ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

শীতের সকালে দম ফেলবার ফুরসত নেই

এম.আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৩৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০১৬
শীতের সকালে দম ফেলবার ফুরসত নেই ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ময়মনসিংহ: বাজার এখন নানারকম শীতের সবজিতে ভরপুর। ‘সবজি ভাণ্ডার’ হিসেবে পরিচিত ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্র নদের চরাঞ্চল থেকে প্রতিদিন বাজারে আসছে নানা পদের সবজি।

বিক্রি হচ্ছে দেদার। ফুলকপি, বাঁধাকপি, পেঁয়াজের পাতা, শিম, লাউ, করল্লা, বেগুনসহ শীতকালীন নানা সবজির আবাদ ভাগ্য খুলেছে চরাঞ্চলের দরিদ্র কৃষকের।

পৌষের সকালের কুয়াশাভেজা বাতাসে নগরীর সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার, মেছুয়া বাজারে শীতের সবজি নিয়ে কর্মব্যস্ত স্থানীয় ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীরা। মঙ্গলবার (১২ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ৮টায় এ বাজার থেকেই রকমারি শীতের সবজি কিনে নিজেদের রিকশা ভ্যানে থাকা খাঁচা-টুকরিতে সাজাতে দেখা গেলো প্রায় শতাধিক ব্যবসায়ীকে। নগরীর এ-এলাকা ওই এলাকা ঘুরে দিনমান বিকোবেন এ সবজি।

ইদানিং নগরীতে ভ্যানে করে সবজি বিক্রি বেড়েছে। নগরীর গাঙ্গিনারপাড় বারী প্লাজার সামনে থেকে স্টেশন রোডস্থ পালিকা শপিং সেন্টার পর্যন্ত সড়কের দু’পাশে সারি সারি রিকশা ভ্যানে সবজি তুলতে ব্যস্ত সবজির ফেরিওয়ালারা। দম ফেলারও সময় নেই তাদের।

ব্যস্ত ভাসমান ব্যবসায়ীদেরই একজন স্বপন। বয়স ত্রিশ। বাড়ি সদর উপজেলার শম্ভুগঞ্জের চর গোবাইদ্যা এলাকায়। প্রায় ১ হাজার ২’শ টাকা খরচায় টমেটো, পেঁয়াজের পাতা, বেগুন, গাজরসহ কয়েক পদের শীতের সবজি কিনেছেন। স্বল্প পুঁজির এ ব্যবসায় লাভ হবে কয়েক’শ টাকা। আলাপ গড়াতেই বললেন, ‘দেরি হইয়্যা গেছে ভাই, অহন পাড়ায় পাড়ায় গিয়া সবজি বেচুম। ’

সকালের সোনা রাঙা রোদে চাঙা হয়ে সতেজ মনে সবজি বেচাবিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। শীত মৌসুমে নানা প্রকারের সবজির মধ্যে ধনিয়া পাতা একটি। এখন অনেকটাই সস্তায় বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। পুষ্টিকর এ সবজির রয়েছে ওষুধি গুণও।

লাউ শাক পছন্দ করেন না এমন মানুষ মেলা ভার। লাউ শাক ভাজি সুস্বাদু ও মজাদার। বাজার মূল্যেই টাটকা এ লাউ শাক বাসা বাড়িতে বসেই কিনতে পারছেন নারীরা। কোনো কোনো সময় বাজারমূল্যের চেয়ে দুয়েক টাকা বেশিতেও বিক্রি করেন টাটকা সবজি।

শীতের সবজিতে চাঙা হয়ে উঠেছে বাজার। বস্তায় ভরা সবজি ইজিবাইক কিংবা রিকশা ভ্যানে তুলে দিতে রয়েছেন শ্রমিক। ভোরের আলো ফোটার আগেই তারা চলে আসেন বাজারে। তাদের শ্রম-ঘামেই ভ্যান-রিকশায় এসব পণ্য পৌঁছে।

প্রতিদিন ঘণ্টা তিনেক শ্রম বিকিয়ে পান সাকুল্যে এক থেকে দেড়’শ টাকা। তবুও ওদের যেন কষ্ট নেই। মুখে লেগে থাকে এক ফালি হাসি।

বাজারে কালাই শাকের সরবরাহ বেশ। কাক ভোর থেকে খাঁচায় খাঁচায় টাটকা কালাই শাক তুলে সদর উপজেলার দক্ষিণ চরকালিবাড়ি এলাকা থেকে বাজারে নিয়ে এসেছেন গৃহস্থ আলামিন (২৮)।  

প্রায় ১০ শতাংশ জমিতে কালাই শাক চাষ করতে সার, কীটনাশকসহ সাকুল্যে খরচা হয়েছে ১০ হাজার টাকার মতো। এ শীতের ফসল তিনি বিক্রি করছেন ১০ টাকা কেজি। কাঙ্ক্ষিত মূল্য পেয়ে তিনি খুশি। কষ্টের ফলনে আর্থিক দীনতা দূর করার স্বপ্ন দেখেন এ গৃহস্থ।

নানা রকম সবজির বেচাকেনা চলছে বাজারে। এর মধ্যে পাকা টমেটো একটি। পুরুষ বিক্রেতাদের মতো নারীরাও ব্যস্ত সবজি বেচাবিক্রিতে। পাইকারি দরে বাজার থেকে সাড়ে ৭ টাকা দরে টমেটো কিনেছেন সদর উপজেলার বিদ্যাগঞ্জ এলাকার পঞ্চাশোর্ধ্ব শাহিদা। চাদর মুড়িয়ে দাঁড়িপাল্লায় মেপে বিক্রি করছেন এ সবজি।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৩০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০১৬
জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।