ কিছু বক্তব্য। এছাড়া প্যাভিলিয়নের একপাশে টিভি স্ক্রিনে মাদকবিরোধী চলচ্চিত্র ‘স্বর্গ থেকে নরক’ দেখানো হচ্ছিল।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের প্যাভিলিয়নে প্রবেশের ডান দিকে একটি বোর্ডে রয়েছে প্রতিদিনের জন্য একটি প্রশ্ন। বৃহস্পতিবারের প্রশ্নটি ছিল- আপনার পরিবারের কেউ মাদকাসক্ত হলে আপনি কি করবেন?
এ প্রশ্ন সম্পর্কে মাদকাসক্ত কোনো ব্যক্তির পরিবারের সদস্যরা তাদের নানা মতামত এ বোর্ডে লিখে যাচ্ছেন। স্টলে স্বল্প মূল্যে বিক্রি হচ্ছে মাদকবিরোধী বেশকিছু বইও।
স্টলে আসা দর্শনার্থীদের মধ্যে তরুণদের উপস্থিত বেশ লক্ষ্যণীয়। অন্যান্য বয়সী মানুষও সেখানে তথ্য জানতে ভিড় করছেন।
প্যাভিলিয়নে দর্শনার্থীদের মাদকবিরোধী বিভিন্ন তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করছেন নূর মোহাম্মদ হৃদয়, ফারহানা মুন, সানোয়ার হোসেন নিপুণ, ইমতিয়াজ আহমেদসহ আরো বেশ কয়েকজন তরুণ-তরুণী।
মাদকাসক্তি থেকে ফিরে আসা ডেনিশ মোল্লা বাংলানিউজকে বলেন, যখন আমি মাদক গ্রহণ করতাম, তখন সময়টা ছিল এক ভয়াবহ। অনেক চেষ্টা করেছি, কিন্তু মাদক ছাড়তে পারছিলাম না। পরে শুনলাম, মাদক ছাড়ার জন্য চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। এরপর পরিবারের সহায়তায় সাভারে মাদকাসক্তদের চিকিৎসা কেন্দ্র বিওয়াইএফসিএতে যাই। সেখানে চার মাস চিকিৎসা শেষে সুস্থ হই।
আহসানুল্লাহ শুভ বলেন, আমি ২০১০ সালে প্রথম মাদক নেওয়া শুরু করি। প্রথম দিকে কোনো উপলক্ষে মাদক গ্রহণ করতাম। আস্তে আস্তে এক সময় এতে আসক্ত হয়ে যাই। এরপর পড়াশোনা, পরিবার থেকে দূরে যেতে শুরু করলাম। এক সময় আমার পরিবার আমার সম্পর্কে জানতে পারে। তারপর আমাকে তারা সাভারে বিওয়াইএফসি কেন্দ্রে নিয়ে যান। সেখানে চার মাস থাকি। সে সময় প্রতিদিন আমাকে কাউন্সিলিং করানো হতো। এখন আমি গত এক বছর ধরে মাদকমুক্ত জীবন-যাপন করছি।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক বজলুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাস হল মাদকবিরোধী অভিযান ও প্রচারণার মাস। এর অংশ হিসেবেই মেলায় স্টল দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, মানুষকে সচেতন করার লক্ষ্যে স্টলে মাদকের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরা হচ্ছে। যারা ইতোমধ্যে মাদকে আসক্ত তাদেরকে বিনামূল্য কাউন্সিলিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
সরকার যেসব বিষয় নিয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে এর মধ্যে মাদকমুক্ত দেশ গড়ে তোলা অন্যতম একটি বিষয়। এভাবে গণসচেতনতার মাধ্যমে মানুষকে মাদক থেকে দূরে রাখা অনেক সহজ হবে বলে তিনি মনে করেন।
বাংলাদেশ সময়: ২০২০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০১৬
টিএইচ/এএসআর
** বাণিজ্য মেলায় এসকেবি স্টিলে ১০ শতাংশ ছাড়
** বাণিজ্যমেলায় ইফাদের ছয় প্যাকেজ